Sunday, 11 November 2018

দেশের মাশরাফি; দশের মাশরাফি; দলের মাশরাফি


বর্তমানে টক অভ দ্যা কান্ট্রি হচ্ছে আওয়ামীলীগের টিকেটে জননন্দিত ক্রিকেট অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করা। বেশ কয়েক মাস আগে আহম মোস্তফা কামাল এমন একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন- আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন মাশরাফি এবং সাকিব আল হাসান উভয়েই। এই খবর প্রচার হবার পর থেকেই অনলাইন দুনিয়ায় মাশরাফি ও সাকিবকে ঘিরে প্রচুর ট্রল হতে থাকে। মাশরাফি নীরব থাকায় ট্রলের শিকার হন কম। কিন্তু সাকিবের ব্যক্তিগত কিছু আচরণের কারণে অনেক হ্যাটার্স আগেই তৈরি হয়েছিল। তাই ট্রলের শিকার বেশি হন। 

যারা ক্রিকেট খেলা বুঝেন, নিয়মিত খেলা দেখেন, কিংবা যারা খেলা দেখেন না, শুধু খেলার খবর রাখেন, অথবা যারা খেলা বুঝেনও না; দেখেনও না; শুধু মাশরাফির নাম জানেন- তারাও নিঃশর্তে, নিঃস্বার্থে ভালোবাসেন মাশরাফিকে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার নিঃসন্দেহে ওই মাশরাফিই। আকরাম, বুলবুল, নান্নু, দুর্জয়, বাশার, পাইলট, আশরাফুলের হাত ধরে এদেশের ক্রিকেট যে এগোয়নি- তা কিন্তু নয়। তবে ক্রিকেটে ভালো যা কিছু অর্জনের গর্জন আমরা করতে পারি তা কিন্তু এই লিজেন্ড ক্যাপটেন মাশরাফির হাত ধরেই। তাই, মাশরাফি যখন ইনজুরিতে পড়ে যায়, ইনজুরিতে পড়ে যাই আমরা মাশরাফি ভক্তরাও।  

মাশরাফির ভক্ত এদেশের আপামর জনসাধারণ। এমনকি যে লোকটি আজ সারাটাদিন রিকশা চালিয়ে কুড়েঘরে ফিরল সেও। আওয়ামীলীগ বা জাতীয় পার্টির শুধু নয়; বিএনপি কিংবা জামাতের প্রচুর কট্টর সমর্থক রয়েছে যারা সন্দেহাতীতভাবে ব্যক্তি মাশরাফিকে ভালোবাসে। কাজেই একটি দলের হয়ে মনোনয়ন নেওয়াতে আওয়ামীবিরোধীদের মনের রক্তক্ষরণ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। অনলাইন দুনিয়ায় প্রচারিত ভাষ্য অনুযায়ী- মাশরাফির প্রতি সাধারণের ভালোবাসার নদীতে ভাটা পড়বে। পড়তেও পারে। অন্য সবকিছুর মতো ভালোবাসাও একালে আপেক্ষিক। অনেকের কাছে গাণিতিক ও স্বার্থকেন্দ্রিক। 
মাশরাফি কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করবে, সেটি হয়তো তার ভক্তকুল মাথায় আনতে পারেনি।

মাশরাফি চাইলে হয়তো আরও কিছুদিন রাজনীতি থেকে দূরে থেকে সাধারণের অসাধারণ ভালোবাসার জলে সাঁতার কাটতে পারতেন। তাতে মাশরাফির লাভ হলেও; দেশের কী লাভ হতো? আমার এই কথার সাথে বিজ্ঞমহল হয়তো দ্বিমত পোষণ করবেন। করতেই পারেন। তবে আমি ভেবেই বলছি- মাশরাফির মতো ক্লিন ইমেজের সৎ মানূষ রাজনীতিতে নেই বলেই আজ রাজনীতির পুরো আকাশ কলুষিত হয়ে গেছে।  

