এক সপ্তাহ হয়ে গেল প্রায়-
স্নান সারেনি রাশেদ। তিনদিন তিনরাত কেটে গেল প্যান্ট আর টি-শার্টটাও বদলানো হয়নি ওর। কবিতার মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছে- সেখানে আগের মতো আর ভালোলাগা নেই। হাতটা নিশপিশ করেছে অসংখ্যবার, কিন্তু মোবাইলের উপর থেকে ফিরিয়ে এনেছে। সামিহার সাথে কথোপকথনগুলো বারবার পড়েছে ও। “কেন এভাবে জড়াতে গেলাম? এখন কি ফিরে আসার আর কোনো পথ জানা আছে?”, মনে মনে বলল রাশেদ।
সামিহার প্রোফাইলে চোখ বুলালো ও। মুখটা দেখে মনে হলো পবিত্র। কোনো মিথ্যা সেখানে নেই। অদ্ভুত এক সরলতা মায়াবী মুখটায়। হার মানল রাশেদ। মেসেজ না দিয়ে থাকতে পারল না ও।
“আপনাকে এখন, মিস করছি ভীষণ...............” লিখে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে রাশেদ। না, কোনো উত্তর নেই। শেষমেশ লিখতে বাধ্য হলো, “সামিহা, তোমাকে এখন, রাশেদ মিস করছে ভীষণ..................”
আহ! কী শান্তি!
কী ভালোলাগা চারধারে!
কত রোমাঞ্চ জমা পৃথিবী জুড়ে!
রাশেদের মেসেজটা পেয়ে সামিহা যেন ফিরে পেল নিশ্বাস। সব বিশ্বাস। নাম না জানা এক ভালো লাগায় দুচোখ বেয়ে বৃষ্টি নামল সামিহার। কোনো ভূমিকা করল না ও। সরাসরি বলল, “রাশেদ, তুমি কেমন আছ? খাওয়া দাওয়া হয়েছে এই কয়দিন ঠিকঠাক মতো? তোমাকে একটু কষ্ট দিয়েছি বলে দুঃখিত। এতটুকু কষ্ট না দিলে তো তোমাকে আমি আমার কন্ট্রোলে আনতে পারতাম না।”
সামিহার মেসেজ পেয়ে অবাক হয়ে গেল রাশেদ। মেয়েটা তো ভারি ইমোশনাল। রিপ্লাই দিলো ও-
- আজব! আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আমাদের মধ্যে একটা যৌক্তিক সীমারেখা থাকা দরকার।
- আপনি আবার আমাকে ‘আপনি’ করে বলছেন?
- সামিহা, তোমার কি হয়েছে বলো তো? ফ্রাংকলি বলো।
- আপনি বুঝেন না?
- আমি যেটা বুঝেছি- আমি চাই না সেটা সঠিক হোক।
- কী বুঝেছেন? বলেন।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রাশেদ। কিছু কথা গুছিয়ে আনাও কষ্টকর। তবুও বলতে হয়-
- ইউ আর এডাল্ট মিস সামিহা। দ্যাটস হোয়াই, আইম আসকিং ইউ অ্যা কোয়েসচন ডিরেক্টলি। ক্যান আই আসক?
- ইয়্যাহ, ইউ ক্যান।
- ডু ইউ লাভ মি?
একটুও ভাবল না সামিহা। সরাসরি বলে দিলো, "ইয়েস আই ডু। আই ডু। আই রিয়েলি লাভ ইউ। লাভ ইউ এ লট।"
এতটুকু বলার পর হু হু করে উঠল সামিহার বুক। এত আবেগ কেন মানুষের থাকে? রাশেদ ভেবে পাচ্ছে না কী বলবে। মিথ্যার আকাশেও যে এত তারা জ্বলে তা ওর জানা ছিল না। জিজ্ঞেস করল ও-
- আর ইউ সিরিয়াস? আর ইউ রিয়েলি সিরিয়াস?
- ইয়্যাহ। আইম রিয়েলি সিরিয়াস। আমি জানি না, কবে কখন কীভাবে আপনার প্রেমে পড়ে গেছি।
- কিন্তু কেন? কেন এই ভুলটা করলেন? সামিহা, আমি তো ‘ভালোবাসা’ জনিসটাই বিশ্বাস করি না।
- হোয়াট? ‘ভালোবাসা’ বিশ্বাস করেন না?
- রিয়েলি, আই ডোন্ট বিলিভ ইন লাভ মেকিং। আই হেইট লাভ। আই জাস্ট হেইট লাভ।
- কেন বিশ্বাস করেন না?
- কারণ, ‘ভালোবাসা’ বলতে কিচ্ছু নেই পৃথিবীতে। সব ছলনা। আর মিথ্যার বেসাতি। কবিদের অলীক কল্পনা। কোনোদিন ‘ভালোবাসা’ ছিল না। এখনো নেই। ইভেন, দেয়ার ইজ নো লাভ বিটুইন ইউ অ্যান্ড মি। ইউ হ্যাভ বিন ইমোশনাল। দ্যাটস হোয়াই, ইউ থট ইউ লাভড মি। একচ্যুয়েলি, ইউ ডোন্ট লাভ মি।
- না, আমি আপনাকে ভালোবাসি।
- হাসালেন। আচ্ছা, আপনি কি আমাকে দেখেছেন?
- না। তবে কল্পনায় দেখেছি।
- প্রোবলেম তো ওখানেই। উই শুড বি রিয়্যালিস্টিক। বাস্তবতা বুঝতে হবে। কবিতা দিয়ে মনের ক্ষুধা মেটে, বাট রিয়েল লাইফ চলে না।
- তাহলে কি কবিতা মিথ্যা?
- ইয়েস মিস সামিহা। কবিতা মিথ্যা। কিন্তু এই মিথ্যার সৌন্দর্য অতুলনীয়। এই মিথ্যায় সচেতনভাবেই ডুবে থাকতে ইচ্ছে করে অনেকেরই।
- কিন্তু কীভাবে এটা হতে পারে? কবিতার ভাষাগুলো এত ভালো লাগে, সেখানে মিথ্যা কীভাবে থাকে? আমার মাথাটা কাজ করছে না।
- আপনাকে বুঝাচ্ছি। এই কবিতাটা শুনেন-
“হাজার বছর ধরে আমি আমি পথ হাঁটিতেছি
পৃথিবীর পথে ,
সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে
মালয়-সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি...............”
দেখুন কবিতাটা মিথ্যায় ভরা। একজন মানুষ কি হাজার বছর হাঁটতে পারবে কখনো?
আবার মহাদেব সাহার এই কবিতাংশটুকু দেখুন,
“এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না
একবার তোমাকে দেখতে পাবো
এই নিশ্চয়তাটুকু পেলে-
বিদ্যাসাগরের মতো আমিও সাঁতরে পার হবো
ভরা দামোদর
কয়েক হাজার বার পাড়ি দেবো
ইংলিশ চ্যানেল;
তোমাকে একটিবার দেখতে পাবো
এটুকু ভরসা পেলে
অনায়াসে ডিঙাবো এই কারার প্রাচীর..................”
দেখেছেন, প্রত্যেকটা বাক্য মিথ্যা। বাস্তবতার সাথে কি এতটুকু মিল আছে এই কবিতায়?
- রাশেদ ভাইয়া, তাহলে আপনিই বলে দিন- কেন কবিতা ভালো লাগে? মিথ্যা জিনিসটা ভালো লাগবে কেন?
- কারণ, আমাদের অবচেতন মন ওটাই প্রত্যাশা করে। বনলতা জানে তাঁর জন্য জীবনানন্দ হাজার বছর হাঁটবে না, হাঁটতে পারবে না। কিন্তু হাঁটার ইচ্ছে যে প্রকাশ করেছে- এটাই বড়ো হয়ে ধরা দেয় প্রেমিকার চোখে।
- কিন্তু ভালোবাসা কি আসলেই নেই? সবই কি কেবল কল্পনা?
- হ্যা তাই। অন্তত আমার এটাই মনে হয়। ওকে সামিহা, আপনি স্টাডি করেন। পরে কথা বলি।
- আমাকে কি ‘তুমি’ করে বলবেন না? নাকি বলা বারণ?
হাসলো রাশেদ। উত্তরে বলল, “কেন বলা যাবে না? অবশ্যই বলা যাবে। তুমি ভালোবাসার দরজায় তালা মারো। চাবিটা ফেলে দাও অচেনা সাগরে। কী দরকার ফাও ফাও ভালোবাসার? আর কষ্ট পাওয়ার?”
রাশেদের ‘তুমি’ সম্বোধনে তবুও কি যেন কি আছে? সামিহার আকাশটা এখনো নীল নীল লাগে!
(উপন্যাস: সবই কি মিথ্যা ছিল?
কিস্তি- ১৫)
পিডিএফ ফাইলে প্রকাশিত সম্পূর্ণ উপন্যাসটি ডাউনলোড করে পড়তে-
ক্লিক করুন এখানে...
