Tuesday, 23 January 2018

হাসপাতালের একেকটি বিছানায় কত কাহিনি জমে আছে !


যেখানে গেলে , হৃদয় গলে


জীবনের নানা বাঁকে বড্ড অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু দিবস-রজনী কাটাতে হয়েছে হাসপাতালে।  হয়তো কাটাতে হবে আরও।  যতবারই আমি হাসপাতালে গিয়েছি- ততবারই খেয়াল করেছি- মনের একটা জায়গা ক্রমশ নরম হয়ে আসছে।  হাসপাতালে আসা মানুষগুলোকে বড্ড অসহায় দেখতে লাগে।  কেমন জানি চাপা ক‌ষ্ট আর উৎকণ্ঠা থাকে হাসপাতালে আসা লোকগুলোর মাঝে।  যে লোকটি দুদিন আগেও মৃত্যু-ভয়কে পরাজিত করে চলেছে, তাকেও দেখা যায় বিমর্ষ।  সময়ের কাছে সে পরাজিতও।  সুস্থতা যে কত বড় নিয়ামত- তা হাসপাতলে না ঢুকলে বোঝা যায় না।



হাসপাতাল থেকে অনেকেই লাশ হয়ে ফেরে।  যাপিত জীবনের সকল বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায় মুহূর্তেই। স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে চলে যায় হয়তো  একমাত্র উপার্জনক্ষম পুরুষলোকটি।  ডুকরে ওঠা কান্নার শব্দ শোনা যায় কত!

কত বিচিত্র অথচ কত মর্মান্তিক দৃশ্যের তৈরি হয় ঐ হাসপাতালে।  এমনও দেখেছি- বাবাকে বাঁচাতে সর্বস্ব বেচে দিয়ে চেষ্টা করছে হতভাগা কোনও এক সন্তান।  তারপরেও টাকার অভাবে চিকিৎসা হয়ে যায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম।  একবার দেখলাম- ডাক্তার এসে বিমর্ষ এক সন্তানকে বলছে, “দেখুন, আপনার বাবাকে আর বাঁচানো যাবে না।  মৃত্যু অবধারিত।  হি গোস টু দ্যা পয়েন্ট অভ নো রিটার্ন... কী করবেন? এভাবে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখলে পার ডে খরচ হবে মিনিমাম ফাইভ থাউজেন্ড টাকা।  আপনি অনুমতি দিলে লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলতে পারি।”
কী করবে সে?
কী দুঃখ!
কী কষ্ট!

কখনো হঠাৎ করে খবর আসে- যে মেয়েটি গত ছত্রিশটি সপ্তাহ মা হওয়ার নেশায় সহ্য করে যাচ্ছিল সমস্ত যন্ত্রনা- সেই মা আর নেই এখন।  সদ্যজাত সন্তানকে ধরনীর আলো দেখিয়ে চিরদিনের নিঃসীম আধারে হারিয়ে গেছে সে।  হয়তো এই পৃথিবীতে সন্তানটি বেঁচে থাকবে।  কিন্তু মা-হারা এই সন্তানটির একাকীত্ব কিংবা দুঃখের কথা কি ভাবা যায়?

ইনকিউবেটরে রাখা শিশুগুলোর মুখের দিকে তাকানো যায় না।  এক আকাশ দুঃখ ঘিরে ধরে নিজেকে।  শিশুদের গগন-বিদারী আর্তনাদ বুকের মধ্যে শেল হয়ে বিঁধে।  

হাসপাতালে আসা মানুষগুলো কিছুটা আস্তিক হয়ে ওঠে।  স্বগোষিত নাস্তিকেরাও মনে হয় গোপনে প্রার্থনায় বসে।  চোখ দিয়ে জল ছাড়ে।  এই মানবজন্মের অন্তঃসারশূন্যতা প্রতিনিয়ত বোঝে আসে তখন।  এই বাড়ি-ঘর, আসবাব, স্বজন, সন্তান- কেউ যেন আপন নয়। 

কাউকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে না বেঁচে থাকা মানুষগুলোর।  কাউকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না মৃত্যুপথযাত্রীর।  এক অদ্ভুত মায়ার বাঁধন।  এক অদেখা সুতোর টান।  অথচ, নিত্য এই সুতোর বন্ধন ছিন্ন করে ওপারে চলে যাচ্ছে কাছের মানুষগুলো। 

হাসপাতালের একেকটি শয্যায় কত হাজাররকম কাহিনি জমে থাকে।  কত না-দেখা মানুষের কষ্ট লেগে আছে ওইসব বিছানাতে।  কতলোক মরে ফিরে গেছে বিছানাটি ছেড়ে। 

২৩ জানুয়ারি, রাত ৮ টা ৩৯ মি.

