Showing posts with label উপন্যাস. Show all posts
Showing posts with label উপন্যাস. Show all posts

Wednesday, 3 October 2018

কষ্টকথা সাফল্যগাথা | এক গ্রাম্য যুবকের সফল হওয়ার কাহিনি | উপন্যাস




উপন্যাস: কষ্টকথা সাফল্যগাথা
(পার্ট- ৬)

সেকেন্ড ইয়ারে উঠে একটা টিউশন পেয়ে গেলো স্বপন। শুনে খুব খুশি হয়েছিলো ফাহমি। এক মাস যেতে না যেতেই স্বপন বললো, “ফাহমি, টিউশনটা ছেড়ে দিলাম।”
“কেনো?”, জানতে চাইলো ফাহমি।
- আর বলিস না। মাইয়াটা খুব ফাজিল ছিলো। ক্লাস সেভেনে পড়ে। কিন্তু...
- কিন্তু কী?
- আমাকে অফার করে বসলো।
- অফার! কিভাবে করলো? শুনি।
- তুই তো জানিস, আমি খুব লাজুক টাইপের ছেলেতার মধ্যে গ্রাম থেকে এসেছি শহরে। টিউশনটা খুব দরকার। চুপচাপ পড়াই। কোনোদিকে তাকাই না। মাইয়াটা বলে...
- কী বলে?
- বলে যে- “আপনি কি মাইয়া মানুষ? এতো শরম কেনো আপনার? আচ্ছা, আপনার কি জিএফ নাই?” একথা শুনে আমি তো লজ্জায় শেষ। আমি বললাম, “এই, তুমি কোন ক্লাসে পড়ো? জিএফ মানে কী?” মেয়েটি বললো, “স্যার, আপনি জিএফ মানে জানেন না?” আমি বললাম, “হ্যাঁ। জানি। জিএফ মানে হলো গুড ফ্রেন্ড। ‘জি’তে গুড আর ‘এফ’তে ফ্রেন্ড।”
হাসি পেলো ফাহমির। হাসি চেপে বললো, “তারপর?”  
- তারপর মাইয়াটা হাসি শুরু করলো খিলখিল করে। বলে যে- “স্যার, আপনি কি আঁতেল? নাকি বেতাল?” আমি বললাম, “মানে?” মেয়েটি বললো, “জিএফ মানে গার্ল ফ্রেন্ড। তবে স্যার আপনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে।”
- তুই কী বললি তখন?
- কী বলবো? বললাম, “এই মাইয়া, তুমি আমাকে কী বলতে চাচ্ছো? স্পষ্ট করে বলো।” তারপর মেয়েটি সরাসরি বলে দিলো, “জানেন স্যার, আমাদের ক্লাসের সব মেয়েরই বিএফ আছে। বিএফ মানে কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ড না। বিএফ মানে হলো বয় ফ্রেন্ড।  আমার শুধু বিএফ নাই। বয় ফ্রেন্ড মানে কিন্তু আবার ছেলে বন্ধু না।” আমি জিজ্ঞেস করলাম, “বয় ফ্রেন্ড মানে কী?” মেয়েটি বললো, “বয় ফ্রেন্ড মানে হলো প্রেমিক। বুঝেছেন? এখন বলেন, আপনি কি আমার বিএফ হবেন?”
- তারপর তুই কী বললি? কী বললি মেয়েটাকে?
- বললাম, “আমার খুব হিসি পেয়েছে। টয়লেট কোনদিকে? তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।”
- হা হা হা। পালিয়ে চলে আসলি নাকি?
- হুম। মান সম্মান নিয়ে বেঁচে এসেছি। টিউশনটা ছেড়ে দিলাম। ঢাকা শহরে ছাত্রী পড়ানোর সাথে দেখি প্রেমটা ফ্রি পাওয়া যাচ্ছে।
- ফ্রি প্রেমের অফারটা গ্রহণ করলি না কেনো?
- এতো প্রেম আমি কোথায় রাখবো? জায়গা নাই। আচ্ছা, ফাহমি তোর কী অবস্থা? আর তো আপডেট পেলাম না।
- কালকে একটা ডেটিং আছে।
- ডেটিং? রিয়েলি?
- ডেটিং বলতে ছেলেটাকে দেখতে যাবো। এফবিতে আমাকে প্রপোজ করেছে। আগে দর্শন, পরে ডিসিশন।
- গুড আইডিয়া। কোথায় আসবে ছেলেটা?
- আমাদের কলেজের গেটে। তারপর বেড়াতে যাবো- সোলস পার্কে। ফুচকা খাওয়ার প্লান আছে।
- ঠিক আছে। ডেটিং শুভ হোক। এখন রাখতে হবে। বিজি।
- ওকে। ভালো থাকিস।

এখন রাত দশটার কাছাকাছি।
ঢাকা শহরে রাত শুরু হয় অনেক দেরিতে। হাঁটছে স্বপন। রাতের খাওয়াটা এখনো হয় নি ওর। পকেটে মাত্র কুড়িটা টাকা আছে। দু’টি চিতই পিঠা ধনে পাতা বাটা দিয়ে কিনে খেলো স্বপন। রাতের খাবার হিসেবে মাঝে মাঝেই চিতই পিঠা খায় ও। শেফালি ফোন করে জানিয়েছে ওদের থাকার ঘরের পাঠখড়ির বেড়াটা পরিবর্তন করা দরকার। রিকশা চালিয়ে যা কামায় তা স্বপনের পড়ালেখার পেছনেই খরচ হয়ে যায়। তারপরেও, অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা জমাচ্ছে ও

ফুল বেঁচে বস্তিতে ফিরছে দশ বছর বয়সী বিল্টু। স্বপনের সাথে বেশ ভালোই খাতির ছেলেটার। বিল্টু লেখাপড়া জানে না। তবে আগ্রহ আছে। স্বপন বিল্টুকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, “বিল্টু, তোর মতো আর কয়জন আছে?”
- অনেকেই আছে স্বপন দা? ক্যান?
- লেখাপড়া শিখবি?
- দাদা, লেখাপড়া আমাগো লাইগা না। ঢাকা শহর বড়োলোক পোলাপাইনদের লাইগা
- লেখাপড়া শিখতে তোর ইচ্ছে করে?
- করলে কী লাভ?
- আচ্ছা, তোর মতো আর কতোজন আছে? এমন ফুল বেঁচে?
- অনেকেই আছে স্বপন দা? ক্যান জিগাইতেছেন?
কিছুক্ষণ ভাবলো স্বপন। তারপর বললো, “তোরা লেখাপড়া শিখবি? আমি তোদের শেখাবো। সপ্তাহে তিনদিন রাস্তায় জ্বলে থাকা লাইটের নীচে পাটি বিছিয়ে পড়াবো তোদেরপড়বি?”
উত্তরে বিল্টু বললো, “আপনে আমাগো কাছ থাইকা টাকা লইবেন না? মাগনা পড়াবেন?”
স্বপন বললো, “হুম। মাগনা পড়াবো। পারলে- তোদের বই কেনার টাকাও দিতাম।”
এক জাদুকরী প্রভাব আছে স্বপনের। মানুষকে কাছে টানতে পারে দ্রুত। বিশেষকরে বাচ্চাদের।  

তারপর থেকে বিল্টুদের সপ্তাহে তিনদিন পড়ায় স্বপন। স্বপনের স্কুলে এখন তেরোজন ছাত্র। সবাই “অ আ ই ঈ ক খ গ ঘ ১ ২ ৩ ৪” চিনে ফেলেছে।

এই ব্যস্ত নগরে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভীড়ে আঠারো বছরের এক তরুণ রাস্তার পাশে পাটি বিছিয়ে কাঠের টুলে বসে কিছু টোকাই ছেলেদের পড়াচ্ছে- সেটা যেনো দেখার কেউ নেই।   
এ শহরের যুব সমাজের সকলে যখন ব্যস্ত প্রেমে কিংবা কামে। ইয়াবা কিংবা গাঁজায়।
স্বপন তখন রিকশার প্যাডেলে পা দিয়ে গেয়ে যায়, “আমি হারবো না। হারবো না। হারবো না।”  

হার্ড কপির জন্য ডায়াল করুন:   ০১৭৮৫-৫৬২০৮০ 

Monday, 19 March 2018

ফ্যান্টাসি-১ (একটি বিশুদ্ধ ভালোবাসার গল্প)


কিস্তি-১৭

বিষণ্ণ বিকেল।
জেনির উদাসী মন। 
কীভাবে দেখতে দেখতে পার হয়ে গেলো অনার্সের চারটি বছর। 
কীভাবে কীভাবে যেনো জয়ের সাথে আটকে গিয়েছিলো জেনি। স্মৃতির পাতায় সেটা আজও অম্লান। 

জয়ের সাথে জেনির পরিচয় ফেসবুকের কল্যাণে। 
আতিক ছিলো জেনির ফেসবুক ফ্রেন্ড। 
জয়ের একটা স্ট্যাটাস শেয়ার করেছিলো আতিক। 
তাতে লেখা ছিল:-
মাইয়া শোনো, তুমি কি খুউব হতাশাগ্রস্ত? তোমার বান্ধবীরা রোজ প্রপোজ পাইতাছে বাট তুমি পাইতাছো না। কোনো প্রোব্লেম নাই বালিকা। আমাকে তোমার ফ্রেন্ডলিস্টে অ্যাড করো। 
কথা দিচ্ছি- প্রথম চ্যাটিং-এ তোমাকে প্রপোজ করবো আমি। প্রপোজ করবার মতো সাহস এবং অভ্যাস দুটোই এই সভ্য ছেলের আছে। ফীলিং একা একা আর ভালোলাগে না অ্যাট প্রেমনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
স্ট্যাটাস পড়েই কৌতুহল জাগে জেনির। তাড়াতাড়ি- জয়ের প্রোফাইলে ঢুকে ও। 
ও বাব্বা! 
এতো সুন্দর চেহেরা কোনো ছেলের হয়! 
কী স্মার্ট লুক! 
মায়াবী চোখ। 
কিন্তু ছেলেটা এতো অসভ্য কেনো? নিশ্চিত প্রেমের সেঞ্চুরি করা ওর লক্ষ্য। 
যাক একটু টাইম পাস করে দেখি- কেমন ছেলে ও। 

জয়ের প্রোফাইলের অ্যাবাউটে লেখা ছিলো:-
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি...............
যদিও জানি- নাটোরের বনলতা সেন আমাকে দুদন্ড শান্তি দিবে না।
তবুও, হাঁটিতেছি পথ........................ 
মনে হয়, এই অ্যাবাউট পড়াটাই ওর কাল হয়ে গিয়েছিলো। 