ওয়াদুদ খান
সদরপুর, ফরিদপুর
১৪ জানুয়ারি, ২০১৬
স্নান সারেনি রাশেদ। তিনদিন তিনরাত কেটে গেল প্যান্ট আর টি-শার্টটাও বদলানো হয়নি ওর। কবিতার মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছে- সেখানে আগের মতো আর ভালোলাগা নেই। হাতটা নিশপিশ করেছে অসংখ্যবার, কিন্তু মোবাইলের উপর থেকে ফিরিয়ে এনেছে। সামিহার সাথে কথোপকথনগুলো বারবার পড়েছে ও। “কেন এভাবে জড়াতে গেলাম? এখন কি ফিরে আসার আর কোনো পথ জানা আছে?”, মনে মনে বলল রাশেদ।
সামিহার প্রোফাইলে চোখ বুলালো ও। মুখটা দেখে মনে হলো পবিত্র। কোনো মিথ্যা সেখানে নেই। অদ্ভুত এক সরলতা মায়াবী মুখটায়। হার মানল রাশেদ। মেসেজ না দিয়ে থাকতে পারল না ও।
“আপনাকে এখন, মিস করছি ভীষণ...............” লিখে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে রাশেদ। না, কোনো উত্তর নেই। শেষমেশ লিখতে বাধ্য হলো, “সামিহা, তোমাকে এখন, রাশেদ মিস করছে ভীষণ..................”
আহ! কী শান্তি!
কী ভালোলাগা চারধারে!
কত রোমাঞ্চ জমা পৃথিবী জুড়ে!
রাশেদের মেসেজটা পেয়ে সামিহা যেন ফিরে পেল নিশ্বাস। সব বিশ্বাস। নাম না জানা এক ভালো লাগায় দুচোখ বেয়ে বৃষ্টি নামল সামিহার। কোনো ভূমিকা করল না ও। সরাসরি বলল, “রাশেদ, তুমি কেমন আছ? খাওয়া দাওয়া হয়েছে এই কয়দিন ঠিকঠাক মতো? তোমাকে একটু কষ্ট দিয়েছি বলে দুঃখিত। এতটুকু কষ্ট না দিলে তো তোমাকে আমি আমার কন্ট্রোলে আনতে পারতাম না।”
নিঃসঙ্গ মিথ্যুক রাশেদ |
সামিহার মেসেজ পেয়ে অবাক হয়ে গেল রাশেদ। মেয়েটা তো ভারি ইমোশনাল। রিপ্লাই দিলো ও-
- আজব! আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আমাদের মধ্যে একটা যৌক্তিক সীমারেখা থাকা দরকার।
- আপনি আবার আমাকে ‘আপনি’ করে বলছেন?
- সামিহা, তোমার কি হয়েছে বলো তো? ফ্রাংকলি বলো।
- আপনি বুঝেন না?
- আমি যেটা বুঝেছি- আমি চাই না সেটা সঠিক হোক।
- কী বুঝেছেন? বলেন।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রাশেদ। কিছু কথা গুছিয়ে আনাও কষ্টকর। তবুও বলতে হয়-
- ইউ আর এডাল্ট মিস সামিহা। দ্যাটস হোয়াই, আইম আসকিং ইউ অ্যা কোয়েসচন ডিরেক্টলি। ক্যান আই আসক?
- ইয়্যাহ, ইউ ক্যান।
- ডু ইউ লাভ মি?
একটুও ভাবল না সামিহা। সরাসরি বলে দিলো, "ইয়েস আই ডু। আই ডু। আই রিয়েলি লাভ ইউ। লাভ ইউ এ লট।"
এতটুকু বলার পর হু হু করে উঠল সামিহার বুক। এত আবেগ কেন মানুষের থাকে? রাশেদ ভেবে পাচ্ছে না কী বলবে। মিথ্যার আকাশেও যে এত তারা জ্বলে তা ওর জানা ছিল না। জিজ্ঞেস করল ও-
- আর ইউ সিরিয়াস? আর ইউ রিয়েলি সিরিয়াস?
- ইয়্যাহ। আইম রিয়েলি সিরিয়াস। আমি জানি না, কবে কখন কীভাবে আপনার প্রেমে পড়ে গেছি।
- কিন্তু কেন? কেন এই ভুলটা করলেন? সামিহা, আমি তো ‘ভালোবাসা’ জনিসটাই বিশ্বাস করি না।
- হোয়াট? ‘ভালোবাসা’ বিশ্বাস করেন না?
- রিয়েলি, আই ডোন্ট বিলিভ ইন লাভ মেকিং। আই হেইট লাভ। আই জাস্ট হেইট লাভ।
- কেন বিশ্বাস করেন না?
