Sunday, 10 December 2017

আপনার বাচ্চা কি স্কুলে যায়? এ প্লাস পাবে?

এলোমেলো ভাবনা

বিচিত্র চিন্তা


ছেলের বয়স পাঁচ পেরিয়ে এখন পা রাখল ছয়ে। স্কুলে দেইনি এখনো। এজন্য সমালোচনার অন্ত নেই। অনেকেই বলেন, "আরে, আমার বেবিকে তো ৪২ মাস বয়সেই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে দিয়েছি। আর আপনার বাবুর তো ৬১ মাস চলে.... "

"ভালো স্কুল" বলতে ঠিক কি বোঝায়- আমি আমার জীবনের প্রায় ৩৮৪ মাস অতিবাহিত করেও আজও ঠাহর করতে পারলাম না। ছোট্ট বাচ্চারা যখন পিঠ বাঁকা করে বই নিয়ে স্কুলে যায়, এই দৃশ্য দেখে আমার দীর্ঘশ্বাস বেরোয়। তথাকথিত পড়ালেখার চাপ আমার বড্ড অপছন্দ। "ক্লাসের ফার্স্ট বয়"- মানেই ব্রিলিয়ান্ট- আজও এটা মেনে নিতে পারলাম না।

আমি পাগলের মতো একটা পাঠশালা খুঁজি- যার পাশ দিয়ে বয়ে যাবে ছলাৎ ছলাৎ নদী, সামনে থাকবে অবারিত সবুজ খেলার মাঠ। পড়াশোনা বলতে যেখানে বাচ্চাদের খেলাধুলাই বোঝাবে। পাই না এমন স্কুল আর।

আজ থেকে প্রায় ৩২৮ মাস আগে আমিও স্কুলে গিয়েছিলাম। সবুজ মাঠের পর মাঠ ছিল। ছিল চার পাশে অগ্রাহায়নের ধান।

কতো পার্থক্য আজ। আজকের শিশুদের দিকে তাকালে বড্ড মায়া হয়। বাবা হিসেবে বড্ড অসহায় বোধ করি।

ছবি: ইন্টারনেট 
সরকারেরও এ ব্যাপারে কোনো সুদৃষ্টি নেই। পিইসি কিংবা জেএসসি পরীক্ষা অভিভাবকদের মাঝে এক ইঁদুর-দৌড় তৈরি করেছে। বাচ্চাটাকে এ প্লাস পেতে হবে। এজন্য বছরজুড়ে চলে প্রাইভেট, কোচিং, হোম-টিউটর ইত্যাদি। আবার পরীক্ষার আগে ফাস হওয়া প্রশ্নপত্র পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের সাথে মাঠে নেমে যাচ্ছেন অভিভাবকবৃন্দ। বড্ড হতাশ হই।

আমার ছেলেটাকে পুঁথিগত বিদ্যা নয়, বরং সত্যিকারের কিছু শেখাতে চাই। কিন্তু, তেমন পরিবেশ কি পাব?

সেদিন শুনলাম, প্লে গ্রুপে ভর্তি হতেও নাকি কোচিং করতে হয়। স্কুলে যাবার আগেই কোচিং! কোথায় যাচ্ছে স্বদেশ? প্লে গ্রুপে ভর্তি হতে নাকি ঢাকার স্কুলগুলোতে হাজার বিশেক টাকাও লাগে। মাসিক ফি তো আছেই। লেখাপড়া কেমনযেন পণ্য পণ্য লাগে। গরিব, মধ্যবিত্ত পরিবারের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। 

ছেলেকে স্কুলে দেবার আগে মাথায় হাজারও প্রশ্নেরা ভিড় করছে। উত্তর পাই না।


ওয়াদুদ খান
১১ ডিসেম্বর ২০১৬
সদরপুর, ফরিদপুর

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment