যেখানে গেলে , হৃদয় গলে
জীবনের নানা বাঁকে বড্ড
অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু দিবস-রজনী কাটাতে হয়েছে হাসপাতালে। হয়তো কাটাতে হবে আরও। যতবারই আমি হাসপাতালে গিয়েছি- ততবারই খেয়াল
করেছি- মনের একটা জায়গা ক্রমশ নরম হয়ে আসছে।
হাসপাতালে আসা মানুষগুলোকে বড্ড অসহায় দেখতে লাগে। কেমন জানি চাপা কষ্ট আর উৎকণ্ঠা থাকে হাসপাতালে
আসা লোকগুলোর মাঝে। যে লোকটি দুদিন আগেও
মৃত্যু-ভয়কে পরাজিত করে চলেছে, তাকেও দেখা যায় বিমর্ষ। সময়ের কাছে সে পরাজিতও। সুস্থতা যে কত বড় নিয়ামত- তা হাসপাতলে না ঢুকলে
বোঝা যায় না।
হাসপাতাল থেকে অনেকেই লাশ
হয়ে ফেরে। যাপিত জীবনের সকল বন্ধন ছিন্ন
হয়ে যায় মুহূর্তেই। স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে
চলে যায় হয়তো একমাত্র উপার্জনক্ষম পুরুষলোকটি। ডুকরে ওঠা কান্নার শব্দ শোনা যায় কত!
কত বিচিত্র অথচ কত
মর্মান্তিক দৃশ্যের তৈরি হয় ঐ হাসপাতালে।
এমনও দেখেছি- বাবাকে বাঁচাতে সর্বস্ব বেচে দিয়ে চেষ্টা করছে হতভাগা কোনও এক
সন্তান। তারপরেও টাকার অভাবে চিকিৎসা হয়ে
যায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। একবার দেখলাম-
ডাক্তার এসে বিমর্ষ এক সন্তানকে বলছে, “দেখুন, আপনার বাবাকে আর বাঁচানো যাবে
না। মৃত্যু অবধারিত। হি গোস টু দ্যা পয়েন্ট অভ নো রিটার্ন... কী
করবেন? এভাবে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখলে পার ডে খরচ হবে মিনিমাম ফাইভ থাউজেন্ড টাকা।
আপনি অনুমতি দিলে লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলতে
পারি।”
কী করবে সে?
কী দুঃখ!
কী কষ্ট!
কখনো হঠাৎ করে খবর আসে- যে
মেয়েটি গত ছত্রিশটি সপ্তাহ মা হওয়ার নেশায় সহ্য করে যাচ্ছিল সমস্ত যন্ত্রনা- সেই
মা আর নেই এখন। সদ্যজাত সন্তানকে ধরনীর
আলো দেখিয়ে চিরদিনের নিঃসীম আধারে হারিয়ে গেছে সে। হয়তো এই পৃথিবীতে সন্তানটি বেঁচে থাকবে। কিন্তু মা-হারা এই সন্তানটির একাকীত্ব কিংবা
দুঃখের কথা কি ভাবা যায়?
ইনকিউবেটরে রাখা
শিশুগুলোর মুখের দিকে তাকানো যায় না। এক আকাশ
দুঃখ ঘিরে ধরে নিজেকে। শিশুদের গগন-বিদারী
আর্তনাদ বুকের মধ্যে শেল হয়ে বিঁধে।
হাসপাতালে আসা মানুষগুলো
কিছুটা আস্তিক হয়ে ওঠে। স্বগোষিত নাস্তিকেরাও
মনে হয় গোপনে প্রার্থনায় বসে। চোখ দিয়ে জল
ছাড়ে। এই মানবজন্মের অন্তঃসারশূন্যতা প্রতিনিয়ত
বোঝে আসে তখন। এই বাড়ি-ঘর, আসবাব, স্বজন,
সন্তান- কেউ যেন আপন নয়।
কাউকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছে
করে না বেঁচে থাকা মানুষগুলোর। কাউকে ছেড়ে
যেতে ইচ্ছে করে না মৃত্যুপথযাত্রীর। এক
অদ্ভুত মায়ার বাঁধন। এক অদেখা সুতোর টান। অথচ, নিত্য এই সুতোর বন্ধন ছিন্ন করে ওপারে চলে
যাচ্ছে কাছের মানুষগুলো।
হাসপাতালের একেকটি শয্যায়
কত হাজাররকম কাহিনি জমে থাকে। কত না-দেখা
মানুষের কষ্ট লেগে আছে ওইসব বিছানাতে।
কতলোক মরে ফিরে গেছে বিছানাটি ছেড়ে।
২৩ জানুয়ারি, রাত ৮ টা ৩৯
মি.
সদরপুর, ফরিদপুর
____________________________
পাওয়া যাচ্ছে ওয়াদুদ খানের সাড়া জাগানো উপন্যাস "ফ্যান্টাসি-২ (দিবসে বৃষ্টির ছোঁয়া)"...
কুরিয়ারে পেতে যোগাযোগ করুন:
০১৭৮৫-৫৬২০৮০ - এই নম্বরে