সদরপুর, ফরিদপুর   
____________________________
পাওয়া যাচ্ছে ওয়াদুদ খানের সাড়া জাগানো উপন্যাস "ফ্যান্টাসি-২  (দিবসে বৃষ্টির ছোঁয়া)"... 



কুরিয়ারে পেতে যোগাযোগ করুন: 
০১৭৮৫-৫৬২০৮০ - এই নম্বরে     

Monday, 15 January 2018

আমরা শুধু শুনি- নেতাদের অমৃত বাণী!


নীতি নাই, তাতে কি? ঠিক নেতা হয়েছি
তেল-খেল দেখিয়ে এসি রুমে ঢুকেছি।

মোর বাণী শুনে যারা করেছিলি বিশ্বাস
করে যাব ক্ষতি শোন্ থাকতে এ নিশ্বাস।

ভোট পেতে দিন রাতে কত বলি মিছে গো
তবুও দেখি- কত গাধা ঘুরে মোর পিছে গো।

ঘুষ খেয়ে ফুলে যাওয়া এই ছিল ধান্ধা
আমজনতার শুধু সম্বল কান্দা।

আমি নেতা পাতি মারি আরামেতে বারো মাস
তোরা কেন অকারণে সারাক্ষণ চিল্লাস?

জোট হয়ে ভোট দিছো- সামনেও ভোট চাই
ভোট ছাড়া আমার আর চাওয়া-পাওয়া কিছু নাই।

গাধা তোরা নেতা মোরে বানাবি রে যতকাল
আগা-গোড়া সব আমি খেয়ে যাব ততকাল।

সামনেও আছে ভোট আমি নেতা তৈরি
দিয়ে দিও ভোটখানা হয়ো না কো বৈরী।

জনতার পিছে বাঁশ, হাতে দিছি হারিকেন
তবুও বোকা পাবলিক ফের ঠিকই ভোট দেন।

(জীবিত, মৃত কিংবা অর্ধমৃত কারও সাথে মিলে যাওয়া অনিচ্ছাকৃত, অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র)

ওয়াদুদ খান
সদরপুর, ফরিদপুর
১২ জানুয়ারি, ২০

অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৮ তে বেরিয়েছে তরুণ কথাশিল্পী ওয়াদুদ খানের লেখার সম্পূর্ণ কমেডি উপন্যাস "ফ্যান্টাসি-২"



সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করুন:
০১৭৮৫-৫৬২০৮০

Sunday, 31 December 2017

নববর্ষ নিয়ে মজার কবিতা (আসুন, একটু হাসি)

ও গো নববর্ষ

হে নববর্ষ, 
তুমি তো এলেই না বলে
সারা বাংলায় নির্দয় কুয়াশা ঢেলে
Young মেয়ে, young ছেলে 
করবে fun আজ লজ্জা ফেলে


অনেকেই খাবে মদ
হবে বদ
বলবে, "করিনা কিছু care.
ফাটাফাটি Happy NEW YEAR."


কেউ অভাবে করবে শীতে কাঁপাকাঁপি
কেউ ফুর্তিতে করবে দাপাদাপি
কেউ কষ্টে বলবে, "আহারে!"
কেউ উঠবে খুশির পাহাড়ে।


এ কি তবে বর্ষবরণ?
নাকি পোলা-মাইয়াগো 
চরিত্র হরণ? 
  ছাত্রদের বলি- 
পেতে সঠিক পথের দিশা
দাও বাদ সব বাজে নেশা।


ছাড়ো বিড়ি, ছাড়ো গাজা 
করো শুরু দাঁত মাজা 
করো দূর- মুখের গন্ধ 
ধান্দা করো বন্ধ। 

বন্ধ করো এই ফালতু নাচানাচি 
গানের নামে খালি চেচামেচি 
বাদ দিয়ে দাও ফেসবুকিং 
শুরু করো - টেক্সটবুকিং।

ভুলে যাও-
অতীতের ফালতু স্মৃতি, সব গ্লানি
NEW YEAR হোক মজার, very funny.



প্রভাষক, ইংরেজি 
সদরপুর সরকারি কলেজ, ফরিদপুর 
০১৭৮৫-৫৬২০৮০ 

Friday, 22 December 2017

মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলি......


