কিন্তু আমার সাথে কে প্রেম করবে? মেয়েদেরকে পটানোর মতো লুক আমার নেই। আবার আমার মানিব্যাগের অবস্থাও করুণ।
আমার উচ্চতা ৫ ফিট ১ ইঞ্চি। গায়ের রঙ এবং ফিটনেসের কারণে বন্ধুরা আমাকে বলতো অভিনেতা 'হাসান মাসুদ'। আর মেয়েরা আড়ালে ডাকতো 'কাইল্যা বাইট্ট্যা' বলে।
আমার মতো কালো, খাটো, আনস্মার্ট ছেলেকে ভালোবাসবে এমন সখিনা টাইপের মেয়ে এই কলেজে নেই। প্রেমের নদীতে সাঁতার এবং হাবুডুবু খাবার জন্যে তবুও অস্থির হয়ে গেলাম।
অবশেষে বুদ্ধি পেলাম দোস্ত সুজনের কাছে। ও দেখতে সুন্দর, স্মার্ট। লম্বাও যথেষ্ট। আমরা ওকে 'লাভার বয়' বলে ডাকতাম। মেয়েরা ওর নাম দিয়েছিল রোমিও। মেয়েদেরকে পটানো এবং ওদের মুখে 'ভালোবাসি' শব্দটাকে ফোটানো ও নিয়েছিল শিল্পের পর্যায়ে ।
সুজনের বুদ্ধিতে নতুন একটা ফেক আইডি খুললাম ফেসবুকে। আমার প্রোফাইলে লাগালাম হ্যান্ডসাম এক ছেলের পিকচার । অনেকগুলো পিকচার কালেক্ট করলাম ছেলেটির- যাতে মাঝে মাঝেই প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করতে পারি। কলেজের নাম দিলাম নটরডেম।
মেয়েদের নাম দেখলেই পাঠাতাম ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট । ছবি না দেখেই কমেন্ট করতাম - অসাম, কিউট, ফাটাফাটি.......ব্লা ব্লা ......
শেষমেশ আমার ফেসবুকের আকাশে জমলো মেঘ। এল প্রেমের বৃষ্টি । দিলাম ডুব। কাটলাম সাঁতার । আহ কী সুন্দর ভালোবাসা!
এখন আর আমি মুমিনের হোটেলের সামনে হা করে দাঁড়িয়ে থাকি না। যাই না মহিলা কলেজের গেটেও ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে মেয়েদের ফোন নাম্বার কালেক্ট করে রাতে কল করার দিন শেষ।আমি থাকি এখন ভদ্র পল্লীতে। চায়ের দোকান কিংবা খেলার মাঠে আমাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।আমি থাকি নেটে । থাকি চ্যাটে ।
|
কলেজ জীবন |
সাবাশ ফেক আইডি।
সাবাশ ফেক প্রেম ।
ছয় মাস চুটিয়ে ফেসবুকের প্রেম সাগরে হাবুডুবু খেয়ে বুঝলাম-,আমার প্রেমিকাও ফেক । যখন ফোনে কথা বলতে চাইলাম, দেখা করতে চাইলাম তখন সে বাধ্য হয়ে সত্যটা স্বীকার করলো-
"দেখুন, আমি আপনার মতো প্রেম পাগল এক ছেলে । অনেক মেয়েকে হাই, হ্যালো করেছি কিন্তু পাত্তা পাইনি । স্টাটাসে, পিকচারে লাইকই পেতাম না । আর এখন 'হাই' লিখে স্টাটাস দিলেও লাইকের বান ছুটে, কমেন্টের বন্যা হয়। সরি ব্রাদার.... "
আর কি বলেছিল 'নীল পরী নীলাঞ্জনা' নামের ছেলেটা- আমার তা মনে নেই।
আমাকে ইদানিং আবার চায়ের দোকান, মুমিনের হোটেল কিংবা ফ্লেক্সিলোডের
দোকানের আশেপাশে নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে ......
ধোকা খেয়ে
বোকা হবার মতো
ছোট্ট খোকা আমি নই...
আমরা নই...
লেখার তারিখ - ১৪ আগস্ট, ২০১৪