Saturday, 18 August 2018

কুরবানিও ফ্যাশন এখন | রম্য কবিতা

কু র বা নি

ও য়া দু দ   খা ন

কুরবানি আজ ত্যাগ বোঝায় না
বোঝায় তোলা সেলফি
ট্যাগ করা হয় বন্ধু-স্বজন
দেখ রে গরু কিনছি।

কুরবানি আজ হইছে ফ্যাশন
ফেবুর লাগি স্ট্যাটাস
আমার গরু এত্ত বড়ো
খাচ্ছে ভুষি, খাচ্ছে ঘাস।

কুরবানি আজ লোক দেখানো
সমাজ জুড়ে কম্পিটিশন
তোমার গরু পিচ্চি এত-
আমার গরু মোটকু ভীষণ।

কুরবানিআজ ফ্রিজমুখী
গরিব-দুখির অংশ নাই
বছর জুড়ে মাংস খাওয়া
নিয়ত ছহির বংশ নাই।

কুরবানি আর কুরবানি নাই
হয়ে গেছে ট্র‍্যাডিশান
ঋণ করে তাই- কুরবানি চাই
রাখতে বংশের সম্মান।

আজকে যারা কুরবানিতে
খাচ্ছে গরুর মাংস,
ভুলে গেছে তাদের কাছে
আছে গরিবের অংশ।

কবিতা লেখার তারিখ ও সময় 
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
সকাল: ৮:৫৪

কু র বা নি | ত্যা গ | S A C R I F I C E... (অসামান্য আলোচনা)

কুরবানির গরু (প্রতীকী)

ধনাঢ্য মুসলিমদের উপর আল্লাহ তা'আলা কুরবানিকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন (ওলামায়ে কেরামের এমনটাই অভিমত)। কুরবানি মানেই হচ্ছে ত্যাগ। বাংলায় প্রচলিত, "ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।" এখন, প্রশ্ন জাগতে পারে, "কুবানিতে কী ত্যাগ করছেন ধনাঢ্য মুসলিম? কুরবানি তো ভোগেরই আরেক নাম!"
সত্যি বলতে কি, বর্তমানে ইসলামের প্রকৃত চর্চা নেই বলে, কুরবানিকে আর ত্যাগ বলে মনে হয় না কারও। বরং লোক দেখানো এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলে দৃশ্যমান হয়।

সেলফিস্টিক হাতে নিয়ে গরুর গলা ধরে যখন কোনো মুসলিম তরুণ কিংবা তরুণী ফেসবুকে পিকচার আপলোড দেয়, তখন কুরবানির মর্মবাণীকে যেন উপহাসই করা হয়।
সেলফি তোলার প্রতিযোগিতা চলছে  

কিছু লোক নিজেদেরকে আরও ধনবান প্রমাণের আশায় উচ্চমূল্যে গরু কিনে কৌশলে জাহির করার ধান্দায় থাকে। কুরবানির হাটে কিংবা ঈদের মাঠে এঁদের সরব উপস্থিতি থাকলেও, দিনান্তে মসজিদে একবারও দেখা যায় না। নামাযের কথা বললে, এঁদের 'গ্যাস্ট্রিক, পেট ব্যথা' বেড়ে যায়। কুরবানির গরুর গলায় লাল মালা পরিয়ে মহল্লাতে চক্কর দেয়। কেউ জিজ্ঞেস না করলেও কৌশলে বলে, "দাদা, এক লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা দিয়ে কিনলাম। কেমন হলো?"