ওদের প্রথম দিককার চ্যাটিং জয় ভুলে গেলেও, জেনি একটুও ভুলেনি। এখনো মনে পড়ে......... 
- হাই, ম্যাম আপনি কি রেডি?
- কথা নেই, বার্তা নেই জিজ্ঞেস করছেন রেডি কিনা? 
- আপনি অ্যাড করেছেন। আমার শর্ত মেনেই নিশ্চয় করেছেন।
- কী শর্ত? কখন দিলেন?
- আজব। আমার স্ট্যাটাসে বলা ছিলো- আমি প্রপোজ করবো। মনে নাই। 
- ওহ! আচ্ছা, আপনার কি সেঞ্চুরি করা লক্ষ্য? কতো রান করেছেন? 
- বুঝতে পারার জন্যে ধন্যবাদ। আপনাকে প্রপোজ করলে বিরাশি রান হয়।  গত রবিবারে পূর্ণ হয়েছে একাশিতম.............. 
- লজ্জা করে না আপনার?
- দেখুন, লজ্জা করবে কেনো? এমনো তো হতে পারে- এ পর্যন্ত আপনি একাশিবার প্রপোজ পেয়েছেন- আমার প্রপোজে আপনার বিরাশিকলা পূর্ণ হবে। 
- বিরাশি কলা? এখানে কলা কোথা থেকে আসলো?
- ষোলোকলা শুনেছেন তো। ষোলোকলা অনেকেরই পূর্ণ হয়। আপনার না হয়- একটু বেশি কলা পূর্ণ হোক। একশ কলা পুর্ণ হোক আপনার। ওকে আপু। রেডি হন। প্রপোজ করছি............ 
- সত্যি সত্যি প্রপোজ করে ফেলবেন? চেনা নেই, জানা নেই......... 
- হুম করবো। 
- ওকে। করেন। 
জেনি এটা মজা করে বলেছিলো। জয়ের উত্তর শুনে সে অবাক না হয়ে পারলো না। 
- আমি আপনাকে প্রপোজ করছি- আপনি কি আমার ফ্রেন্ড হবেন? ফ্রেন্ড? হুম, ফ্রেন্ড হবেন? 

জেনি মনে মনে যা ভেবেছিলো- জয় সেটা বললো না। 
আর জয় তো তার স্ট্যাটাসে লিখেছিলো- সে প্রপোজ করবে। 
প্রেমের প্রপোজ করবে- সেটা তো বলেনি। 
বন্ধুত্বের প্রপোজও যে হতে পারে- জেনির সেটা মাথায়ই ঢুকেনি। 

তারপর থেকে প্রায় চারটা বছর জয়ের কথার বৃষ্টিতে জেনি ভিজে যাচ্ছে অবিরাম। 
জয় এক কথার আকাশ। 
জয়ের আকাশে শুধু কথার মেঘ। আর কথার বৃষ্টি।  
কতো কথা জানে জয়। 
কতো কথা! 

ওয়াদুদ খানের সর্বাধিক পঠিত উপন্যাস "ফ্যান্টাসি-১"... 

সম্পূর্ণ উপন্যাসটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে...
(Click here to Download the full novel)

Sunday, 24 September 2017

রাশেদের সবই কি আসলেই মিথ্যা ছিল?

এক সপ্তাহ হয়ে গেল প্রায়-
স্নান সারেনি রাশেদ। তিনদিন তিনরাত কেটে গেল প্যান্ট আর টি-শার্টটাও বদলানো হয়নি ওর। কবিতার মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছে- সেখানে আগের মতো আর ভালোলাগা নেই। হাতটা নিশপিশ করেছে অসংখ্যবার, কিন্তু মোবাইলের উপর থেকে ফিরিয়ে এনেছে। সামিহার সাথে কথোপকথনগুলো বারবার পড়েছে ও। “কেন এভাবে জড়াতে গেলাম? এখন কি ফিরে আসার আর কোনো পথ জানা আছে?”, মনে মনে বলল রাশেদ।

সামিহার প্রোফাইলে চোখ বুলালো ও। মুখটা দেখে মনে হলো পবিত্র। কোনো মিথ্যা সেখানে নেই। অদ্ভুত এক সরলতা মায়াবী মুখটায়। হার মানল রাশেদ। মেসেজ না দিয়ে থাকতে পারল না ও।

“আপনাকে এখন, মিস করছি ভীষণ...............” লিখে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে রাশেদ। না, কোনো উত্তর নেই। শেষমেশ লিখতে বাধ্য হলো, “সামিহা, তোমাকে এখন, রাশেদ মিস করছে ভীষণ..................”

