Wednesday, 27 September 2017

পাসের হার যেখানে ১৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ!


শিক্ষিত বেকার তৈরিই কি তবে এ শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্য?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদের অধীন 'খ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল ৩১ হাজার ৩৩৬ জন। ন্যূনতম নম্বর পেতে ব্যর্থ হওয়ায় অকৃতকার্য হয়েছে ২৬ হাজার ১৪৫ জন। (সূত্র: প্রথম আলো) এমন চিত্র শুধু এ বছর নয়, প্রায় প্রতিবছরই দেখা যাচ্ছে।

বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- বেশিরভাগ শিক্ষার্থী খারাপ করেছে বাধ্যতামূলক ইংরেজি অংশে। এমনকি এবার এইচএসসি পরীক্ষা '১৭-এ রেজাল্ট বিপর্যয়ের  পেছনেও দায়ী ওই ইংরেজি।

বাংলাদেশ থেকে সময়ের ধারাবাহিকতায় ইংরেজিভীতি দূর না হয়ে বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দুর্বলতা তৈরি হচ্ছে প্রাইমারি স্কুল থেকেই। এইচএসসি লেভেলের এমন হাজারো শিক্ষার্থী রয়েছে যারা ইংরেজিতে একটি এপ্লিকেশন কিংবা ই-মেইল বানিয়ে লেখার সাহস পায় না।

ইংরেজি ভোক্যাবুল্যারি (vocabulary) কিংবা বাক্য গঠন (sentence building) তারা সঠিকভাবে আয়ত্ত করতে পারেনি।

মজার ব্যাপার হলো- অনার্স সেকেন্ড ইয়ার ও ডিগ্রি থার্ড ইয়ারের শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত বারোটি টেন্স ( Tense) বাংলায় চিনবার উপায়সহ আয়ত্ত করতে পারেনি।

বিষয়টি এমন না যে- অভিভাবক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ ইংরেজির ব্যাপারে উদাসীন। দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক অভিবাবক বছরব্যাপী গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। সারাবছর ব্যাচে কিংবা কোচিংয়ে ইংরেজি চর্চা করছে বাকি শিক্ষার্থীরা। তবুও রেজাল্ট ধ্বস থামছেই না।

তাহলে বিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দ ক্লাসে কিংবা ক্লাসের বাইরে কী শেখাচ্ছেন? শিক্ষার্থীরাই বা কী শিখছে?

কিছুকিছু শিক্ষাবিদ বলছেন- সঠিকভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হলে এসএসসি কিংবা এইচএসসিতে পাশের হার থাকতো সর্বোচ্চ ৪০ (চল্লিশ) শতাংশ।

ছবিটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কোনো কলেজে অনার্স কিংবা পাস কোর্সে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হলে তার জন্য ফার্স্ট ক্লাস মার্কস নিশ্চিত বলা যায়। অভিযোগ রয়েছে ঢালাওভাবে সেখানে ইনকোর্স ও ভাইভার নম্বর প্রদান করা হয়। অনার্স পাশ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা এতে ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। 

২০১৭ সালে ৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারির জন্য ২ হাজার ২৪টি পদের বিপরীতে আবেদন করেছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন । মানহীন উচ্চশিক্ষিত বেকার তৈরি করাই কি তবে এর উদ্দেশ্য?

"কোয়ালিটি এডুকেশন" শব্দদ্বয় একটি তামাশায় পরিণত হয়েছে। মানসম্মত শিক্ষার জন্য প্রয়োজন ভালো মানের শিক্ষক। ভালো মানের শিক্ষকের জন্য প্রয়োজন শিক্ষকতা পেশাকে আরও আকর্ষণীয় করা। কিন্তু সরকার শিক্ষকদের সর্বোচ্চ বঞ্চিত করে রেখেছে। হতাশাগ্রস্ত শিক্ষকদের কাছ থেকে কোয়ালিটি এডুকেশন আশা করা যায় না।

পুরো শিক্ষাব্যবস্থা এক কঠিন দুষ্টচক্রে আবদ্ধ। দিনভর নীতি কথা আওড়িয়ে এর পরিবর্তন করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ হালকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
এর পরিবর্তন কীভাবে হবে- সেটা নিয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

লেখা: ওয়াদুদ খান
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ
সদরপুর সরকারি কলেজ, ফরিদপুর

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment