Monday, 8 November 2021

নই তো কবি— তাই বলে কি আসবে না মোর ছন্দ??

 

Wadud Khan

নই তো লেখক, তাই বলে কি—

মনের কথা লিখব না?

আমার মনের দহন-ব্যথা

ইচ্ছেমতো আঁকব না? 


নই তো কবি, তাই বলে কি—

আসবে না মোর ছন্দ?

সরবে না কি তৈরি হওয়া—

মনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব?


নই তো ধনী, তাই বলে কি—

স্বপ্ন আমার থাকবে না?

জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি—

পাব কেবল সান্ত্বনা?


আতেল আমি, তবুও লিখি—

বেতাল মনের কবিতা। 

নিজের সাধে নিজেই উড়ি—

ভাবুক লোকে যা খুশি তা।


লেখা— ওয়াদুদ খান 

Sunday, 27 January 2019

অহন আমি রিশকা চালাই | ছোটোগল্প


"সওদি থাইকতে লাক লাক ট্যাকা কামাইছি আর অহন..."

মোবাইলের উপর থেকে চোখ ও আঙুল সরাই আমি। ফেসবুক থেকে মন ও মুখ ফিরিয়ে লোকটির কথায় মন দিই।

জিগ্যেস করি আমি, "কী বললেন?" 
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল লোকটি। বলতে থাকল, "সবই কপাল, সবই ভাইগ্য! সওদি থাইকতে বারোশ রিয়াল বেতন অইছিল আমার। আর অহন আমি রিশকা চালাই।" 

ব্যস্ত রাস্তায় রিকশা এগিয়ে চলছে। ভোরে দূষণের শহরে বইছে একটু স্বস্তির বাতাস। আমি বলি, "কিন্ত কেন? রিকশা চালান কেন?" 

লোকটির কপাল বেয়ে ঘাম চুইয়ে পড়ছে। বয়স তিরিশ নাকি চল্লিশ ঠাহর করা মুশকিল। বলতে থাকল রিকশাঅলা, "সবই পেরেমের লাইগা। বড্ড ভালাবাসছিলাম মাইয়াডারে..." 

আমি কৌতূহলী হই। মোবাইলটা পকেটে পুরি। গল্পটি শুনতে মগ্ন হই। 

"মাইয়াডার বয়স তহন ষোল্ল কিংবা সতারো। ভালাবাইসা বিয়া করছিলাম। বিয়া কইরাও ভালাবাসছিলাম। পাগলের মতন ভালাবাসতাম। বউয়ের আসি দেকলে অন্তরডা জুরাইয়া যাইতো।"
"তারপর?", জিগ্যেস করি আমি। 

" সউদি এক দোকানের ক্যাশিয়ার অইছিলাম। বারোশ রিয়াল বেতন। মা আমার অসুস্ত আছিল। তাই ব্যাক টাকা পাঠাইতাম বউয়ের একাউন্টে..." 

কেন জানি দীর্ঘশ্বাস বেরোয় আমার। বলে উঠি, "ওহ!" 

লোকটির চোখ তখন ছলছল করছে। "একদিন সর্বস্ব লইয়া পালাইলো হারামজাদি। এক পোলার আত ধইরা আমার ব্যাক টাকা পয়সা লইয়া পলাইয়া গেল। তারপর অনেক ইতিহাস অইয়া গেল। আর অহন? হুম, অহন আমি রিশকা চালাই..." 

গল্প ফুরোলো কিনা জানি না। তবে আমার রাস্তা ফুরোলো। ভাড়া দিতে গিয়ে ভালো করে তাকালাম লোকটির ঘর্মাক্ত মুখাবয়বের দিকে। বউ হারানোর বেদন লোকটির বয়স মনে হয় বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকটা৷ 

লোকটি ভাড়া নিয়ে রিকশা চালিয়ে সামনে এগোতে থাকে। আমি লোকটির প্যাডেল মারা দেখতে থাকি। কত হাজার জনের কত হাজার কাহিনি লেখা আছে এইসব প্যাডেলে। 

ওয়াদুদ খান 
২৬ জানুয়ারি, ২০১৯ 
গুলিস্তান, ঢাকা

Sunday, 11 November 2018

দেশের মাশরাফি; দশের মাশরাফি; দলের মাশরাফি


বর্তমানে টক অভ দ্যা কান্ট্রি হচ্ছে আওয়ামীলীগের টিকেটে জননন্দিত ক্রিকেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করা। বেশ কয়েক মাস আগে আহম মোস্তফা কামাল এমন একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন- আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন মাশরাফি এবং সাকিব আল হাসান উভয়েই। এই খবর প্রচার হবার পর থেকেই অনলাইন দুনিয়ায় মাশরাফি ও সাকিবকে ঘিরে প্রচুর ট্রল হতে থাকে। মাশরাফি নীরব থাকায় ট্রলের শিকার হন কম। কিন্তু সাকিবের ব্যক্তিগত কিছু আচরণের কারণে অনেক হ্যাটার্স আগেই তৈরি হয়েছিল। তাই ট্রলের শিকার বেশি হন। 

যারা ক্রিকেট খেলা বুঝেন, নিয়মিত খেলা দেখেন, কিংবা যারা খেলা দেখেন না, শুধু খেলার খবর রাখেন, অথবা যারা খেলা বুঝেনও না; দেখেনও না; শুধু মাশরাফির নাম জানেন- তারাও নিঃশর্তে, নিঃস্বার্থে ভালোবাসেন মাশরাফিকে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার নিঃসন্দেহে ওই মাশরাফিই। আকরাম, বুলবুল, নান্নু, দুর্জয়, বাশার, পাইলট, আশরাফুলের হাত ধরে এদেশের ক্রিকেট যে এগোয়নি- তা কিন্তু নয়। তবে ক্রিকেটে ভালো যা কিছু অর্জনের গর্জন আমরা করতে পারি তা কিন্তু এই লিজেন্ড ক্যাপটেন মাশরাফির হাত ধরেই। তাই, মাশরাফি যখন ইনজুরিতে পড়ে যায়, ইনজুরিতে পড়ে যাই আমরা মাশরাফি ভক্তরাও।  

মাশরাফির ভক্ত এদেশের আপামর জনসাধারণ। এমনকি যে লোকটি আজ সারাটাদিন রিকশা চালিয়ে কুড়েঘরে ফিরল সেও। আওয়ামীলীগ বা জাতীয় পার্টির শুধু নয়; বিএনপি কিংবা জামাতের প্রচুর কট্টর সমর্থক রয়েছে যারা সন্দেহাতীতভাবে ব্যক্তি মাশরাফিকে ভালোবাসে। কাজেই একটি দলের হয়ে মনোনয়ন নেওয়াতে আওয়ামীবিরোধীদের মনের রক্তক্ষরণ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। অনলাইন দুনিয়ায় প্রচারিত ভাষ্য অনুযায়ী- মাশরাফির প্রতি সাধারণের ভালোবাসার নদীতে ভাটা পড়বে। পড়তেও পারে। অন্য সবকিছুর মতো ভালোবাসাও একালে আপেক্ষিক। অনেকের কাছে গাণিতিক ও স্বার্থকেন্দ্রিক। 
মাশরাফি কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করবে, সেটি হয়তো তার ভক্তকুল মাথায় আনতে পারেনি।

মাশরাফি চাইলে হয়তো আরও কিছুদিন রাজনীতি থেকে দূরে থেকে সাধারণের অসাধারণ ভালোবাসার জলে সাঁতার কাটতে পারতেন। তাতে মাশরাফির লাভ হলেও; দেশের কী লাভ হতো? আমার এই কথার সাথে বিজ্ঞমহল হয়তো দ্বিমত পোষণ করবেন। করতেই পারেন। তবে আমি ভেবেই বলছি- মাশরাফির মতো ক্লিন ইমেজের সৎ মানূষ রাজনীতিতে নেই বলেই আজ রাজনীতির পুরো আকাশ কলুষিত হয়ে গেছে।  

অনেকেই বলছেন, মাশরাফি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ না করে বরং নিজেই একটা দল গঠন করতে পারতেন। এই মুহূর্তে জননেত্রী হাসিনা কিংবা দেশনেত্রী খালেদার তুলনায় মাশরাফির জনপ্রিয়তা বেশি। সেই হিসেবে মাশরাফির নেতৃত্বে নতুন দল গঠন করে তিনশ আসনে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিলে পাকিস্তানের ইমরান খানের মতো মাশরাফিও প্রধানমন্ত্রী হয়ে এক নতুন দিনের সূচনা করতে সক্ষম হতো। কিন্তু আমার মতে, মাশরাফির কাছে এত বেশি আশা করাটা দূরাশা মনে হয়। যে যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক না কেন- আমি মাশরাফির বর্তমান সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। মাশরাফির মতো ক্লিন ইমেজের মানূষগুলো যতবেশি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবে তত বেশি এদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। 

তবে অন্য দশজনের মতো আমিও জানতে চাই- বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতে থাকা অন্য কোনো খেলোয়াড় বিএনপি, জামাত কিংবা জাতীয় পাটির্র মনোনয়ন প্রত্যাশী হলে তাঁকে সুযোগ দেয়া হবে কিনা। 

ওয়াদুদ খান
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ 
সদরপুর সরকারি কলেজ  
=============================
  


Thursday, 1 November 2018

কেন আমরা পদোন্নতি চাই?