অনেকেই বলছেন, মাশরাফি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ না করে বরং নিজেই একটা দল গঠন করতে পারতেন। এই মুহূর্তে জননেত্রী হাসিনা কিংবা দেশনেত্রী খালেদার তুলনায় মাশরাফির জনপ্রিয়তা বেশি। সেই হিসেবে মাশরাফির নেতৃত্বে নতুন দল গঠন করে তিনশ আসনে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিলে পাকিস্তানের ইমরান খানের মতো মাশরাফিও প্রধানমন্ত্রী হয়ে এক নতুন দিনের সূচনা করতে সক্ষম হতো। কিন্তু আমার মতে, মাশরাফির কাছে এত বেশি আশা করাটা দূরাশা মনে হয়। যে যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক না কেন- আমি মাশরাফির বর্তমান সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। মাশরাফির মতো ক্লিন ইমেজের মানূষগুলো যতবেশি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবে তত বেশি এদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। 

তবে অন্য দশজনের মতো আমিও জানতে চাই- বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতে থাকা অন্য কোনো খেলোয়াড় বিএনপি, জামাত কিংবা জাতীয় পাটির্র মনোনয়ন প্রত্যাশী হলে তাঁকে সুযোগ দেয়া হবে কিনা। 

ওয়াদুদ খান
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ 
সদরপুর সরকারি কলেজ  
=============================
  


Thursday, 1 November 2018

কেন আমরা পদোন্নতি চাই?


