বর্তমানে টক অভ দ্যা কান্ট্রি হচ্ছে আওয়ামীলীগের টিকেটে জননন্দিত ক্রিকেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করা। বেশ কয়েক মাস আগে আহম মোস্তফা কামাল এমন একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন- আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন মাশরাফি এবং সাকিব আল হাসান উভয়েই। এই খবর প্রচার হবার পর থেকেই অনলাইন দুনিয়ায় মাশরাফি ও সাকিবকে ঘিরে প্রচুর ট্রল হতে থাকে। মাশরাফি নীরব থাকায় ট্রলের শিকার হন কম। কিন্তু সাকিবের ব্যক্তিগত কিছু আচরণের কারণে অনেক হ্যাটার্স আগেই তৈরি হয়েছিল। তাই ট্রলের শিকার বেশি হন।
যারা ক্রিকেট খেলা বুঝেন, নিয়মিত খেলা দেখেন, কিংবা যারা খেলা দেখেন না, শুধু খেলার খবর রাখেন, অথবা যারা খেলা বুঝেনও না; দেখেনও না; শুধু মাশরাফির নাম জানেন- তারাও নিঃশর্তে, নিঃস্বার্থে ভালোবাসেন মাশরাফিকে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার নিঃসন্দেহে ওই মাশরাফিই। আকরাম, বুলবুল, নান্নু, দুর্জয়, বাশার, পাইলট, আশরাফুলের হাত ধরে এদেশের ক্রিকেট যে এগোয়নি- তা কিন্তু নয়। তবে ক্রিকেটে ভালো যা কিছু অর্জনের গর্জন আমরা করতে পারি তা কিন্তু এই লিজেন্ড ক্যাপটেন মাশরাফির হাত ধরেই। তাই, মাশরাফি যখন ইনজুরিতে পড়ে যায়, ইনজুরিতে পড়ে যাই আমরা মাশরাফি ভক্তরাও।
মাশরাফির ভক্ত এদেশের আপামর জনসাধারণ। এমনকি যে লোকটি আজ সারাটাদিন রিকশা চালিয়ে কুড়েঘরে ফিরল সেও। আওয়ামীলীগ বা জাতীয় পার্টির শুধু নয়; বিএনপি কিংবা জামাতের প্রচুর কট্টর সমর্থক রয়েছে যারা সন্দেহাতীতভাবে ব্যক্তি মাশরাফিকে ভালোবাসে। কাজেই একটি দলের হয়ে মনোনয়ন নেওয়াতে আওয়ামীবিরোধীদের মনের রক্তক্ষরণ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। অনলাইন দুনিয়ায় প্রচারিত ভাষ্য অনুযায়ী- মাশরাফির প্রতি সাধারণের ভালোবাসার নদীতে ভাটা পড়বে। পড়তেও পারে। অন্য সবকিছুর মতো ভালোবাসাও একালে আপেক্ষিক। অনেকের কাছে গাণিতিক ও স্বার্থকেন্দ্রিক।
মাশরাফি কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করবে, সেটি হয়তো তার ভক্তকুল মাথায় আনতে পারেনি।
মাশরাফি চাইলে হয়তো আরও কিছুদিন রাজনীতি থেকে দূরে থেকে সাধারণের অসাধারণ ভালোবাসার জলে সাঁতার কাটতে পারতেন। তাতে মাশরাফির লাভ হলেও; দেশের কী লাভ হতো? আমার এই কথার সাথে বিজ্ঞমহল হয়তো দ্বিমত পোষণ করবেন। করতেই পারেন। তবে আমি ভেবেই বলছি- মাশরাফির মতো ক্লিন ইমেজের সৎ মানূষ রাজনীতিতে নেই বলেই আজ রাজনীতির পুরো আকাশ কলুষিত হয়ে গেছে।
অনেকেই বলছেন, মাশরাফি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ না করে বরং নিজেই একটা দল গঠন করতে পারতেন। এই মুহূর্তে জননেত্রী হাসিনা কিংবা দেশনেত্রী খালেদার তুলনায় মাশরাফির জনপ্রিয়তা বেশি। সেই হিসেবে মাশরাফির নেতৃত্বে নতুন দল গঠন করে তিনশ আসনে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিলে পাকিস্তানের ইমরান খানের মতো মাশরাফিও প্রধানমন্ত্রী হয়ে এক নতুন দিনের সূচনা করতে সক্ষম হতো। কিন্তু আমার মতে, মাশরাফির কাছে এত বেশি আশা করাটা দূরাশা মনে হয়। যে যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক না কেন- আমি মাশরাফির বর্তমান সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। মাশরাফির মতো ক্লিন ইমেজের মানূষগুলো যতবেশি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবে তত বেশি এদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।
তবে অন্য দশজনের মতো আমিও জানতে চাই- বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতে থাকা অন্য কোনো খেলোয়াড় বিএনপি, জামাত কিংবা জাতীয় পাটির্র মনোনয়ন প্রত্যাশী হলে তাঁকে সুযোগ দেয়া হবে কিনা।
ওয়াদুদ খান
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ
সদরপুর সরকারি কলেজ
=============================
0 মন্তব্য(গুলি):
Post a Comment