আজ ৩১ অক্টোবর, ২০১৮- শিক্ষা ক্যাডারের ইতিহাসে একটি বিশেষ দিন। কারও কারও জন্য দিনটি প্রাপ্তির, স্মরনীয় ও আশীর্বাদের। কারও কারও জন্য দিনটি হতাশা ও অপ্রাপ্তির। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর শিক্ষা ক্যাডারের সকল টায়ারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। অধ্যাপক পদে ৪০৯ জন, সহযোগী অধ্যাপক পদে ৫৭৪ জন ও সহকারী অধ্যাপক পদে ৬৩৪ জনকে পদোন্নতি দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য বর্তমান সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ড. নূরুল ইসলাম নাহিদ এম.পি ও শিক্ষা সচিব জনাব সোহরাব হোসাইনের অবদান শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাবৃন্দ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ রাখবে। আশাকরি, সামনের দিনগুলোতে এই পদোন্নতির গতি আরও বাড়বে।
আমি এবং আমার মতো আরও অনেকেই পদোন্নতির সকল ‘শর্ত ও যোগ্যতা’ পূরণপূর্বক পদোন্নতির প্রত্যাশী ছিলাম। গত কয়েকটি মাসের প্রতিটি দিবস ও রজনী কাটিয়েছি উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠায়। কারণ, চাকরি জীবনের প্রথম পদোন্নতি নানাদিক থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার মতো পদোন্নতি যোগ্য কিন্তু বছর শেষে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তার সংখ্যা ৫০০-এর কম হবে না। আমরা ৩১-তম বিসিএসে ‘প্রথম পছন্দ’ দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাষক পদে যোগদান করেছিলাম। ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ সালে আমাদের চাকরির ৫ বছর পূর্তি হয়। সেই হিসেবে আজকে আমাদের চাকরি বয়স প্রায় ৫ বছর ১০ মাস। আমাদের সাথে যোগদানকৃত অন্যান্য ক্যাডেরের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশেষ করে প্রশাসন, পুলিশ, কর ক্যাডার কর্মকর্তাবৃন্দ, ৫ বছর পূর্তিতে প্রায় ৯ মাস আগে ৳-৩৫৫০০/- মূল বেতনে পদোন্নতি পেয়ে ৬ষ্ঠ গ্রেডে উন্নীত হয়েছে। একই সাথে যোগদান করেও শুধু ভিন্ন ক্যাডার হওয়ার কারণে তাদের সাথে আমাদের মূল বেতনের পার্থক্য ৳-৫৯৯০/- এবং বাড়ি ভাড়াসহ এই পার্থক্যের মোট পরিমাণ কমপক্ষে ৳-৮৩৮৬/-। গত ১০ মাসের অধিককাল ধরে তাঁদের থেকে এই পরিমাণ টাকা আমরা কম পাচ্ছি। চক্রবৃদ্ধি বেতন বৃদ্ধির ফলে এই ব্যবধান বছরেরে পর বছর ধরে বাড়তেই থাকবে।
পূর্বে চাকরির ৪ বছর ও ১০ বছর পূর্তিতে সিলেকশন গ্রেড থাকার কল্যাণে একজন কর্মকর্তা ততটা বৈষম্যের শিকার হতো না। ধরা যাক, দুজন কর্মকর্তা একই সাথে ৪ বছর পূর্তিতে সিলেকশন গ্রেড পেল। তারপর প্রথমজন ৫ বছর পূর্তিতে পদোন্নতি পেয়ে বেশি বেতন পেতে থাকল। অন্যজন ৮ বছর পূর্তিতে পদোন্নতি পেল। দ্বিতীয়জন ৩ বছর কম বেতন পেল। কিন্তু ১০ বছর পূর্তিতে সিলেকশন গ্রেডের কল্যাণে আবারও ওই দুজন কর্মকর্তা একই গ্রেডে বেতন পেয়ে সমতায় ফিরতে পারত। ৮ম পে স্কেল ঘোষণার পর আর পিছিয়ে পড়া কর্মকর্তাবৃন্দ সমতায় ফিরতে পারবে না।
আজকের পদোন্নতিতে ৩১-তম বিসিএসের ৬৫ জন পদোন্নতি পেল। তারা সৌভাগ্যবান। তাদের জন্য রইল অন্তরের গভীর থেকে অভিনন্দন ও শুভকামনা। অন্য ক্যাডারের থেকে বঞ্চিত হয়েছি আরও মাস দশেক আগেই। আজ নিজের ক্যাডারেও বিষয় ভিন্নতার কারণে বৈষম্যের শিকার হলাম আমরা। একই সাথে যোগদান করেও পদোন্নতি প্রাপ্ত ৬৫ জনের তুলনায় পদোন্নতি বঞ্চিত প্রায় তিন শতাধিক কর্মকর্তা কমপক্ষে ৳-৮০০০/- বেতন কম পাবে। বছরের পর বছর সেই পার্থক্য কেবল বাড়তেই থাকবে।
আমরা ৪ বছরের মধ্যে বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি, বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ শেষ করে চাকরি স্থায়ীকরণ করেছি। ৫ বছরের মধ্যে সিনিয়রস্কেল পরীক্ষায় পাস করে পদোন্নতি যোগ্য হয়েছি। সকল শর্ত পূরণ করেও আজ আমরা সকল দিক থেকে বঞ্চিত। একই সাথে যোগদান করে আমদের বন্ধুরা আজ আমাদের থেকে ৩ গ্রেড উপরে অবস্থান করছে। আমরা পদোন্নতি বঞ্চিতরা রয়ে গেলাম ৯ম গ্রেডে, পদোন্নতি প্রাপ্তরা এখন ৬ষ্ঠ গ্রেডে।
পদোন্নতি একজন কর্মকর্তার মানসিক প্রশান্তি বাড়ায়, আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ায়, বাড়ায় সামাজিক মর্যাদাও। পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা সঙ্গত কারণেই হতাশায় ভুগে, তাঁদের কর্মস্পৃহা কমে যায়, সামাজিকভাবে অনেকক্ষেত্রে তারা অপমানেরও শিকার হয়।
পদোন্নতির ক্ষেত্রে আগের অনেক বিসিএস ব্যাচ বাকি রয়ে গেছে, এই অযুহাতে নতুনদের পদোন্নতি দেয়া যাবে না- এমন নয়। আগে হয়নি, তাই বলে এখনও হবে না- এটা কেন মানব? অচলায়তন ভাঙতেই হবে। খুলতেই হবে পদোন্নতির জট। অন্যান্য ক্যাডারের মতো যোগ্যতা অর্জন করলেই পদোন্নতি চাই সকল ক্যাডার কর্মকর্তার। ৩২-তম বিসিএসের ৫ বছর পূর্তি হলো ২ দিন আগে। পদোন্নতির শর্ত ও যোগ্যতা পূরণ করে থাকলে তাঁদের পদোন্নতির উদ্যোগ নেওয়া এখন বিবেকের দাবি।
মনে রাখতে হবে- সিলেকশন গ্রেড বাতিলের পর পদোন্নতি ছাড়া গ্রেড উন্নয়ন ও বেতন বৃদ্ধির আর কোনো রাস্তা নেই। দিন শেষে আমরা সকলেই কিন্তু পদ মর্যাদা ও বেতন বৃদ্ধির কাঙাল।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
[বি.দ্র. বেশি বেশি শেয়ার করে আমাদের অভিভাবকদের নজরে আনার চেষ্টা করুন।]
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
দীর্ঘ সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
লেখা- ওয়াদুদ খান
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ
৩১-তম বিসিএস (পদোন্নতি বঞ্চিত)

Thursday, 25 October 2018

ক্ষয় | একটি ট্রাজিক প্রেম ও অবক্ষয়ের কাহিনি | ৪ পর্ব



(এই গল্পটা যতবার পড়ি- ততবারই জলে চোখ ভিজে যায়।)

পর্ব-১
▬▬▬▬

আমি ইমরান। আমার বন্ধু রাজিব। ও দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি চটপটে। ওর সাথে আমার প্রথম পরিচয় ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হবার পর। আমাদের কলেজের বাংলা স্যার ছিলেন খুবই আমোদে। মাঝে মাঝেই ক্লাশে হাসির কবিতা আবৃত্তি করতেন উনি। ছাত্রছাত্রীদেরকেও উৎসাহিত করতেন কবিতা লিখতে। বাংলা স্যারের ক্লাশে রাজিব নিজের লেখা একটা কবিতা পড়ে শোনালো-

এই কলেজে পড়ি আমি
আমি পঁচা ছাত্র
লেখাপড়া করি না
বই কিনেছি মাত্র।

স্যাররা আমায় গাধা বলে
আমি তাতে খুশি
স্যাররা যখন গরু বলে
তখন তাদের দুষি।

বলি, ‘গাধা সে তো ভালোই বড়ো
বুদ্ধি আছে কিছু
গরু সে তো মূর্খ বড়ো
বুঝে না তো কিছু।

আমি স্যার বুঝি কিছু’-
শুনে স্যার হাসে।
বলে, ‘তুই বুঝিস
ঘোড়ার ডিম জলে ভাসে।’

আমি বলি, ‘না, না স্যার,
ডিম পাড়ে না তো ঘোড়া।’
স্যার বলে, ‘বুঝিস ভালোই
পারিস না ক্যান পড়া?’

রাজিবের এই হাস্যরসে ভরা কবিতা শুনে ওকে ভীষণ ভালো লেগে যায় আমার। তারপর খুব কৌশলে ওর সাথে বন্ধুত্ব জমিয়ে ফেলি।  কিছু কিছু বন্ধু হয়- যাদের সাথে মিশে মানুষ নষ্ট হয়। আবার কিছু কিছু বন্ধু আছে যাদের সাথে মিশে ভালো হয়ে যায় অনেক ছেলে। রাজিব ছিল এমন একটা ছেলে যার প্রত্যেকটা দিকই ভালো লাগতো আমার। এবং ভালো হবার অনুপ্রেরণা পেতাম।

ওকে কখনোই প্রথম বেঞ্চে বসতে দেখিনি আমি। ও বসতো সবার পেছনে। এতটাই পেছনে বসতো যাতে কোনো টিচারের কথা ওর কানে না যায়। ক্লাশের একঘেয়ে পড়াশোনাকে বড্ড ঘৃণা করতো ও। ক্লাশ মিস করায় ও ছিল সবার সেরা। ওর কথা হলো-

প্রতিদিন একই নাটক।
শিক্ষকের হাতে থাকবে চক।
মুখে থাকবে বকবক।
অকারণেই স্যারের পা করবে ঠকঠক।
আর ছাত্রছাত্রীদের বুকটা করবে ধকধক।

ওর এইসব ছন্দ শুনে আমরা হেসে উঠতাম কককক করে।

ওর এই এলোমেলো স্বভাবের কারণেই হয়তো ওকে ভালো লাগতো বেশি। তবে মজার ব্যাপার হলো- কলেজের প্রতিটা পরীক্ষায় প্রথম হতো ও। এই ছেলেটা এত ভালো রেজাল্ট কীভাবে করছে- সেটা ছিল সবার কাছেই একটা বিস্ময়। কারণ, ওর হাতে গল্পের বই ছাড়া অন্য কোনো পড়ার বই তেমন একটা দেখা যেত না।

ওর মাথায় সব সময় দুষ্ট বুদ্ধি ভর করতো। প্রায় সকল টিচারকে নিয়েই ছন্দ বানাতো ও।  এইতো কিছু দিন আগে আমাদের কলেজে কাউসার নামে এক স্যার এলেন। স্যার দেখতে খুবই সুন্দর। লম্বাও যথেষ্ট। সমস্যা হলো উনার মাথার সামনের দিকটায় চুল একেবারেই নেই। এই স্যারের আরেকটি সমস্যা ছিল- কোনো ছাত্রী উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই- উনি প্রথমে উনার চশমাটা চোখ থেকে নামাবেন। তারপর রুমাল দিয়ে চশমার কাঁচটা পরিষ্কার করবেন কয়েকবার। শেষমেশ চশমাটা আবার নাকের ডগায় বসাবেন। তখন এটা বোঝা কঠিন হয়ে যায়- উনি চশমার ভেতর দিয়েই দেখছেন নাকি খালি চোখে দেখছেন।  রাজিব করল কি, এই স্যারকে নিয়েও একটা কবিতা বানিয়ে ফেলল-

কলেজে এলেন নতুন স্যার
নাম তার Cow Sir (কাউসার)
ছাত্রীরা সামনে এলেই উনি যান দমে
উনার চশমার পাওয়ার যায় কমে।
উনি তাই কাঁচ ঘষেন বারবার
নাম তার Cow Sir (কাউসার)
চেহারাটা স্যারের- কিন্তু একের
সবই তার ঠিকঠাক
শুধু ভুল করে- চুল খসে
মাথায় পড়েছে টাক............

ওর এই কবিতা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতাম আমরা। তবে যে ব্যাপারটা আমাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করতো সেটা হলো- ও কখনো মেয়েদের সাথে মিশতো না। মেয়েদের থেকে চারশত গজ দূরে থাকার চেষ্টা করতো ও। মনে হতো- এ ব্যাপারে একশ চুয়াল্লিশ ধারা জারি করা হয়েছে। এতটা মেয়েবিমুখ ছেলে আমি কলেজে আর দেখিনি।

এটা বোধহয় চিরন্তন সত্যি একটা ব্যাপার- কলেজে যত মেয়েই থাকুক- দুই একজন মেয়ে থাকবে অপরূপ দেখতে। তাদের রূপের আগুনে ঝাপ দিয়ে ছাই হতে চাইবে অনেক ছেলেই। তেমন একটা মেয়ে ছিল- রিয়া তার নাম............

পর্ব-২
▬▬▬▬

আমি তো মাঝে মাঝেই মেয়েটার দিকে হা-করে তাকিয়ে থাকতাম। এতটা সময় ধরে হা-করে তাকিয়ে থাকতাম যে- একবার একটা মাছি ঢুকে গিয়েছিল আমার মুখের ভেতর। অথচ, রাজিবকে দেখেছি একেবারেই নির্বিকার। মনের ভুলেও তাকাতো না ওর দিকে। রাজিবকে দেখে খুব হিংসে লাগতো আমার। আমি কেন ওর মতো হতে পারি না?

আমি রিয়াকে প্রেমের একটা চিঠি দেবো ভাবছিলাম। সমস্যা হলো আমি ভালো ছাত্র নই। কোনো কিছুই গুছিয়ে লিখতে পারি না। প্রেমের অফার সংক্রান্ত চিঠির শুরুটা কেমন হবে তাই গবেষণা করলাম দুই রাত।

- পত্রের শুরুতে আমার সালাম নিবেন। -
পত্রের শুরুতে আমার ভালোবাসা নিবেন।
- পত্রের শুরুতে জানাই শুভেচ্ছা।
- পত্রের শুরুতে জানাই ইত্যাদি ইত্যাদি..................

কোনোভাবেই আর পেরে উঠছিলাম না। তাই বাধ্য হয়ে ছুটে যাই রাজিবের কাছে। বলি, “দোস্ত, আমাকে একটা চিঠি লিখে দে না? প্রেমের অফার রিলেটেড। কিছুতেই চিঠিটা গুছিয়ে আনতে পারছি না।”
- “কার কাছে দিবি এই চিঠি?”
- “রিয়াকে দেবো। জানিস তো ওকে দেখার পর থেকে আমার মাথা আর ঠিক নেই। জানি, ও হয়তো আমাকে ভালোবাসবে না। না বাসুক। নিজের ফিলিংসটা জানিয়ে রাখি। মরা শামুকে পা কাটতেও তো পারে, তাই না?”

অনেক অনুরোধের পর ও আমকে একটা চিঠি লিখে দিলো এরকম-

রিয়া,

আমার ফ্রেন্ড ইমরান তোমাকে খুব ভালোবাসে। সে সারাক্ষণ তোমার দিকে হা-করে তাকিয়ে থাকে। হা-করে তাকিয়ে থাকা হচ্ছে ভালোবাসার ‘হাহিপ্রকাশ’। ‘হাহিপ্রকাশ’ হচ্ছে বহিপ্রকাশের চেয়ে বেশি কিছু। তুমি যদি আমার বন্ধুটাকে ভালোবাসো- সেটা ভালো। আর যদি ভালো না বাসো- তবে সেটা আরো ভালো।

ইতি
রাজিব

চিঠিটার উত্তর রিয়া আমাকে দেয়নি। দিয়েছিল রাজিবকে। সেই চিঠিটা রাজিব আমাকে পড়তে দিয়েছিল। যাতে লেখা ছিল-

রাজিব, তুমি ভাবলে কী করে ইমরানের মতো গাধা টাইপের একটা ছেলেকে ভালোবাসবো আমি। ওর চেহারাটা সুন্দর। মনটাও হয়তো সুন্দর। কিন্তু ও তোমার মতো ইন্টিলিজেন্ট নয়। তবে আমি খুব লাকি যে- স্টুপিডটা তোমাকে দিয়ে চিঠিটা লিখিয়েছে। তুমি যে আসলেই অসাধারণ ব্রিলিয়ান্ট তার প্রমাণ ঐ ‘হাহিপ্রকাশ’ শব্দটা।  চিঠি যখন লিখতেই বসেছি তখন একটা সত্য স্বীকার করেই শেষ করব।

একথা মোটেই অসত্য নয় যে, অনেক ছেলেই আমার পেছনে ঘোরে। তবে তাদের কাউকেই আমার পছন্দ নয়। আমার ভালো লাগে তোমাকে। তোমার বুদ্ধিমত্তা, তোমার রেজাল্ট এবং দাড়ি শোভিত চাঁদের মতো মুখ- সবই আমাকে তীব্র আকর্ষণ করে।  তুমি আমাকে ভালোবাসো বা না বাসো দয়াকরে কখনো দাড়ি কাটবে না। দাড়ি কাটলে তোমাকে এত সুন্দর লাগবে না দেখতে। দাড়িওয়ালা ছেলে আমার আজন্ম অপছন্দের। তবে তোমাকে দেখার পর ধারণা পাল্টে গেল। কল্পনাতেও ছিল না দাড়িওয়ালা মানুষ এত সুন্দর দেখতে লাগতে পারে।

আই লাভ ইউ রাজিব।

ইতি
রিয়া

চিঠিটা পড়ে আমি হতভম্ব হয়ে যাই। রাজিবের দিকে তাকিয়ে থাকি অনিমেষ। সত্যিই তো দাড়ি শোভিত রাজিবের মুখখানা চাঁদের চেয়েও বেশি সুন্দর। ভেবে দেখলাম- আমি যদি কোনো মেয়ে হতাম- অবশ্যই রাজিবকে ভালোবাসতাম। তাই রিয়াকে কোনো দোষ দিলাম না। মনটাও খারাপ করলাম না। বরং ভাবছিলাম- আজ থেকে আমিও দাড়ি রাখা শুরু করব। প্রেমের ক্ষেত্রে দাড়ি কোনো বাধা নয়।  রাজিব কিন্তু রিয়ার ডাকে সাড়া দেয়নি। ওই চিঠির উত্তরও সে দেয়নি রিয়াকে।

ভালোবাসাহীন এক অদ্ভুত জগতে রাজিবের সাথে বসবাসের চেষ্টা করলাম আমিও। দাড়িও রাখা শুরু করলাম। পড়া ধরলাম গল্পের বই।
দেখলাম সময় কেটে যাচ্ছে।
সময় কেটে যায়।
সময়ের নিয়মই এমন।

ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর আমরা দু’জনেই টাঙ্গাইল সা’দত কলেজে ভর্তি হই। ও অবশ্য জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটিতে ফিলোসফিতে চান্স পেয়েছিল। ওর মনমতো সাবজেক্ট না পাওয়ায় ভর্তি হয়নি ওখানে। আমি মনে মনে এমনটাই চেয়েছি যাতে ও অন্য কোথাও ভর্তি না হয়। দু’জনেই পড়া শুরু করলাম ইংলিশ লিটারেচার। ঢুকে গেলাম সাহিত্যের অনন্য এক জগতে।

সেকেন্ড ইয়ারে উঠবার পর নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। আমাদের একটা সাবজেক্ট ছিল যার নাম ‘রোম্যান্টক লিটারেচার’। শেলী, কীটস, বায়রন- ওদের কবিতা পড়ে এক অদ্ভুত রোম্যান্টকতায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকতো মন। দেখলাম মনের দরজায় আর তালা মেরে রাখা যাচ্ছে না। চোখজোড়া আর কোনো বাধা মানছে না। প্রেমে পড়ার জন্যে ব্যাকুল হয়ে গেলাম। কিন্তু আমার আদর্শ ছিল রাজিব। ওর হার না মানা স্বভাব তখনো ছিল।

ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল রাজিব। ওকে বন্ধু কিংবা প্রেমিক হিসেবে পেতে চেষ্টা করতো অনেক মেয়েই। কিন্তু পারেনি। ওর কথা হলো জীবনে ভালোবাসা যায় দু’টি মাত্র জিনিসকে- সেটা হলো- ‘বই এবং বউ’- এছাড়া আর কাউকে নয়।

পুরো কলেজ ক্যাম্পাসটা যখন ভালোবাসার স্রোতে ভেসে যাচ্ছিল- তখন দেখলাম, ও একটা কবিতা টানিয়ে রেখেছে ওর পড়ার টেবিলের সামনের দেয়ালে। কবিতাটা এমন-

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে
ভালোবাসার সংসারে আগুন জ্বালিয়ে দিই।
ভেঙে গুড়িয়ে দিই-
শত শত প্রেমিকের রক্তে গড়া
ভালোবাসার টুইন টাওয়ার।

তারপর হব ইতিহাস।
হব ইতিহাস।

ভালোবাসার উপরে ওর এত ক্ষোভ কেন তা বুঝতে পারতাম না আমি। ওকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে শুধু বলতো-

পৃথিবীতে আসলেই
প্রেম বলে কিছু নেই।
আজ যে মোর কাল সে তোর।
আজ যে কাছে কাল সে দূর.........

ফোর্থ ইয়ারে পা দেওয়ার পর ওর মাঝে এক বিস্ময়কর পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। এই পরিবর্তন আমি কল্পনাতেও করার সাহস পাইনি...........