আজ ৩১ অক্টোবর, ২০১৮- শিক্ষা ক্যাডারের ইতিহাসে একটি বিশেষ দিন। কারও কারও জন্য দিনটি প্রাপ্তির, স্মরনীয় ও আশীর্বাদের। কারও কারও জন্য দিনটি হতাশা ও অপ্রাপ্তির। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর শিক্ষা ক্যাডারের সকল টায়ারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। অধ্যাপক পদে ৪০৯ জন, সহযোগী অধ্যাপক পদে ৫৭৪ জন ও সহকারী অধ্যাপক পদে ৬৩৪ জনকে পদোন্নতি দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য বর্তমান সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ড. নূরুল ইসলাম নাহিদ এম.পি ও শিক্ষা সচিব জনাব সোহরাব হোসাইনের অবদান শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাবৃন্দ কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ রাখবে। আশাকরি, সামনের দিনগুলোতে এই পদোন্নতির গতি আরও বাড়বে।
আমি এবং আমার মতো আরও অনেকেই পদোন্নতির সকল ‘শর্ত ও যোগ্যতা’ পূরণপূর্বক পদোন্নতির প্রত্যাশী ছিলাম। গত কয়েকটি মাসের প্রতিটি দিবস ও রজনী কাটিয়েছি উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠায়। কারণ, চাকরি জীবনের প্রথম পদোন্নতি নানাদিক থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার মতো পদোন্নতি যোগ্য কিন্তু বছর শেষে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তার সংখ্যা ৫০০-এর কম হবে না। আমরা ৩১-তম বিসিএসে ‘প্রথম পছন্দ’ দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাষক পদে যোগদান করেছিলাম। ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ সালে আমাদের চাকরির ৫ বছর পূর্তি হয়। সেই হিসেবে আজকে আমাদের চাকরি বয়স প্রায় ৫ বছর ১০ মাস। আমাদের সাথে যোগদানকৃত অন্যান্য ক্যাডেরের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশেষ করে প্রশাসন, পুলিশ, কর ক্যাডার কর্মকর্তাবৃন্দ, ৫ বছর পূর্তিতে প্রায় ৯ মাস আগে ৳-৩৫৫০০/- মূল বেতনে পদোন্নতি পেয়ে ৬ষ্ঠ গ্রেডে উন্নীত হয়েছে। একই সাথে যোগদান করেও শুধু ভিন্ন ক্যাডার হওয়ার কারণে তাদের সাথে আমাদের মূল বেতনের পার্থক্য ৳-৫৯৯০/- এবং বাড়ি ভাড়াসহ এই পার্থক্যের মোট পরিমাণ কমপক্ষে ৳-৮৩৮৬/-। গত ১০ মাসের অধিককাল ধরে তাঁদের থেকে এই পরিমাণ টাকা আমরা কম পাচ্ছি। চক্রবৃদ্ধি বেতন বৃদ্ধির ফলে এই ব্যবধান বছরেরে পর বছর ধরে বাড়তেই থাকবে।
পূর্বে চাকরির ৪ বছর ও ১০ বছর পূর্তিতে সিলেকশন গ্রেড থাকার কল্যাণে একজন কর্মকর্তা ততটা বৈষম্যের শিকার হতো না। ধরা যাক, দুজন কর্মকর্তা একই সাথে ৪ বছর পূর্তিতে সিলেকশন গ্রেড পেল। তারপর প্রথমজন ৫ বছর পূর্তিতে পদোন্নতি পেয়ে বেশি বেতন পেতে থাকল। অন্যজন ৮ বছর পূর্তিতে পদোন্নতি পেল। দ্বিতীয়জন ৩ বছর কম বেতন পেল। কিন্তু ১০ বছর পূর্তিতে সিলেকশন গ্রেডের কল্যাণে আবারও ওই দুজন কর্মকর্তা একই গ্রেডে বেতন পেয়ে সমতায় ফিরতে পারত। ৮ম পে স্কেল ঘোষণার পর আর পিছিয়ে পড়া কর্মকর্তাবৃন্দ সমতায় ফিরতে পারবে না।
আজকের পদোন্নতিতে ৩১-তম বিসিএসের ৬৫ জন পদোন্নতি পেল। তারা সৌভাগ্যবান। তাদের জন্য রইল অন্তরের গভীর থেকে অভিনন্দন ও শুভকামনা। অন্য ক্যাডারের থেকে বঞ্চিত হয়েছি আরও মাস দশেক আগেই। আজ নিজের ক্যাডারেও বিষয় ভিন্নতার কারণে বৈষম্যের শিকার হলাম আমরা। একই সাথে যোগদান করেও পদোন্নতি প্রাপ্ত ৬৫ জনের তুলনায় পদোন্নতি বঞ্চিত প্রায় তিন শতাধিক কর্মকর্তা কমপক্ষে ৳-৮০০০/- বেতন কম পাবে। বছরের পর বছর সেই পার্থক্য কেবল বাড়তেই থাকবে।
আমরা ৪ বছরের মধ্যে বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি, বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ শেষ করে চাকরি স্থায়ীকরণ করেছি। ৫ বছরের মধ্যে সিনিয়রস্কেল পরীক্ষায় পাস করে পদোন্নতি যোগ্য হয়েছি। সকল শর্ত পূরণ করেও আজ আমরা সকল দিক থেকে বঞ্চিত। একই সাথে যোগদান করে আমদের বন্ধুরা আজ আমাদের থেকে ৩ গ্রেড উপরে অবস্থান করছে। আমরা পদোন্নতি বঞ্চিতরা রয়ে গেলাম ৯ম গ্রেডে, পদোন্নতি প্রাপ্তরা এখন ৬ষ্ঠ গ্রেডে।
পদোন্নতি একজন কর্মকর্তার মানসিক প্রশান্তি বাড়ায়, আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ায়, বাড়ায় সামাজিক মর্যাদাও। পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা সঙ্গত কারণেই হতাশায় ভুগে, তাঁদের কর্মস্পৃহা কমে যায়, সামাজিকভাবে অনেকক্ষেত্রে তারা অপমানেরও শিকার হয়।
পদোন্নতির ক্ষেত্রে আগের অনেক বিসিএস ব্যাচ বাকি রয়ে গেছে, এই অযুহাতে নতুনদের পদোন্নতি দেয়া যাবে না- এমন নয়। আগে হয়নি, তাই বলে এখনও হবে না- এটা কেন মানব? অচলায়তন ভাঙতেই হবে। খুলতেই হবে পদোন্নতির জট। অন্যান্য ক্যাডারের মতো যোগ্যতা অর্জন করলেই পদোন্নতি চাই সকল ক্যাডার কর্মকর্তার। ৩২-তম বিসিএসের ৫ বছর পূর্তি হলো ২ দিন আগে। পদোন্নতির শর্ত ও যোগ্যতা পূরণ করে থাকলে তাঁদের পদোন্নতির উদ্যোগ নেওয়া এখন বিবেকের দাবি।
মনে রাখতে হবে- সিলেকশন গ্রেড বাতিলের পর পদোন্নতি ছাড়া গ্রেড উন্নয়ন ও বেতন বৃদ্ধির আর কোনো রাস্তা নেই। দিন শেষে আমরা সকলেই কিন্তু পদ মর্যাদা ও বেতন বৃদ্ধির কাঙাল।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
[বি.দ্র. বেশি বেশি শেয়ার করে আমাদের অভিভাবকদের নজরে আনার চেষ্টা করুন।]
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
দীর্ঘ সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
লেখা- ওয়াদুদ খান
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ
৩১-তম বিসিএস (পদোন্নতি বঞ্চিত)