আহ! কী শান্তি!
কী ভালোলাগা চারধারে!
কত রোমাঞ্চ জমা পৃথিবী জুড়ে!
রাশেদের মেসেজটা পেয়ে সামিহা যেন ফিরে পেল নিশ্বাস। সব বিশ্বাস। নাম না জানা এক ভালো লাগায় দুচোখ বেয়ে বৃষ্টি নামল সামিহার। কোনো ভূমিকা করল না ও। সরাসরি বলল, “রাশেদ, তুমি কেমন আছ? খাওয়া দাওয়া হয়েছে এই কয়দিন ঠিকঠাক মতো? তোমাকে একটু কষ্ট দিয়েছি বলে দুঃখিত। এতটুকু কষ্ট না দিলে তো তোমাকে আমি আমার কন্ট্রোলে আনতে পারতাম না।”

নিঃসঙ্গ মিথ্যুক রাশেদ 

সামিহার মেসেজ পেয়ে অবাক হয়ে গেল রাশেদ। মেয়েটা তো ভারি ইমোশনাল। রিপ্লাই দিলো ও-
- আজব! আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আমাদের মধ্যে একটা যৌক্তিক সীমারেখা থাকা দরকার।
- আপনি আবার আমাকে ‘আপনি’ করে বলছেন?
- সামিহা, তোমার কি হয়েছে বলো তো? ফ্রাংকলি বলো।
- আপনি বুঝেন না?
- আমি যেটা বুঝেছি- আমি চাই না সেটা সঠিক হোক।
- কী বুঝেছেন? বলেন।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রাশেদ। কিছু কথা গুছিয়ে আনাও কষ্টকর। তবুও বলতে হয়-
- ইউ আর এডাল্ট মিস সামিহা। দ্যাটস হোয়াই, আইম আসকিং ইউ অ্যা কোয়েসচন ডিরেক্টলি। ক্যান আই আসক?
- ইয়্যাহ, ইউ ক্যান।
- ডু ইউ লাভ মি?
একটুও ভাবল না সামিহা। সরাসরি বলে দিলো, "ইয়েস আই ডু। আই ডু। আই রিয়েলি লাভ ইউ। লাভ ইউ এ লট।"
এতটুকু বলার পর হু হু করে উঠল সামিহার বুক। এত আবেগ কেন মানুষের থাকে? রাশেদ ভেবে পাচ্ছে না কী বলবে। মিথ্যার আকাশেও যে এত তারা জ্বলে তা ওর জানা ছিল না। জিজ্ঞেস করল ও-
- আর ইউ সিরিয়াস? আর ইউ রিয়েলি সিরিয়াস?
- ইয়্যাহ। আইম রিয়েলি সিরিয়াস। আমি জানি না, কবে কখন কীভাবে আপনার প্রেমে পড়ে গেছি।
- কিন্তু কেন? কেন এই ভুলটা করলেন? সামিহা, আমি তো ‘ভালোবাসা’ জনিসটাই বিশ্বাস করি না।
- হোয়াট? ‘ভালোবাসা’ বিশ্বাস করেন না?
- রিয়েলি, আই ডোন্ট বিলিভ ইন লাভ মেকিং। আই হেইট লাভ। আই জাস্ট হেইট লাভ।
- কেন বিশ্বাস করেন না?
- কারণ, ‘ভালোবাসা’ বলতে কিচ্ছু নেই পৃথিবীতে। সব ছলনা। আর মিথ্যার বেসাতি। কবিদের অলীক কল্পনা। কোনোদিন ‘ভালোবাসা’ ছিল না। এখনো নেই। ইভেন, দেয়ার ইজ নো লাভ বিটুইন ইউ অ্যান্ড মি। ইউ হ্যাভ বিন ইমোশনাল। দ্যাটস হোয়াই, ইউ থট ইউ লাভড মি। একচ্যুয়েলি, ইউ ডোন্ট লাভ মি।
- না, আমি আপনাকে ভালোবাসি।
- হাসালেন। আচ্ছা, আপনি কি আমাকে দেখেছেন?
- না। তবে কল্পনায় দেখেছি।