পর্ব-৩
▬▬▬▬

আমি থাকতাম উত্তরা হলে। আর ও থাকতো সিএম হলে। ওর সাথে দেখা হতো প্রায় প্রতিদিন। মাঝখানে সপ্তাহ খানিকের মতো ওর সাথে আমার যোগাযোগ ছিল না। ফোন করেও পাচ্ছিলাম না ওকে।  ওর সাথে দেখা হলো সেদিন। দেখি- দাড়িগুলো অনেক খাটো করে ফেলেছে ও। ওর চুলগুলো ছিল কাজী নজরুলের মতো বাবরী দোলানো। সেই চুলও আর আগের মতো নেই। অনেক খাটো করে ফেলেছে। ওকে দেখে আমি বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছিল- ভুল দেখছি আমি।

আমি ওকে বললাম, “রাজিব, আমি তো ভাবতেই পারছি না- তুই এতটা বদলে গেছিস এই ক’টা দিনে। হঠাৎ বাউণ্ডুলে ভাবটা ছাড়ার কারণ কী? তবে এখনো তোকে দেখতে কিন্তু চমৎকারই লাগছে।”
রাজিব বলল, “আমি হেরে গেছি ইমরান। আজ এই চব্বিশটা বসন্ত শেষে বুঝলাম- ভালোবাসার শক্তি আদি অন্তহীন।”
আমার ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেল অপার বিস্ময়ে।
- “মানে?”
- “মানে আমি প্রেমে পড়ে গেছি ইমরান।”
- “কার প্রেমে?” - “রিয়ার।”

দেখি, ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যাচ্ছে দ্রুত। সামনে দেখি সেই সোনালি সময়। রিয়া। যাকে প্রথম দেখে- সেই প্রথম যৌবনেই পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আমি। যাকে পটানোর চেষ্টা করেছিলাম বোকার মতো।
সেই মেয়েটি এখনো ভুলেনি রাজিবকে?
এও কী হয়!
এটা কি বিশ্বাস করা যায়?

বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম- রিয়া যদি সত্যিই রাজিবকে এখনো ভালোবেসে থাকে, তাহলে এই ভালোবাসা মেকি নয়। যেখানে একটি চিঠি লেখার যে সময়- সেই সময়ের ব্যাবধানে নারীর হৃদয় তিনবার বদলায়- সেখানে রিয়া প্রায় ছয়টি বছর ধরে ভালোবেসে চলেছে রাজিবকে।  ভালোবাসা বলতে একটা জিনিস এখনো তাহলে আছে?

হঠাৎই ভীষন মিথ্যে মনে হলো রাজিবেরই লেখা একটা কবিতার শেষাংশ-

আকাশের রঙের আগেই
নারীর মন বদলয়ায়।
এই আলতু ফালতু যুগে
ভালোবাসে কোন শালায়?

তারপরের দিনগুলো রাজিবের জন্যে হয়ে গেল রোমাঞ্চ জাগানিয়া। আমার প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে গেল বিবর্ণ। হোস্টেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে- তাকিয়ে থাকতাম দিগন্ত পানে। এক অন্তহীন নিঃসঙ্গতা কুড়ে কুড়ে খেতো আমাকে।
শুধু জানতে ইচ্ছে করতো-
রাজিব, তুই ভালো আছিস তো?

তারপর খুব দ্রুত কিছু পরিবর্তন লক্ষ করলাম রাজিবের মাঝে। একদিন দেখলাম দাড়িগুলো পুরোপুরি কামিয়ে ফেলেছে ও। ফর্সা মুখটা মনে হয় আরো ফর্সা হয়ে বেরিয়ে এলো। অন্য একদিন দেখলাম জিম থেকে বেরিয়ে আসছে রাজিব। তারপর আরেকদিন ওকে দেখলাম জেন্টস পার্লারে।

প্রেমে পড়লে মানুষের মন বদলায় শুনেছি। শরীরের চামড়াগুলোও যে প্রলেপ দিয়ে, চেচেমুছে পরিষ্কার করতে হয়- রাজিবকে দেখে সেটা বুঝলাম।

বদলে গেল সময়।
বদলে গেল রাজিব।
আর এক গাল দাড়ি নিয়ে- নিজেকে ভুলে যাবার অন্তহীন প্রয়াসে- আমি ডুব দিলাম সাহিত্যের সাগরে।

পর্ব-৪
▬▬▬▬

প্রায় একটা বছর ওর সাথে আমার আর যোগাযোগ ছিল না। তখন আমি মাস্টার্স পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।

একদিন সকাল বেলায় নাস্তা করতে যাব- এমন সময় দেখলাম- প্রায় আশি হাত দূরে এক কাকতাড়ুয়া দাঁড়িয়ে আছে। তবে অবাক হচ্ছিলাম- কাকতাড়ুয়াটা দেখতে ঠিক মানুষের মতোই। পরনে শার্ট, প্যান্ট এবং পায়ে জুতো পর্যন্ত। চিকন একটা বাঁশের উপর মানুষের মাথার মতো কি একটা গোল যেন বসানো ছিল। কাছাকাছি গিয়ে দেখলাম- এটা কাকতাড়ুয়া নয়।
এ যে আমাদের সেই রাজিব।
কী হাল হয়েছে ওর!

নিজের চোখকে বিশ্বাস করা খুব কঠিন মনে হচ্ছিল। আমি রাজিবের হাতটা ধরলাম। তারপর বললাম, “তোর এই অবস্থা কেন? এমন তো ছিলি না তুই? শুকিয়ে একেবারে বাঁশের মতো চিকন হয়ে গেছিস।”
ও কিছু বলল না।
হয়তো ও কিছু বলতে পারল না।
আমার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে খুব দ্রুত সরে গেল ওখান থেকে।

আমি কোনো হিসেব মেলাতে পারলাম না। জীবনের কোনো হিসেবই মিলে না গাণিতিক নিয়মে।  এর ঠিক আঠারো দিনের মাথায় একটা চিঠি পেলাম রাজিবের।

ইমরান,

আমি শেষ হয়ে গেছি। এভাবে শেষ হয়ে যাব কখনো ভাবিনি রে। একটা ছোটোগল্পের মতো হঠাৎ শুরু আমার জীবনের। আর ছোটোগল্পের মতো তার হঠাৎই শেষ।  যে সত্যিটা আমি কাউকে বলিনি, এমনকি তোকেও নয়- আজ সেটা তোর কাছে বলব। আমি এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। আমাদের ঘরটা ছিল ছনের। ছোটোবেলায় দেখতাম- যখনই কোনো ঝড় হতো- আমাদের মনের সাথে সাথে ঘরটাও কাঁপতো থরথর করে। ক্লাশ সেভেনে পড়ার সময় জসিম উদদীন এর একটা কবিতা নকল করে কয়েকটি চরণ লিখেছিলাম এরকম-

তুমি যাবে, যাবে ভাই,
যাবে মোর সাথে
আমাদের কুঁড়ে ঘরে
যে ঘরে বৃষ্টি এলেই বৃষ্টি পড়ে।

এই সীমাহীন দারিদ্রতাই আমাকে দূরে রাখতো সবার কাছ থেকে। তাই ইচ্ছে করেই মেয়েদের সাথে মিশতাম না। আমার কেবলই মনে হতো- 'অর্থ (টাকা) ছাড়া কোনো কিছুরই অর্থ (মানে) নেই'।

হার না মানা এক স্বভাব ছিল আমার। তাই শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পড়াশোনা ছাড়িনি। সেই ক্লাশ সিক্স থেকে টিউশন করি আমি। যখন ক্লাশ নাইনে পড়তাম তখনই পড়াতাম ক্লাশ টেনের এক ছেলেকে। রিয়েলি, যথেষ্ট মেধাবী ছিলাম আমি।

তোর মতো আমারও একটা মন ছিল। কিন্তু সেই মনের দরজায় মস্ত এক তালা ঝুলিয়েছিলাম। কেননা, কারও ভালোবাসা পাবার যোগ্য আমি ছিলাম না। এই যান্ত্রিক পৃথিবীতে ভালোবাসা পেতে কিংবা দিতে বুক বোঝাই ভালোবাসা নয়, লাগে পকেট বোঝাই টাকা। কিন্তু নিজের এই অক্ষমতা, অযোগ্যতা কিংবা দারিদ্রতা কারো কাছে প্রকাশ করতে চাইতাম না আমি। তাই কৌশলে শামুকের মতো নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম। সেটাই বোধহয় কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমার জীবনে।

কারো ভালোবাসা পাবো না বলেই হয়তো ভালোবাসার বিরুদ্ধে লেখালেখি করে মনের রাগ ঝাড়তাম আমি।  তারপরেও- আমার একটা মন ছিল। সেই মনটা মাঝে মাঝেই সন্তানশূন্য মায়ের বুকের মতো খা খা করতো ভালোবাসা পাওয়ার জন্য।  তাই ছয়টি বছর পরেও যখন দেখলাম- একটা মেয়ে এখনো আমার পথ চেয়ে বসে আছে তখন সেই পথে হাঁটা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। যদিও জানতাম- এই পথটা মোটেই মসৃণ নয়। ভীষণ বন্ধুর। দুর্গম। বড়ো সচেতনভাবে ভুল জায়গায় ফুল দিলাম আমি।  ভালোবাসা পেয়ে বুঝলাম- ভালোবাসা ভালো নয়।

টানা একটা বছর ভালোবাসার জলে সাঁতার কেটে দেখলাম- এর কোনো কিনারা নেই। এ যে সীমাহীন। তাই তীরে এসেও তরী ভিড়ল না আমার।  ওরা যে এত বড়লোক- এটা ছিল অকল্পনীয়। ভেবেছিলাম মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হবে ও। কিন্তু দেখলাম- তা নয়। ধনীর দুলালী। ওর বাবা মায়ের ধারণা আমি রিয়াকে পটিয়েছি 'রাজ্য ও রাজকন্যা' একসাথে পাবার আশায়।

ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেল ভীষণ বড়লোক এক ছেলের সাথে। ছেলেটা জব করে জাতিসংঘের সচিবালয়ে। স্যালারি বাংলাদেশি টাকায় চার লক্ষ ত্রিশ হাজার।
এমনটা হয়েছিল কারণ রিয়াও তো কম সুন্দরী নয়।
এমন সুন্দর একটা মেয়ে ও!
ওর পাশে ঐ লোকটা আর টাকার পাহাড়টা চমৎকার মানায়।  ভালোবাসা তাই মুখ থুবড়ে পড়ে।
আমি নিজেকে সরিয়ে নিই। এই অযোগ্য, অপদার্থটাকে ওর পাশে একটুও মানায় না বলে।

বিয়ে হয়ে গেল রিয়ার। শুনেছি অনেক নাকি কেঁদেছিল সেদিন। একমাস পরে নাকি দেখা গেছে হাজব্যান্ডের সাথে হাসতে হাসতে শপিং করছে রিয়া।

নিজেকে তাহলে বদলাতে পেরেছে রিয়া?
অবাক লাগেনি আমার।

কিন্তু এই একটা বছরের অন্তহীন ভালোবাসা, কথা বলা, স্বপ্ন দেখা- সবই সারাটাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়াতো আমাকে।  ওকে ভুলে যাবার অদম্য বাসনা থেকে প্রথমে বই পড়া শুরু করি। দেখি- বইয়ের প্রতিটি পাতা ওর মুখ হয়ে ভেসে উঠছে আমার সামনে।

তারপর বই ছেড়ে ধরি সিগারেট। সিগারেটের প্রতিটি টানে, ধোঁয়ার মাঝেও দেখি ওর সেই হাসিহাসি মুখখানা।  মনে হতো- যদি স্মৃতি শক্তি লোপ না পায়- তাহলে ওকে কোনোদিন ভুলতে পারবো না আমি। যতই ভুলে যেতে চাই, ততই মনে পড়ে।

তারপর ধরলাম মদ।
তারপর হেরোইন।

এই ভয়াল মাদকের টাকা জোগাড়ের জন্য ঢুকে গেলাম অপরাধের অন্ধকার জগতে।

রিয়ার এসব কিছুই আর জানবার কথা নয়।

ইতি
রাজিব

চিঠিটা পড়ার পর দু’চোখ জলে ভিজে গেল আমার।

সেদিন বিকেলেই ওদের গ্রামের বাড়ি যাই আমি। গ্রামের প্রায় সবাই ওকে চেনে। ওদের বাড়ি চিনতে তাই সমস্যা হলো না। সবার মুখে একই কথা শুনলাম- “বড়ো ভালো ছিল ছেলেটা। কেন যে এভাবে নষ্ট হয়ে গেল?”