মনে রাখতে হবে, কুরবানির কবুলিয়াতের শর্ত হচ্ছে সহীহ নিয়্যত। অন্তরের খবর অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা জানেন। এ বিষয়ে সন্দেহ থাকলে কুরবানি করার দরকার কী?    আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন:-
﴿ لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمۡ لِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٣٧ ﴾ [الحج: ٣٧]
অর্থাৎ, আল্লাহর কাছে ওগুলোর (কুরবানির পশুর) না গোশত পৌঁছে, আর না রক্ত পৌঁছে বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিঁনি ওগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে পারো, এজন্য যে, তিঁনি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন, কাজেই সৎকর্মশীলদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও। [সূরা হাজ্জ:৩৭]।
কুরবানির গোশত আল্লাহ তা'আলার কাছে পৌঁছে না। মানুষের কাছেই পৌঁছাবে। মানুষই খাবে। তাই বলে, যিনি কুরবানি দিচ্ছেন, তিনি একাই সারাবছর খাবেন, আর পাশের গরিব প্রতিবেশী ঈদের দিন গোশতের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরবেন, তা তো নয়। আমার প্রতিবেশীর খোঁজ রাখার নৈতিক দায়িত্ব আমারই। তাকে কেন আমার দ্বারে আসতে হবে? আমি তার দ্বারে গিয়ে দিয়ে আসলে সমস্যা কোথায়? 
আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেন-
﴿ فَكُلُواْ مِنۡهَا وَأَطۡعِمُواْ ٱلۡبَآئِسَ ٱلۡفَقِيرَ ٢٨ ﴾ [الحج: ٢٨]
‘অতঃপর তোমরা তা হতে আহার কর এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।’ [সূরা হাজ্জ:২৮]।
একদম সাদামাটাভাবে বুঝা যাচ্ছে, যিনি কুরবানি দিবেন, তাঁর জন্য গোশত খেতে মোটেই আপত্তি নেই। খেতে যখন মহান আল্লাহ তা'আলা নিষেধ করছেন না, তখন সেটা মেনে নিতে সবাই বাধ্য। কিন্তু, 'দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্তকে আহার করাও'- এই অংশের দিকে অনেকেরই দৃষ্টি থাকে না।
ঈদুল আযহার আগে ফ্রিজের বিক্রি বেড়ে যায়। এর কারণ, ধনাঢ্যরা কুরবানির গোশত সংরক্ষণ করতে চায়। অনেকে গর্ব করে বলেও থাকেন, "আরে, গত কুরবানির গোশত তো এই কুরবানিতেও শেষ হয়নি।" গোশত খাওয়াই যদি উদ্দেশ্য হবে, তবে কুরবানির দিন গরু যবেহ না করে, বছরের যেকোনো দিন করলেই হয়।
যারা বছরজুড়ে কুরবানির গোশত ফ্রিজিং করে খান, তাঁরা নিচের হাদিসটি দলীল হিসেবে পেশ করেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) কুরবানীর গোশত সম্পর্কে বলেছেন-
«كلوا وأطعموا وادخروا»
‘তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।’ [বুখারী, হাদীস নং ৫৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭১]
হাদিসে তো সংরক্ষণের কথা বলা আছে। তাহলে, সংরক্ষণ করলে দোষ কোথায়? দোষ নেই। হাদিসে এটাও আছে,'অন্যকে আহার করাও'- সেদিকে দৃষ্টিপাত করেছেন কি? অন্যকে আহার করানোর পরে যদি সংরক্ষণ করতে চান, তবে না বলার সুযোগ নেই।
কেউ যদি, কুরবানির সবটুকু গোশত গরিব দুঃখীর মাঝে বণ্টন করে দেন, তাতেও কিন্তু ওলামায়ে কেরামের আপত্তি নেই (অবশ্যই ইসলামের দৃষ্টিতে)। এমনকি, ওলামায়ে কেরাম এটাও বলে থাকেন, আপনার প্রতিবেশী যদি বিধর্মী হয়, তাকেও কুরবানির গোশত দিতে পারবেন।
তবে বেশিরভাগ ওলামায়ে কেরাম কুরবানির গোশতকে তিনভাগে বণ্টন করতে পরামর্শ দেন-
১। গরিব-দুঃখীদের জন্য২। নিজের আত্মীয় স্বজনের জন্য৩। নিজের জন্য
আমরা প্রথম দুটি ভুলে গিয়ে, তিন নম্বরটি নিয়েই বেশি মগ্ন থাকি।
হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে এমন নিয়্যতে কুরবানি করার তৌফিক দান করুন, যেটা আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য। লোক দেখানো ইবাদত থেকে হিফাজত করুন।
আমীন!

লেখা ও গবেষণা
ওয়াদুদ খান 
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ
সদরপুর সরকারি কলেজ, ফরিদপুর

তথ্যসূত্র
কুরআন ও হাদিসের দলীলসমুহ ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

Thursday, 16 August 2018

বড়ো ভয়ে বেঁচে আছি | ওয়াদুদ খান

বড়ো ভয়ে বেঁচে আছি


বড়ো ভয়ে বেঁচে আছি

ইদানীং প্রকাশ্যে কাশতে ভয় পাই 
ভয় পাই হাসতেও 
কি হাসিতে, কি কাশিতে 
বিপদের আনাগোনা দেখি
বড়ো ভয়ে বেঁচে আছি। 

জনাকীর্ণ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে 
জোরে কথা বলতে পারি না 
পারি না সবেগে মুতে দিতেও 
কি কথায়, কি মোতায় 
বিপদের আনাগোনা দেখি
বড়ো ভয়ে বেঁচে আছি। 

তোমাদের নষ্ট নগরে প্রকাশ্যে 
গলা ছেড়ে গান গাইতে পারি না 
পারি না বিড়িতে সুখটান দিতেও 
কি গানে, কি টানে 
বিপদের আনাগোনা দেখি
বড়ো ভয়ে বেঁচে আছি। 

দুঃসময়ের কবলে পড়া এই আমি- 
স্বাধীনচেতা কবি হতে পারি না
পারি না ফেসবুকে 
খিলখিল করে হাসা ছবি দিতেও 
কি কবিতে, কি ছবিতে 
বিপদের আনাগোনা দেখি
বড়ো ভয়ে বেঁচে আছি। 

১৬ আগস্ট, ২০১৮
সদরপুর, ফরিদপুর