ছবিটি প্রতীকী |
মহল্লায়, পাড়ায়, গ্রামে কিংবা আরও দূরের কোনো ওয়াজ মাহফিলে গেলে- হুজুরদের বয়ানে শুনতে পেতাম। গানের সুরে দরাজ কণ্ঠে বলতেন, "টিভি দেখা হারাম, মিয়ারা। যে ঘরে টিভি থাকে, সেই ঘরে রহমতের ফিরিশতা ঢোকে না।"
যাদের ঘরে টিভি নাই, ভাবতাম তারাই সাচ্চা মুসলমান।
হারাম ঘোষণা দিলেও, এই হুজুরদেরই দেখেছি- লুকিয়ে লুকিয়ে, কখনো বা প্রকাশ্যে টিভি দেখতে।
সেকালে রমযানের তারাবি শেষ করে দৌড়ে টিভি দেখতে গিয়েছি- 'দ্যা সোর্ড অভ টিপু সুলতান' দেখতে। অবাক হয়ে দেখেছি, যে পিচ্চি হুজুরটা খতম তারাবি পড়িয়েছে, সেই হুজুর টুপি খুলে সামনে বসে আছে। আমরা পরস্পর চোখ চাওয়া-চাওয়ি করতাম। ব্যাপার কী?
সত্যি, টিভি দেখা সেকালে হারাম ছিল!
শুক্রবারের রাত্তিরে ইশার নামায কোনোওরকমে শেষ করে 'আলিফ লায়লা' যখন দেখতে যেতাম, দেখতাম যার কাছে আমরা মক্তবে আলিফ, বা, তা, ছা শিখেছি- সেই হুজুরও টিভি সেটের সামনে।
তবুও জুমার নামাযের আগে গানের সুরে দরাজ কণ্ঠে হুজুর বয়ান দিতেন, "টিভি দেখা হারাম, মিয়ারা।" টিভি দেখার মতো এত আরামের জিনিস হারাম কেন- এই প্রশ্ন খালি উঁকি দিত মনে।
একবার এক হুজুর বাসায় ঢুকে চোখ তো ছানাবড়া হয়ে গেল। একি! ২৪ ইঞ্চি কালার টেলিভিশন!
তখন টিভি দেখা সত্যি হারাম ছিল!
মোবাইল সহজলভ্য হওয়ার পর থেকে টিভি দেখা কিঞ্চিৎ হালাল হতে থাকে। 'ইসলামিক টিভি' আর 'পিস টিভি' এদেশে সম্প্রচারের পর টিভি দেখা যেন হারাম থাকেনি আর।
টিভির লাইভ টকশোতে এসে এক হুজুর আরামসে বলে দিলো একদিন, "কে বলেছে টিভি দেখা হারাম, মিয়ারা? টিভি দেখা জায়েজ। সওয়াবের কাম। টিভিতে ওয়াজ নছিহত শোনা বহুত পুণ্যের কাজ।"
হুজুররা ঝাঁকে ঝাঁকে টিভিতে আসতে থাকে। টিভিতে টকশো করা হুজুরদের ওয়াজের রেটও বাড়তে থাকে দেদারসে।
ইদানীং ওয়াজের ভিডিও করে হুজুররা ইউটিউবে আপ্লোড দেন। সাবস্ক্রাইব বাটনে ক্লিক করার জন্য কান্নাকাটি করেন। আমিন লিখলে সওয়াবের গল্প শোনায়। তাদের ভিডিও দেখে নাকি হেদায়েত পেয়েছে অনেক ভ্রষ্ট যুবক।
অথচ, কত অসংখ্য ইমানদার তরুণ ইউটিউবে তাদের ওয়াজ দেখতে গিয়ে ন্যাংটা নাচের খপ্পরে পড়ে যে ইমান হারালো- তাঁর কোনো খোঁজ নেই।
একদা ছবি আঁকা, ছবি তোলা, টিভি দেখা- এসব হারাম ছিল।
এখন সময়ের প্রয়োজনে নাকি সবই জায়েজ ও অবশ্য কর্তব্যও বটে।
আর তাই, যখন কোনো আলেম ইমানের জোশে ফতোয়া দিয়ে বসে, "স্মার্ট ফোন ব্যবহার করা হারাম কিংবা ইউটিউবে বয়ান করাও হারাম।" তখন একালের তরুণ হুজুররা পালটা ফতোয়া দেয়, ওই আলেম পথভ্রষ্ট, ফিতনাবাজ।
একালে টিভি দেখা যেন আর হারামের নয়; বরং বহুত আরামের কাজ!
ওয়াদুদ খান
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
বি.দ্র. কোনো হাক্কানি ওলামায়ে কেরামকে হেয় করা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
Post a Comment