অদূরে দেখি সত্যিই একটা ঘর। যার উপরে ছনের চাল। ঘরের সামনে চৌকাঠে বসা মধ্যবয়স্কা এক নারী। ধারণা ভুল হলো না আমার- মহিলাটি রাজিবের মা।
উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, “খালাম্মা, রাজিব কোথায়? বাসায় নেই?”

মহিলাটির বুকের পাঁজর মনে হয় ভেঙে গেল। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল চোখের জল। কোনো শব্দ বেরুলো না মুখ দিয়ে। হাতের ইশারায় আমকে সামনে যেতে বলল।

দেখি একটা কবর।
বোঝাই যায় কবরটা একেবারে নতুন।
হ্যা। দু’দিন আগের।
এই তো দু’দিন আগে- ক্রস ফায়ারে মারা গেছে রাজিব।

একটা কবরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ি আমি।
পুরো পৃথিবীটা ঘোলাটে হয়ে আসে।
পশ্চিম আকাশের শেষাশেষি সূর্যটা ক্রমশ ম্লান হচ্ছে।
অস্ত যাবে এখনই।
সেই অস্তায়মান সূর্যের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে হাস্যোজ্জ্বল একটা মুখ।
মুখটা রাজিবের।
দাড়ি শোভিত।
ভীষণ পবিত্র।
কানের কাছে শুনতে পাই ভরাট কন্ঠে আবৃত্তি করছে ও-

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে
ভালোবাসার সংসারে আগুন জ্বালিয়ে দিই।
ভেঙে গুড়িয়ে দিই-
শত শত প্রেমিকের রক্তে গড়া
ভালোবাসার টুইন টাওয়ার।

তারপর হব ইতিহাস।
হব ইতিহাস।

সূর্যটা হারিয়ে যায়।
আমি হাঁটু গেড়ে বসে থাকি।
নিশ্চল। নিথর।

পরের দিন।
কলেজের মাঠটায় দাঁড়িয়ে থাকি আমি।
ঝড়ে ভেঙে যাওয়া একটা গাছের মতো।
নিঃশব্দে।

তাকিয়ে দেখি- সমস্ত কলেজ মাঠটা জুড়ে শত শত তরুণ তরুণী বসা।
জোড়ায় জোড়ায়।
কিছুই বদলায়নি।
কিছুই বদলায় না।
কেউ বেঁচে থাকলে।
কিংবা কেউ মরে গেলেও..................
                                           
(সমাপ্ত)
(ধৈর্য ধরে পুরো গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা)

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
লেখার তারিখ: ৮ জুলাই, ২০০৬
গল্পগ্রন্থ : দহন
আসছে বইমেলা- ২০১৯
আরও গল্প পেতে এই পেজে #লাইক
দিয়ে কানেক্টেড থাকুন।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
গল্পকার: ওয়াদুদ খান
প্রভাষক ইংরেজি বিভাগ, সদরপুর সরকারি কলেজ
লেখকের লেখা সকল উপন্যাস পেতে ডায়াল করুন:
📞📞☎☎ ১৬৭৩-৫৯ ৪৫ ৭৯ 
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

Saturday, 6 October 2018

Paragraph on Folk Music | For HSC students




The songs and music of a community which remain uninfluenced by any sophisticated musical rules or any standard music styles are basically called folk music. Bangladesh has a heritage of rich folk music which includes both religious and secular songs. Folk music has some significant characteristics. It is composed by rural folk based on ancient rules transmitted orally.  Classical or modern music have not influenced these ancient rules of music. No regular practice is vital for folk music. It is basically composed and performed by illiterate or semi-literate rural people. The culture and the lifestyle of the different tribes have also influenced folk music. Tribes like the Santal, Garo, Hajong, Chakma, Monipuri, Tripuri, Marma etc. have immense influence on ethnic Bengali culture and lifestyle. The interaction has been clearly reflected in the richness of folk music. Folk songs may be sung individually or in chorus. Folk songs sung individually include Baul, Bhatiyali, Murshidi, Marfati, while songs sung in chorus include Kabigan, Leto, Alkap and Gambhira. In Banglesh, folk music is losing its appeal to young guys day by day. Modern pop or band songs are greatly influencing the common folk's tastes. Government should take some steps to retain our old heritage and culture.

To Stay Connected with Wadud Khan
Click on here ..... 

Friday, 5 October 2018

Suggestions for Degree (Pass) 3rd Year's Compulsory English



Suggestions for Degree 3rd Year Students
Compulsory English
Suggested by 
Wadud Khan (Lecturer, English)



PART-A (Reading & Understanding) Marks- 10

For Question No: 1 (A&B)

1. Most of our students cannot write out their examination….
2. Education means mental and moral training…..
3. Everybody desires success in life but few attain it….
4. Liberty does not descend upon people…..
5. Today women are playing important role in all spheres of life…..
6. Change is life, change is progress, and change is culture and civilization….
7. Money cannot buy happiness….
8. Patriotism is a noble virtue…….
9. An intellectual is one who is an enlightened……
10. Man has an inborn curiosity to see the unseen…….

PART-B (Grammar) (Answer any five) Marks- 20

Question No: 2-9

No Suggestion is given for this topic. Try to solve the previous years’ questions. The more you practice, the more you feel comfortable in this topic. If you don’t understand tenses, you must fall in danger. Start study from tenses and other basic grammars.

PART-C (Writing Part) (Answer any five) Marks-50

(Question-No: 10-17)

Essays

1. Patriotism
2. Students and Social Service
3. Unemployment Problem
4. Wonders of Modern Science
5. Natural Calamities
6. Uses and Abuses of Internet

Paragraphs

1. Uses and Abuses of Facebook
2. Independence Day
3. Digital Bangladesh
4. Pollution
5. Winter Morning
6. Friendship

Report Writing

1. Fire Accident / Road Accident / Boat Capsize
2. Cultural Program at Your College
3. Independence Day/ Mother Language Day/ Victory Day Celebration
4. Price Hike
5. Causes of Failure in English

Letter Writing  

1. Write a letter to your younger brother about the bad effects of smoking and advising him not to smoke/ not to use Facebook.  
2. Write a letter to your father informing about your preparation for the coming/ ensuing examination.
3. Write a letter to your younger advising him to avoid bad company.
4. Write a letter to your friend informing what you would like to do after your graduation.
5. Write a letter to your foreign-friend inviting him to visit Bangladesh.

Application

1. Permission to go on a study tour
2. Transfer certificate/ Testimonial  
3. Set up a canteen/ Common room/ Playground  
4. Provide sound system/ Multimedia Classroom
5. For a seat in the college hostel
6. Job Application

Amplification

1. NECESSITY IS THE MOTHER OF INVENTION   
2. PRACTICE MAKES A MAN PERFECT
3. HONESTY IS THE BEST POLICY
4. THE PEN IS MIGHTER THAN THE SWORD
5. PREVENTION IS BETTER THAN CURE

Dialogue

1. Write a dialogue between you and your friend about the necessity of learning English/ about the importance of learning English.

2. Imagine you are Shewli. You have a sister whose name is Pewli. Your mother’s birthday falls on September 25. You want to buy a birthday gift for your mother. You talk about this matter with your sister, Pewli. Now, write a dialogue between you and your sister about buying a gift for your mother.

3. Imagine you are a degree examinee. Your examination is going on. You are fed up with load shedding at this time. You met your friend Mamun and talk with him about the problem of load shedding. Now, write a dialogue between you and Mamun about the problem of load shedding.

4. Imagine you Nova. Your friend is Reshma. Many students fail in English every year. Now, write a dialogue between you and your friend about the causes of failure in English.

5. Imagine you are Huraira. Your younger brother is Hasan. Now, write a dialogue between you and your brother about the danger of smoking/ drug addiction.

[N.B. This Suggestion has been given just to satisfy the weaker students who always look for a super short way to overcome the hurdles of exams. If the students get these topics common in the exam, I’ll take all the credit. But I won’t take any liabilities if no topics are found common.]  

Follow me on Facebook:  ওয়াদুদ খান   

Thursday, 4 October 2018

30 Men Demanding Back 30% Quota | A Ridiculous Movement



Honourable Prime Minister Sheikh Hasina, a strong personality, has finally taken  a historic decision regarding quota elimination. Students of universities and colleges were demanding quota reform for several months. Many students were severely injured and some others were arrested for involvement in this protest. After many scenes, recently a gazette notification has been published declaring quota elimination in the recruitment of the first and second class jobs. 
Bangala Tribune, a famous online news portal, today shares a link entitled, "30 men demanding back 30% quota."  
The common mass and general students are feeling fresh and they heartily are expressing their gratitude towards the Prime Minister. But there are some men who are demanding 30% freedom fighter quota again. This scene has made the general people disgusted. If they are meritorious, they should prove their worth. They have still equal opportunities like other ordinary students to face PSC or other authorities. Eliminating quota does not mean eliminating their chances or rights to qualify for job exams. It is good to see that the job market is open to all. Now, all are allowed to play the same games in the same fields. The industrious will survive whereas the lazy will defeat in the battle of jobs. 

Demanding quota back looks very embarrassing to all intellectuals. We, the general, people are now looking for a talent based newer Bangladesh. 

Heartfelt thanks and felicitations to AL Leader Sheikh Hasina again for courageously taking a revolutionary decision though there were innumerable rumours whether quota will be demolished or not. 