- কারণ, ‘ভালোবাসা’ বলতে কিচ্ছু নেই পৃথিবীতে। সব ছলনা। আর মিথ্যার বেসাতি। কবিদের অলীক কল্পনা। কোনোদিন ‘ভালোবাসা’ ছিল না। এখনো নেই। ইভেন, দেয়ার ইজ নো লাভ বিটুইন ইউ অ্যান্ড মি। ইউ হ্যাভ বিন ইমোশনাল। দ্যাটস হোয়াই, ইউ থট ইউ লাভড মি। একচ্যুয়েলি, ইউ ডোন্ট লাভ মি।
- না, আমি আপনাকে ভালোবাসি।
- হাসালেন। আচ্ছা, আপনি কি আমাকে দেখেছেন?
- না। তবে কল্পনায় দেখেছি।
- প্রোবলেম তো ওখানেই। উই শুড বি রিয়্যালিস্টিক। বাস্তবতা বুঝতে হবে। কবিতা দিয়ে মনের ক্ষুধা মেটে, বাট রিয়েল লাইফ চলে না।
- তাহলে কি কবিতা মিথ্যা?
- ইয়েস মিস সামিহা। কবিতা মিথ্যা। কিন্তু এই মিথ্যার সৌন্দর্য অতুলনীয়। এই মিথ্যায় সচেতনভাবেই ডুবে থাকতে ইচ্ছে করে অনেকেরই।
- কিন্তু কীভাবে এটা হতে পারে? কবিতার ভাষাগুলো এত ভালো লাগে, সেখানে মিথ্যা কীভাবে থাকে? আমার মাথাটা কাজ করছে না।
- আপনাকে বুঝাচ্ছি। এই কবিতাটা শুনেন-
“হাজার বছর ধরে আমি আমি পথ হাঁটিতেছি
পৃথিবীর পথে ,
সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে
মালয়-সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি...............”
দেখুন কবিতাটা মিথ্যায় ভরা। একজন মানুষ কি হাজার বছর হাঁটতে পারবে কখনো?
আবার মহাদেব সাহার এই কবিতাংশটুকু দেখুন,
“এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না
একবার তোমাকে দেখতে পাবো
এই নিশ্চয়তাটুকু পেলে-
বিদ্যাসাগরের মতো আমিও সাঁতরে পার হবো
ভরা দামোদর
কয়েক হাজার বার পাড়ি দেবো
ইংলিশ চ্যানেল;
তোমাকে একটিবার দেখতে পাবো
এটুকু ভরসা পেলে
অনায়াসে ডিঙাবো এই কারার প্রাচীর..................”
দেখেছেন, প্রত্যেকটা বাক্য মিথ্যা। বাস্তবতার সাথে কি এতটুকু মিল আছে এই কবিতায়?
- রাশেদ ভাইয়া, তাহলে আপনিই বলে দিন- কেন কবিতা ভালো লাগে? মিথ্যা জিনিসটা ভালো লাগবে কেন?
- কারণ, আমাদের অবচেতন মন ওটাই প্রত্যাশা করে। বনলতা জানে তাঁর জন্য জীবনানন্দ হাজার বছর হাঁটবে না, হাঁটতে পারবে না। কিন্তু হাঁটার ইচ্ছে যে প্রকাশ করেছে- এটাই বড়ো হয়ে ধরা দেয় প্রেমিকার চোখে।
- কিন্তু ভালোবাসা কি আসলেই নেই? সবই কি কেবল কল্পনা?
- হ্যা তাই। অন্তত আমার এটাই মনে হয়। ওকে সামিহা, আপনি স্টাডি করেন। পরে কথা বলি।
- আমাকে কি ‘তুমি’ করে বলবেন না? নাকি বলা বারণ?
হাসলো রাশেদ। উত্তরে বলল, “কেন বলা যাবে না? অবশ্যই বলা যাবে। তুমি ভালোবাসার দরজায় তালা মারো। চাবিটা ফেলে দাও অচেনা সাগরে। কী দরকার ফাও ফাও ভালোবাসার? আর কষ্ট পাওয়ার?”
রাশেদের ‘তুমি’ সম্বোধনে তবুও কি যেন কি আছে? সামিহার আকাশটা এখনো নীল নীল লাগে!
(উপন্যাস: সবই কি মিথ্যা ছিল?
কিস্তি- ১৫)
পিডিএফ ফাইলে প্রকাশিত সম্পূর্ণ উপন্যাসটি ডাউনলোড করে পড়তে-
ক্লিক করুন এখানে...
ওয়াদুদ খান
সদরপুর, ফরিদপুর
১৪ জানুয়ারি, ২০১৬
0 মন্তব্য(গুলি):
Post a Comment