"সওদি থাইকতে লাক লাক ট্যাকা কামাইছি আর অহন..."
মোবাইলের উপর থেকে চোখ ও আঙুল সরাই আমি। ফেসবুক থেকে মন ও মুখ ফিরিয়ে লোকটির কথায় মন দিই।
জিগ্যেস করি আমি, "কী বললেন?"
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল লোকটি। বলতে থাকল, "সবই কপাল, সবই ভাইগ্য! সওদি থাইকতে বারোশ রিয়াল বেতন অইছিল আমার। আর অহন আমি রিশকা চালাই।"
ব্যস্ত রাস্তায় রিকশা এগিয়ে চলছে। ভোরে দূষণের শহরে বইছে একটু স্বস্তির বাতাস। আমি বলি, "কিন্ত কেন? রিকশা চালান কেন?"
লোকটির কপাল বেয়ে ঘাম চুইয়ে পড়ছে। বয়স তিরিশ নাকি চল্লিশ ঠাহর করা মুশকিল। বলতে থাকল রিকশাঅলা, "সবই পেরেমের লাইগা। বড্ড ভালাবাসছিলাম মাইয়াডারে..."
আমি কৌতূহলী হই। মোবাইলটা পকেটে পুরি। গল্পটি শুনতে মগ্ন হই।
"মাইয়াডার বয়স তহন ষোল্ল কিংবা সতারো। ভালাবাইসা বিয়া করছিলাম। বিয়া কইরাও ভালাবাসছিলাম। পাগলের মতন ভালাবাসতাম। বউয়ের আসি দেকলে অন্তরডা জুরাইয়া যাইতো।"
"তারপর?", জিগ্যেস করি আমি।
" সউদি এক দোকানের ক্যাশিয়ার অইছিলাম। বারোশ রিয়াল বেতন। মা আমার অসুস্ত আছিল। তাই ব্যাক টাকা পাঠাইতাম বউয়ের একাউন্টে..."
কেন জানি দীর্ঘশ্বাস বেরোয় আমার। বলে উঠি, "ওহ!"
লোকটির চোখ তখন ছলছল করছে। "একদিন সর্বস্ব লইয়া পালাইলো হারামজাদি। এক পোলার আত ধইরা আমার ব্যাক টাকা পয়সা লইয়া পলাইয়া গেল। তারপর অনেক ইতিহাস অইয়া গেল। আর অহন? হুম, অহন আমি রিশকা চালাই..."
গল্প ফুরোলো কিনা জানি না। তবে আমার রাস্তা ফুরোলো। ভাড়া দিতে গিয়ে ভালো করে তাকালাম লোকটির ঘর্মাক্ত মুখাবয়বের দিকে। বউ হারানোর বেদন লোকটির বয়স মনে হয় বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকটা৷
লোকটি ভাড়া নিয়ে রিকশা চালিয়ে সামনে এগোতে থাকে। আমি লোকটির প্যাডেল মারা দেখতে থাকি। কত হাজার জনের কত হাজার কাহিনি লেখা আছে এইসব প্যাডেলে।
ওয়াদুদ খান
২৬ জানুয়ারি, ২০১৯
গুলিস্তান, ঢাকা
0 মন্তব্য(গুলি):
Post a Comment