- প্রোবলেম তো ওখানেই। উই শুড বি রিয়্যালিস্টিক। বাস্তবতা বুঝতে হবে। কবিতা দিয়ে মনের ক্ষুধা মেটে, বাট রিয়েল লাইফ চলে না।
- তাহলে কি কবিতা মিথ্যা?
- ইয়েস মিস সামিহা। কবিতা মিথ্যা। কিন্তু এই মিথ্যার সৌন্দর্য অতুলনীয়। এই মিথ্যায় সচেতনভাবেই ডুবে থাকতে ইচ্ছে করে অনেকেরই।
- কিন্তু কীভাবে এটা হতে পারে? কবিতার ভাষাগুলো এত ভালো লাগে, সেখানে মিথ্যা কীভাবে থাকে? আমার মাথাটা কাজ করছে না।
- আপনাকে বুঝাচ্ছি। এই কবিতাটা শুনেন-
“হাজার বছর ধরে আমি আমি পথ হাঁটিতেছি
পৃথিবীর পথে ,
সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে
মালয়-সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি...............”
দেখুন কবিতাটা মিথ্যায় ভরা। একজন মানুষ কি হাজার বছর হাঁটতে পারবে কখনো?
আবার মহাদেব সাহার এই কবিতাংশটুকু দেখুন,
“এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না
একবার তোমাকে দেখতে পাবো
এই নিশ্চয়তাটুকু পেলে-
বিদ্যাসাগরের মতো আমিও সাঁতরে পার হবো
ভরা দামোদর
কয়েক হাজার বার পাড়ি দেবো
ইংলিশ চ্যানেল;
তোমাকে একটিবার দেখতে পাবো
এটুকু ভরসা পেলে
অনায়াসে ডিঙাবো এই কারার প্রাচীর..................”
দেখেছেন, প্রত্যেকটা বাক্য মিথ্যা। বাস্তবতার সাথে কি এতটুকু মিল আছে এই কবিতায়?
- রাশেদ ভাইয়া, তাহলে আপনিই বলে দিন- কেন কবিতা ভালো লাগে? মিথ্যা জিনিসটা ভালো লাগবে কেন?
- কারণ, আমাদের অবচেতন মন ওটাই প্রত্যাশা করে। বনলতা জানে তাঁর জন্য জীবনানন্দ হাজার বছর হাঁটবে না, হাঁটতে পারবে না। কিন্তু হাঁটার ইচ্ছে যে প্রকাশ করেছে- এটাই বড়ো হয়ে ধরা দেয় প্রেমিকার চোখে।
- কিন্তু ভালোবাসা কি আসলেই নেই? সবই কি কেবল কল্পনা?
- হ্যা তাই। অন্তত আমার এটাই মনে হয়। ওকে সামিহা, আপনি স্টাডি করেন। পরে কথা বলি।
- আমাকে কি ‘তুমি’ করে বলবেন না? নাকি বলা বারণ?
হাসলো রাশেদ। উত্তরে বলল, “কেন বলা যাবে না? অবশ্যই বলা যাবে। তুমি ভালোবাসার দরজায় তালা মারো। চাবিটা ফেলে দাও অচেনা সাগরে। কী দরকার ফাও ফাও ভালোবাসার? আর কষ্ট পাওয়ার?”

রাশেদের ‘তুমি’ সম্বোধনে তবুও কি যেন কি আছে? সামিহার আকাশটা এখনো নীল নীল লাগে!

(উপন্যাস: সবই কি মিথ্যা ছিল?
কিস্তি- ১৫)

পিডিএফ ফাইলে প্রকাশিত সম্পূর্ণ উপন্যাসটি ডাউনলোড করে পড়তে-
ক্লিক করুন এখানে...

ওয়াদুদ খান
সদরপুর, ফরিদপুর
১৪ জানুয়ারি, ২০১৬