Lecturer, English           

Student Should (or not) Use Facebook | Paragraph



Students should or should not use Facebook has become a debating issue. If a student uses facebook just to communicate with his/ her near and dear ones, then it can easily be said that using facebook is not totally harmful. Actually, very often facebooking gives us somewhat mental relief specially when we feel utter loneliness. A student can very comfortably communicate with his/ her other classmates through Facebook. He/ she can send important  messages instantly and can get up-to-date information from his/ her Facebook friends. But it may be very harmful for a student if he/ she loses control over it. Sometimes, many young students become curious just to make friendship with opposite sexes and try to fall in love. If it happens, their valuable times will be killed on  trifle matters. The relationship based on Facebook is very fragile. A student might lose everything and bring utter disaster by Facebooking. Needless to say, it’s quite tough to decide whether a student would use Facebook or not. It just depends on the mentality of the students. If he/ she applies it for the noble cause, I just appreciate to use Facebook. Otherwise, using facebook should be prohibited.

(আমার এক স্টুডেন্টের অনুরোধে- paragraph-টা লিখার চেষ্টা করলাম)

Wednesday, 3 October 2018

একদা প্রিয়তম | রোম্যান্টিক কবিতা | ট্র‍্যাজিক এন্ডিং




একদা প্রিয়তম,

তুমি কি ভেবেছো
কোনো খবর রাখিনি তোমার?
ঢাকা গিয়ে আধুনিক হয়ে
নব্য ফ্যাশনেবল প্রেমিকা পেয়ে
আমাকে ভুলে গেলেও,
আমি কিন্তু সব মনে রেখেছি।

কত স্মৃতি হারিয়েছে
বিস্মৃতির অন্ধকারে
ভুলে গেছি বান্ধবীদের নাম,
কিন্তু তোমার প্রতিটা কথা
মনের খাতায় লেখা কবিতার মতো
আজও ছন্দ তুলে
নদীর ঢেউ তুলে
দুচোখ বেয়ে বৃষ্টি নামে।

কত খবর নিয়েছি তোমার ...

শুনেছি ভার্সিটি ক্যাম্পাসে,
কিংবা বিভিন্ন পার্কে
প্যান্ট শার্ট পড়া এক মেয়ের সাথে তোমাকে
অন্তরঙ্গভাবে দেখা যায়।

তবুও
বোকা মেয়ের মতো
কতদিন সারাদিন
তোমার অপেক্ষায় থেকেছি
ভেবেছি তুমি আসবে
নীড়ে ফিরবে ।
শহর জুড়ে কাচের কোকিল
তুমি বুঝবে।

সেই দুরন্ত কৈশোরে
কিছু কবিতা
কিছু চিঠি
আর চোখ বন্ধ করে
হাতের তালুতে চুমু দিয়ে
শিখিয়েছিলে
ভালোবাসা কারে কয়?

সেই কবিতার ছন্দে
এখনো হারাই
চিঠির ভাষায়
এখনো মাতাল হই।
আলোড়িত হই
সেই চুমুর উষ্ণতায়।

আর তুমি কিনা ......???

ক্লান্ত চোখে একদিন
তোমাকে দেখলাম
ফিরে এসেছো
তবে একা নও,
সাথে তোমার লাইফ পার্টনার।
হ্যাপি কাপল।

ইতি
একদা প্রিয়তমা

লেখা: ওয়াদুদ খান 
তারিখ: ২৬ অক্টোবর, ২০১০

কষ্টকথা সাফল্যগাথা | এক গ্রাম্য যুবকের সফল হওয়ার কাহিনি | উপন্যাস




উপন্যাস: কষ্টকথা সাফল্যগাথা
(পার্ট- ৬)

সেকেন্ড ইয়ারে উঠে একটা টিউশন পেয়ে গেলো স্বপন। শুনে খুব খুশি হয়েছিলো ফাহমি। এক মাস যেতে না যেতেই স্বপন বললো, “ফাহমি, টিউশনটা ছেড়ে দিলাম।”
“কেনো?”, জানতে চাইলো ফাহমি।
- আর বলিস না। মাইয়াটা খুব ফাজিল ছিলো। ক্লাস সেভেনে পড়ে। কিন্তু...
- কিন্তু কী?
- আমাকে অফার করে বসলো।
- অফার! কিভাবে করলো? শুনি।
- তুই তো জানিস, আমি খুব লাজুক টাইপের ছেলেতার মধ্যে গ্রাম থেকে এসেছি শহরে। টিউশনটা খুব দরকার। চুপচাপ পড়াই। কোনোদিকে তাকাই না। মাইয়াটা বলে...
- কী বলে?
- বলে যে- “আপনি কি মাইয়া মানুষ? এতো শরম কেনো আপনার? আচ্ছা, আপনার কি জিএফ নাই?” একথা শুনে আমি তো লজ্জায় শেষ। আমি বললাম, “এই, তুমি কোন ক্লাসে পড়ো? জিএফ মানে কী?” মেয়েটি বললো, “স্যার, আপনি জিএফ মানে জানেন না?” আমি বললাম, “হ্যাঁ। জানি। জিএফ মানে হলো গুড ফ্রেন্ড। ‘জি’তে গুড আর ‘এফ’তে ফ্রেন্ড।”
হাসি পেলো ফাহমির। হাসি চেপে বললো, “তারপর?”  
- তারপর মাইয়াটা হাসি শুরু করলো খিলখিল করে। বলে যে- “স্যার, আপনি কি আঁতেল? নাকি বেতাল?” আমি বললাম, “মানে?” মেয়েটি বললো, “জিএফ মানে গার্ল ফ্রেন্ড। তবে স্যার আপনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে।”
- তুই কী বললি তখন?
- কী বলবো? বললাম, “এই মাইয়া, তুমি আমাকে কী বলতে চাচ্ছো? স্পষ্ট করে বলো।” তারপর মেয়েটি সরাসরি বলে দিলো, “জানেন স্যার, আমাদের ক্লাসের সব মেয়েরই বিএফ আছে। বিএফ মানে কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ড না। বিএফ মানে হলো বয় ফ্রেন্ড।  আমার শুধু বিএফ নাই। বয় ফ্রেন্ড মানে কিন্তু আবার ছেলে বন্ধু না।” আমি জিজ্ঞেস করলাম, “বয় ফ্রেন্ড মানে কী?” মেয়েটি বললো, “বয় ফ্রেন্ড মানে হলো প্রেমিক। বুঝেছেন? এখন বলেন, আপনি কি আমার বিএফ হবেন?”
- তারপর তুই কী বললি? কী বললি মেয়েটাকে?
- বললাম, “আমার খুব হিসি পেয়েছে। টয়লেট কোনদিকে? তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।”
- হা হা হা। পালিয়ে চলে আসলি নাকি?
- হুম। মান সম্মান নিয়ে বেঁচে এসেছি। টিউশনটা ছেড়ে দিলাম। ঢাকা শহরে ছাত্রী পড়ানোর সাথে দেখি প্রেমটা ফ্রি পাওয়া যাচ্ছে।
- ফ্রি প্রেমের অফারটা গ্রহণ করলি না কেনো?
- এতো প্রেম আমি কোথায় রাখবো? জায়গা নাই। আচ্ছা, ফাহমি তোর কী অবস্থা? আর তো আপডেট পেলাম না।
- কালকে একটা ডেটিং আছে।
- ডেটিং? রিয়েলি?
- ডেটিং বলতে ছেলেটাকে দেখতে যাবো। এফবিতে আমাকে প্রপোজ করেছে। আগে দর্শন, পরে ডিসিশন।
- গুড আইডিয়া। কোথায় আসবে ছেলেটা?
- আমাদের কলেজের গেটে। তারপর বেড়াতে যাবো- সোলস পার্কে। ফুচকা খাওয়ার প্লান আছে।
- ঠিক আছে। ডেটিং শুভ হোক। এখন রাখতে হবে। বিজি।
- ওকে। ভালো থাকিস।

এখন রাত দশটার কাছাকাছি।
ঢাকা শহরে রাত শুরু হয় অনেক দেরিতে। হাঁটছে স্বপন। রাতের খাওয়াটা এখনো হয় নি ওর। পকেটে মাত্র কুড়িটা টাকা আছে। দু’টি চিতই পিঠা ধনে পাতা বাটা দিয়ে কিনে খেলো স্বপন। রাতের খাবার হিসেবে মাঝে মাঝেই চিতই পিঠা খায় ও। শেফালি ফোন করে জানিয়েছে ওদের থাকার ঘরের পাঠখড়ির বেড়াটা পরিবর্তন করা দরকার। রিকশা চালিয়ে যা কামায় তা স্বপনের পড়ালেখার পেছনেই খরচ হয়ে যায়। তারপরেও, অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা জমাচ্ছে ও

ফুল বেঁচে বস্তিতে ফিরছে দশ বছর বয়সী বিল্টু। স্বপনের সাথে বেশ ভালোই খাতির ছেলেটার। বিল্টু লেখাপড়া জানে না। তবে আগ্রহ আছে। স্বপন বিল্টুকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, “বিল্টু, তোর মতো আর কয়জন আছে?”
- অনেকেই আছে স্বপন দা? ক্যান?
- লেখাপড়া শিখবি?
- দাদা, লেখাপড়া আমাগো লাইগা না। ঢাকা শহর বড়োলোক পোলাপাইনদের লাইগা
- লেখাপড়া শিখতে তোর ইচ্ছে করে?
- করলে কী লাভ?
- আচ্ছা, তোর মতো আর কতোজন আছে? এমন ফুল বেঁচে?
- অনেকেই আছে স্বপন দা? ক্যান জিগাইতেছেন?
কিছুক্ষণ ভাবলো স্বপন। তারপর বললো, “তোরা লেখাপড়া শিখবি? আমি তোদের শেখাবো। সপ্তাহে তিনদিন রাস্তায় জ্বলে থাকা লাইটের নীচে পাটি বিছিয়ে পড়াবো তোদেরপড়বি?”
উত্তরে বিল্টু বললো, “আপনে আমাগো কাছ থাইকা টাকা লইবেন না? মাগনা পড়াবেন?”
স্বপন বললো, “হুম। মাগনা পড়াবো। পারলে- তোদের বই কেনার টাকাও দিতাম।”
এক জাদুকরী প্রভাব আছে স্বপনের। মানুষকে কাছে টানতে পারে দ্রুত। বিশেষকরে বাচ্চাদের।  

তারপর থেকে বিল্টুদের সপ্তাহে তিনদিন পড়ায় স্বপন। স্বপনের স্কুলে এখন তেরোজন ছাত্র। সবাই “অ আ ই ঈ ক খ গ ঘ ১ ২ ৩ ৪” চিনে ফেলেছে।