সালটি ১৯৭১। মাসটি ছিল জুলাই।

ভরা বর্ষা। চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে। প্রচন্ড ভয় নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে এসেছিল জয়নাল চাষার ছেলে। অশিক্ষিত বয়স পনের। ওরা গরিব মানুষ। এক বেলা খায় তো আরেক বেলা না খেয়ে থাকে।

বিড়ি ধরিয়ে ছিপ ফেলে মাছের জন্য অপেক্ষা করতে বেশ লাগে ওরসুতোতে টান লাগলে মনটা নেচে ওঠে। হ্যা, একটু আগেই বড়ো একটা বোয়াল বড়শিতে আটকা পড়েছে। কিন্তু, ইদানীং কোথাও কোনো সুখ পায় না সে।
মাঝে মাঝেই নদীতে মরা মাছের বদলে ভেসে আসে মরা লাশ। পঁচা লাশ। দুর্গন্ধযুক্ত লাশ। দেশে নাকি যুদ্ধ চলছে। গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। জয়নালদের গ্রামে এখনো মিলিটারি ঢুকেনি। তবুও গ্রামের বেশিরভাগ লোক বাড়ি ছেড়ে ইন্ডিয়া চলে গেছে।

শিকদার পাড়ার মুকাদ্দেস নাকি মুক্তি বাহিনীতে নাম লিখিয়েছে। সেই অপরাধে জব্বর মুনসি মিলিটারি ডেকে এনে সুন্না বাজারে সবার সম্মুখে তাঁকে জবাই করেছে। জব্বর মুনসি নাকি দেশপ্রেমিক। আর মুকাদ্দেস হচ্ছে দেশদ্রোহী।

মেট্রিক পাস খলিলের কাছে গিয়ে মাঝে মাঝে রেডিওতে খবর শুনে জয়নাল। দেশে নাকি মুক্তিযুদ্ধ চলছে। কিছু তরুণ জীবনবাজি রেখে ঝাপিয়ে পড়েছে দেশকে মুক্ত করার জন্য। জয়নাল সেসবের অর্ধেক বোঝে। অর্ধেক বোঝে না।

বোয়াল মাছটা কাঁধে নিয়ে বড়ো একটা ছনের ঘরে ফিরল জয়নাল। তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামছে। বাড়ির সবাই কাপড়ের পুটলি গোছাচ্ছে। পরেরদিন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইন্ডিয়া চলে যাবে সবাই। পাশের গ্রামে গতকাল রাতে আগুন দেয়া হয়েছে। আজকে এই গ্রাম আক্রান্ত হতে পারে ভয় ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে।

জয়নালের এই ছনের ঘর ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। ঐ নদী, বয়ে চলা জলধারা, ডিঙি নৌকা, বিকেলে ছিপ ফেলে মাছ শিকার- এ সবই তাঁকে আকর্ষণ করে।

জয়নালের দাদি বৃদ্ধ। বয়স আশির কাছাকাছি। হাঁটতে পারেন না। মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন। ইমানের সাথে মৃত্যু নছিবের জন্য রোজ নামাযে প্রার্থনা করেন। তিনি কীভাবে যাবেন ওদের সাথে? রাত বাড়ছে। বাড়ছে আতঙ্কও। অবশেষে পরিবারের সবাই সিদ্ধান্ত নেয়, আজকে রাতটা ওরা পাশের কোনো গ্রামে আশ্রয় নেবে। আগামীকাল সকালে বাবা এসে দাদিকে নিয়ে যাবে। আজ রাতটা দাদি এখানেই থাকুক। বৃদ্ধ মানুষ। তাঁকে কেউ আক্রমণ করার কথা না। মিলিটারিরা নাকি মুসলমান। কলেমা বলতে পারলে নাকি সব মাফ। দাদির চার কলেমা ঠোটস্থ।

ছবি: ইন্টারনেট

ওরা কয়েক কিলোমিটার দূরে একটা পুরাতন পরিত্যাক্ত বাড়িতে আশ্রয় নেয়। দূর থেকে আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পায় ওরা ভয়ে শরীর হিম হয়ে আসে সবার। কোনোরকমে রাতটা কাটায় ওরা। দিনের আলোতে গ্রামটাকে কেমনযেন মরুভূমি মনে হয়। ভূতুড়ে লাগে। কোথাও কেউ নেই। সুনসান নীরবতা।

জয়নালদের সেই বড়ো ছনের ঘরটিও আর নেই এখন। পুড়ে ছাই হয়ে আছে। আর দাদি?

কিছু কয়লা হাতের তালুতে নিয়ে কেঁদে দিলো বাবা।

মা, মা গো, আমি পারলাম না... ক্ষমা করে দিও...

কবি ও কথাশিল্পী
সদরপুর, ফরিদপুর

ওয়াদুদ খানের সাড়া জাগানো তিনটে উপন্যাস কিনতে ডায়াল করুন:
01785-562080 এই নাম্বারে।