এই ব্যস্ত নগরে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভীড়ে আঠারো বছরের এক তরুণ রাস্তার পাশে পাটি বিছিয়ে কাঠের টুলে বসে কিছু টোকাই ছেলেদের পড়াচ্ছে- সেটা যেনো দেখার কেউ নেই।   
এ শহরের যুব সমাজের সকলে যখন ব্যস্ত প্রেমে কিংবা কামে। ইয়াবা কিংবা গাঁজায়।
স্বপন তখন রিকশার প্যাডেলে পা দিয়ে গেয়ে যায়, “আমি হারবো না। হারবো না। হারবো না।”  

হার্ড কপির জন্য ডায়াল করুন:   ০১৭৮৫-৫৬২০৮০ 

Tuesday, 2 October 2018

অবাক অবক্ষয় | শিক্ষামূলক রম্য গল্প | চার পর্ব



 হাস্যরসাত্মক এই গল্পে রয়েছে সমকালীন বাস্তবতা

প্রতিটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য এটি অবশ্যপাঠ্য

পর্ব-১
▬▬▬▬

তখন সেপ্টেম্বর। কলেজে এলেন জামান স্যার। পুরো নাম- 'চৌধুরী আশফাক জামান'। ব্রত, পেশা কিংবা নেশা হিশেবে নয়; শিক্ষতাকে তিনি নিয়েছিলেন অনেকটা 'তামাশা' হিশেবে। এই জামান স্যারকে বাচ্চারা ডাকতো 'কামান স্যার' বলে। রোজ ভোরে ওয়ান টাইম রেজার দিয়ে 'দাড়ি কামান' বলে বাচ্চারা তার এ নাম রাখেনি।

নামের পেছনে ছিল ভিন্ন কারণ।

গত প্রিটেস্ট পরীক্ষা চলাকালে তিনি ক্লাসে ঢুকে মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরা অন করে ফেসবুক লাইভে এলেন। বলতে লাগলেন, "হ্যাললো বউন্ধুরা, আমি জামান। এখন আছি পরীক্ষার হলে। আপনারা দেখুন- কীভাবে এ কলেজের বাচ্চারা নকলমুক্ত নয়; বরং নকলযুক্তভাবে আরামে, আয়েশে, কেউ কেউ ঘুমিয়ে কিংবা নেচে-গেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে..."
এক ছাত্র মৃদু শব্দে বলল,
"জামান স্যার,
দয়াকরে মোবাইলটা
নামান স্যার।"
এদিকে ফেসবুক লাইভে যখন মোবাইলটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পুরো শ্রেণিকক্ষটা কাভার করছিলেন জামান স্যার, তখন হঠাৎ সজলের দিকে চোখ পড়ল ওনার। সজল বাম হাঁটুর ওপরে ফোন রেখে নেট গেটে কিছু সিনোনিম খোঁজার চেষ্টা করছিল। সেটা দেখে- সজলের নাক বরাবর সজোরে ন'শো টাকা দামের ওয়ালটন মোবাইলসেটটা ছুড়ে মারলেন জামান স্যার। কপাল থেকে রক্ত ঝরছিল সজলের। ওই ঘটনার পর থেকে  'জামান স্যার' বাচ্চাদের কাছে হয়ে গেলেন 'কামান স্যার'। বাচ্চারা তাঁকে নিয়ে ছন্দও বানিয়েছে কিছু-
"ও কামান স্যার!
বাড়াবাড়ি
কমান স্যার।

ও জামান স্যার
টাকা কড়ি
জমান স্যার।"

জামান স্যার বরিশালের ছেলে। তাই হয়তো একটু সাহসী। সেদিন বাতেনের টি-স্টলে 'কালো-সরু' একটি সিগারেট ধরিয়ে বাইরে তাকালেন ওনি, দেখতে পেলেন- বেঞ্চিতে বসে এই কলেজেরই এক ছাত্র, নাম তমাল, 'শাদা-সরু' একটি সিগারেট ধরিয়ে আয়েশ করে টানছে। বাচ্চাটির সিগারেট টানার স্টাইল অসাধারণ। লম্বা টান দিয়ে বুকের ভেতর ধোঁয়া নেয়। তারপর চায়ের কাপে চুমুক দেয় রাজার ভঙ্গিতে। ডান পা বাম পায়ের ওপরে রেখে সারা গা দুলুনি দেয়। বিড়ির ধোঁয়া চায়ের কড়া লিকারের সাথে পেটের ভেতরে গিয়ে মিশে যায়। ধোঁয়া আর বাইরে বেরোয় না।

মাথায় রক্ত চলে এলো জামান স্যারের। নিজের সিগারেটে সজোরে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বাইরে বেরুলেন তিনি। ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারলেন ছাত্রটির গালে। বাম হাতে থাকা সিগারেটের পশ্চাতদেশ ছিটকে পড়ল দূরে। চায়ের কাপ ভাঙার রিনিঝিনি শব্দ শোনা গেল অনেকটা দূর থেকেও। এক ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইতে এসে কেন চা খেয়ে চলে গেল- বোঝা গেল না।

জামান স্যারকে দেখে বাচ্চারা ভয় পায়। কিন্তু এতটুকু শ্রদ্ধা করে না তাকে। শ্রদ্ধা না করার কিছু কারণ যে নেই- তা কিন্তু নয়। ওনি নিজে যা করেন, তাই করতে দিতে চান না ওনার শিক্ষার্থীদের।

ডান হাতে বিশাল মোটা কালো ফিতের ঘড়ি, অন্য হাতে দুটো রুপোর মোটা বালা পরেন জামান স্যার। চুলও কাঁধ পর্যন্ত লম্বা। বেদম টাইট জিন্সের সাথে গোল-গলা কালো কুচকুচে টি-শার্ট পরে কলেজে আসেন তিনি। প্যান্ট বেশি টাইট হওয়ার কারণে দু পায়ের ঠিক মাঝ বরাবর একটু বিচ্ছিরি রকমের উঁচু হয়ে থাকে। সেটা নিয়ে কমনরুমে ছাত্রীরা হাসাহাসি করে। এই যেমন, ফেন্সি সেদিন রুম্পাকে বলছিল, "জামান স্যারের 'কামান' দেখেছিস? মাঝেমাঝে তো 'হিসু' করার পর প্যান্টের জিপারও লাগায় না। লুচ্চা একটা! ছাত্রীদের দিকে নিজেই হা-করে তাকিয়ে থাকে। আর ক্লাসে ছেলেদেরকে চিল্লায়ে বলে 'হারামজাদারা, মাইয়াগো দিকে তাকাইয়া থাকতে থাকতে তোদের চোখ ঘোলা করে ফেলেছিস'।"

সেদিন কলেজের গেটে জিন্স- টি-শার্ট পরে নিজেই দাঁড়িয়ে আছেন তিনি, অথচ ছেলেদেরকে জিন্স পরার কারণে থাপড়িয়ে গেট থেকে বের করে দিচ্ছিলেন। একটা ছেলে তো বলেই ফেলল, "স্যার, আপনার পরনে কী? আপনিও তো জিন্স পরেন। আমরা পরলেই দোষ।" জামান স্যার যেন 'কামান' খুঁজতে লাগলেন। চেচিয়ে বললেন, "এই, এইটা কে রে?"
ছাত্রটি দৌড়ে পালাল। আর ছেলেটি মনে মনে বলল,
"আমাদের জামান স্যার
হাতে যেন 'কামান' তার।
পরেন টি-শার্ট, আর জিন্স
মানুষ তো নয়; স্যার একটা জিনিস।

জামান স্যার,
বাড়াবাড়ি
জারিজুরি
কড়াকড়ি
অকারণে ধরাধরি
এইবার থামান স্যার।"

জামান স্যারের চারিত্রিক গুণাবলি  দুধে ধোঁয়া, ছাকনিতে ছাকা তুলসি পাতার মতো নয়। এক সুন্দরী ছাত্রীর সাথে ফেসবুকে সতেরো দিন চ্যাটিংয়ের পর মেসেজ করেছেন তিনি, "আমাকে আর 'স্যার' নয় 'ভাইয়া' বলে ডাকবা। 'স্যার ট্যার' শুনতে ভাল্লাগেনা।" ছাত্রীটির নাম মল্লিকা মলি। বন্ধুরা খ্যাপায় 'মরলি ক্যা মলি' বলে। মল্লিকার প্রেমিক সংখ্যা অর্ধ ডজনের কম হবে না। কলেজের সবচেয়ে উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রটি যার নাম 'কোপা কামাল' সেও মল্লিকার প্রেমিক। অথচ, এই মেয়েটির সাথেই কিনা জামান স্যারও চ্যাট করেন। হায় রে কলিকাল!

পর্ব-২
▬▬▬▬
                              
তখন এইচএসসি বোর্ড পরীক্ষা চলছিল।

কেন্দ্রে প্রেবেশের আগে কলেজের বাইরে থাকা পুকুরপাড়ে কয়েকজন ছেলেমেয়ের জটলা দেখতে পেলেন জামান স্যার। তাদের ফিসফিস শব্দ দূর থেকেও শোনা যাচ্ছিল। একজন বলছে, "আধাঘণ্টা আগে হোয়াটসএপে প্রশ্ন পেলাম। বাঁশতৈল কলেজের সিদ্দিক স্যার প্রশ্নের প্যাকেট হাতে পেয়েই ছবি তুলে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছে।"

পাশের 'মফিজ আলি ডিগ্রি' কলেজের শিক্ষার্থীরা এ কলেজে পরীক্ষা দিচ্ছে। 

সেদিন ইংরেজি পরীক্ষা চলছিল। দিন পরীক্ষা কক্ষে ঢুকেই জামান স্যার বললেন, "তোমরা একজনেরটা আরেকজন অবশ্যই দেখে লিখতে পারো- তাতে আপত্তি নেই। কেননা, আমি এসএসসি, এইচএসসি এমনকি বিসিএস রিটেন পর্যন্ত দেখাদেখি করে লিখে এসেছি। ক্যাডার হওয়ার পর গত ডিপার্টমেন্টাল ইকজামে পাঁচজন মিলে বই সামনে রেখে পরীক্ষা দিয়েছি। তবে বাচ্চারা, শব্দ করা যাবে না কিন্তু। আমি একটু নিরিবিলি ফেসবুক চালাবো।" জামান স্যার এটা বলবেনই না বা কেন- সেদিন পরীক্ষাপূর্ব মিটিংয়ে প্রিন্সিপাল স্যার বলে দিলেন, "এই যে নতুন স্যারেরা, বেশি কড়া গার্ড দিবেন না। পাশের মফিজ আলি কলেজের শিক্ষকরা আমাদের ছাত্রছাত্রীদের সর্বোচ্চ ছাড় দিবে। এমনকি ইংরেজি পরীক্ষার দিন ওই কলেজের দেবাশিষ গুপ্ত স্যার প্রশ্ন সল্যুশন করে ক্লাসে ক্লাসে বলেও দিবেন। আমরাও একইরকমভাবে ওদের হেল্প করব। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৬ শতাংশ, এবার হবে ইনশাআল্লাহ ৯৪ শতাংশ।" সকল শিক্ষক করতালি দিচ্ছিলেন। শুধু জামান স্যার মুখে থাকা চুইংগামটি আর না চিবিয়ে নিচে ফেলে দিলেন।

জামান স্যার ফেসবুকে মন দিতে পারলেন না। প্রথমে হালকা গুঞ্জন, পরে মৃদু শব্দ, তারপর কোলাহল, চেচামেচি। প্রথম বেঞ্চের এক ছাত্র শেষ বেঞ্চের এক ছাত্রকে চেচিয়ে বলছে, "ওই শালা, রি-এরেঞ্জ কোন বোর্ড থেকে এলো রে? বুঝতেছি না!"

স্যার, মোবাইল থেকে চোখ তুললেন। দেখতে পেলেন- কালোমতো মোটাসোটা মাস্তান টাইপের একটা ছেলে নিজের বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে অন্য একটা বেঞ্চের মাঝে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। জামান স্যারের মেজাজ গরম হয়ে গেল। ওই ছাত্রের কাছে গিয়ে বললেন, "এই ব্যাটা, উঠ। খাতা দিয়ে দে।" ছাত্রটি না উঠে বরং পকেট থেকে দু টাকা দামের একটি দেশলাই বের করল। সেটা শব্দ করে রাখল বেঞ্চের ওপর। একটি কাঠি বের করে সেটা দিয়ে স্যারের সামনেই প্রথমে কান, পরে হলদেটে দাঁত খোচাতে লাগল। স্যারের রাগ ও ঘেন্না বেড়ে গেল। টান দিয়ে খাতাটা নিয়ে নিলেন৷ কালোমতো মাস্তান টাইপের ছেলেটা সাপের মতো ফুসফুস করছে। আর হাতে থাকা দেশলাইটা বারবার নাড়াচ্ছে। কুড়ি মিনিট পর খাতাটি ফেরত দিলেন জামান স্যার।

একজনের খাতা হুবহু দেখে আরেকজনকে লেখার সুযোগ দেননি বলে শিক্ষার্থীরা জামান স্যারের ওপর ভীষণ খেপে গিয়েছে। একযোগে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে ঢুকে প্রতিবাদী ছন্দ ছেড়েছে ছাত্ররা,
"এই কলেজের জামান স্যার,
তাকে এবার থামান স্যার।"
ওদিকে বাইরে কিছু পোলাপান শ্লোগান দিচ্ছে-
"জামান স্যারের কল্লা
তুলে নেবো আল্লা..."
'তুলে নেবো আমরা' না বলে 'তুলে নেবো আল্লা' বলার রহস্যটা বোঝা গেল না।
ফিরে যাবার সময় প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে থাকা পুরাতন তিনটে চায়ের কাপ, আর দুটো কাঁচের গেলাশ সজোরে আছড়ে ফেলল একজন। কাঁচ ভাঙার ঝনঝন শব্দে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল প্রিন্সিপাল স্যারের পাশে পুতুলের মতো বসে থাকা 'ধামাধরা' মকবুল স্যারের। আরেকজন ছাত্রকে দেখা গেল 'আম খাওয়ার চাকু' বাম পকেট থেকে বের করে ডান পকেটে ভরল। এই দৃশ্য দেখে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ইকরাম স্যার কেন থরথর করে কাঁপছিলেন- বোঝা গেল না।

রাতের বেলা ঠোঁটে সিগারেট বসিয়ে, কানে হ্যাডফোন লাগিয়ে এফএম রেডিওর ঝাকানাকা গান শুনে চাপমুক্ত হবার চেষ্টা করছিলেন জামান স্যার। সহসাই জানালায় ঢিলের শব্দ। দ্রুম দ্রুম। গান শুনতে ব্যাঘাত ঘটছিল। হ্যাডফোন খুলে বাইরে বেরুলেন তিনি। একটা ঢিল এসে পড়ল জামান স্যারের চান্দিতে। হাত দিয়ে দেখলেন পাহাড়ের মতো ফুলে গেছে চান্দিটা, কিন্তু রক্ত বেরোয়নি। রাগে, ক্ষোভে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি দিতে লাগলেন তিনি। 

সবকিছু জানতে পেরে- পরেরদিন প্রিন্সিপাল স্যার জামান স্যারকে ডেকে টানা পঁয়তাল্লিশ দিনের ছুটি দিয়ে দিলেন। জামান স্যার বাম হাতে থাকা রুপোর বালা দুটো খুলে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিলেন। খুশিতে নাকি রাগে এমনটা করলেন- তা বোঝা মুশকিল। বিড়বিড় করে শুধু বললেন তিনি,
"বাংলাদেশে স্যারের বেশে
আর না
যাব জার্মানি; কামাবো ক্যাশ-মানি;
আর ফিরবো না।
আমি জামান-
যাব জার্মানি, হব 'জার্মান'।"


পর্ব-৩
▬▬▬▬

অফুরন্ত ছুটিতে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটস এপ, কখনো বা ইংলিশ-হিন্দি মুভি দেখে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন জামান স্যার। এরই মাঝে একদিন মল্লিকার ফোন,
"স্যার, আপনি খুব ভালো, খুব রোম্যান্টিক,
আপনার সবই সুন্দর, সব ঠিক।
আপনি হ্যান্ডসাম, আপনি অসাম,
আপনি কিউট, আপনি হিরো,
আপনি সুইট, নন ভীরু।
আপনি চলেন নায়কের মতো,
আপনার কণ্ঠটা গায়কের মতো।
আপনি এই,
আপনি সেই....."
জামান স্যার প্রশংসার বৃষ্টিতে ভিজে আবেগে আপ্লুত হলেন। কোথায় যেন তিনি শুনেছিলেন, "সব চায়ের কাপে চুমুক দিতে নেই"- তবে এখন সেটা মনে রাখা কিংবা মানার সময় নয়।

ছুটির দিনগুলি মল্লিকার সাথে চ্যাটিংয়ের রোম্যান্টিকতায় বেশ ভালোই কাটছিল।


পর্ব-৪
▬▬▬▬

ছুটি শেষ।
কলেজে ফিরলেন জামান স্যার। কলেজের অবস্থা আগের চেয়েও ভয়াবহ। ক্লাসেক্লাসে প্রেম, বেঞ্চেবেঞ্চে প্রেম। পুকুরের ঘাটে প্রেম৷ ক্লাসের বাইরে রেস্টুরেন্ট কিংবা ফাস্টফুডের দোকানেও প্রেম জমে ওঠেছে।

উত্তর দিকের চারতলা ভবনের দোতলায় জামান স্যারের ডিপার্টমেন্ট। তখন বেলা আড়াইটার মতো বাজে। দূর থেকে দেখলেন- মল্লিকার মতো একটি মেয়ে পশ্চিম দিকের তিনতলা বিল্ডিংয়ের দোতলার কক্ষ নম্বর ২০৮- এ ঢুকছে। মল্লিকার সাথে সাক্ষাত করার ইচ্ছে হলো ওনার। টয়লেটে ঢুকে পরপর দুটো বিড়ি খেয়ে মাথাটা ফ্রেশ করে নিলেন ওনি।

২০৮ নম্বর কক্ষের সামনে দুজন ছেলে দাঁড়ানো। দরোজার এপাশ-ওপাশ পায়চারি করছিল তারা৷ স্যারকে দেখে ভীত হলো। স্যার জোরে ধমক লাগালেন, " ঐ তোরা এখানে কী করিস। ভাগ।" ছাত্র দুটি পকেট থেকে মোবাইল বের করে বাটন চাপতে চাপতে চলে গেল।


রুমটির মূল দরোজা বাদে অন্যান্য দরোজা-জানালা বন্ধ। কোনো লাইটিং নেই। বেশ অন্ধকার। দরোজার পাশে থাকা ইলেক্ট্রিসিটির সুইচ অন করলেন জামান স্যার। আলোকিত হয়ে উঠল রুম। স্যার যা দেখলেন- সেটা দেখার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। বজ্রাঘাতের মতো মনে হলো ওনার। সন্ত্রাসী ছেলেটা 'কোপা কামাল' যার নাম তার সাথে আলিঙ্গনরত অবস্থায় সেই মল্লিকা নামের মেয়েটি। তীব্র ঘেন্নাবোধে কোনো শব্দ বেরুলো না স্যারের মুখ থেকে। তারমানে, বাইরে থাকা ওই ছাত্র দুজন এই অপকর্মটা পাহাড়া দিচ্ছিল। হায়! হায়!

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
সেদিন তখন রাত বারোটার ওপরে৷ কলেজের খোলা মাঠে বসে কোপা কামাল, সজল আর কালোমতো মাস্তান টাইপ ছেলেটা সিগারেটের ভেতর গাজা ভরে আয়েশে সুখটান দিচ্ছিল। পাশেই রয়েছে সদ্য কেনা এক বোতল বাংলা মদ। মাতালের মতো ভঙ্গিতে সজল বলল, "শালারা, স্যারের বুক বরাবর প্রথম চাক্কুটা আমি মারুম। মোবাইল দিয়ে আমারে ঢিল মারে৷ শালার পো..."
মাস্তান ছেলেটা মনে হয় এক প্যাগ বেশি খেয়েছে। কণ্ঠে জড়তা।  বলল সে, "শালার পাছায় আমি দেবো বাঁশ। পরীক্ষার সময় আমার খাতা আটকায়ে দিছিল। কত্ত বড়ো সাহস শালা পুতের..."
কোপা কামাল মনে হয় ঘুম থেকে জাগলো। ঘোরের মধ্যে বলতে লাগল সে, "আমি দেবো কোপ। অনেকদিন হয়ে গেল কাউরে কোপাই না। সর্বশেষ বীরপুশিয়ার তমালরে কোপাইছিলাম... চৌদ্দটা কোপ দিছিলাম ঠ্যাঙে... কোপামু রে কোপামু..."

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
সেদিনের ওই ঘটনার পর এক রহস্যময় কারণে জামান স্যারকে আর কলেজে দেখা যায়নি
                                                    
                                                   (সমাপ্ত)
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
গল্পকার: ওয়াদুদ খান
প্রভাষক ইংরেজি বিভাগ, সদরপুর সরকারি কলেজ
লেখকের লেখা সকল উপন্যাস পেতে ডায়াল করুন:
 ০১৬৭৩-৫৯ ৪৫ ৭৯ 
ফ্রি পড়তে চাইলে ভিজিট করুন:
 www.khanwadud.blogspot.com/ 
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