Monday, 1 October 2018

স্মার্ট বনলতা সেন | রোম্যান্টিক কবিতা


শোনো হে একালের জীবনানন্দ-
তুমি কি ভেবেছো কিচ্ছু বুঝি না আমি?
হ্যা, আমি জানি-
শুধু আমার জন্যেই তো 
হাজার বছর ধরে তুমি 
পথ হাঁটিতেছ পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে 
নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে। 
অনেক ঘুরেছ তুমি, 
অনেক হেটেছ তুমি। 
তুমি আজ বড্ড ক্লান্ত প্রাণ এক- 
আর নয়......... 
আর নয় একা একা হাটাহাটি।
হে নিঃসঙ্গ নিশাচর কবি 
এই দেখো পাশে আছি আমি। 
চেয়ে দেখো চারদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
দু’দন্ড নয়, অনেক শান্তি দিতে 
একগুচ্ছ গোলাপ হাতে 
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে চেয়ে  আছি  
আমি একালের স্মার্ট বনলতা সেন। 

লেখাঃ ওয়াদুদ খান
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ
সদরপুর সরকারি কলেজ, ফরিদপুর।

Friday, 28 September 2018

আগে টিভি দেখা হারাম ছিল!

ছবিটি প্রতীকী 
তখন টিভি দেখা হারাম ছিল।

মহল্লায়, পাড়ায়, গ্রামে কিংবা আরও দূরের কোনো ওয়াজ মাহফিলে গেলে- হুজুরদের বয়ানে শুনতে পেতাম। গানের সুরে দরাজ কণ্ঠে বলতেন, "টিভি দেখা হারাম, মিয়ারা। যে ঘরে টিভি থাকে, সেই ঘরে রহমতের ফিরিশতা ঢোকে না।"

যাদের ঘরে টিভি নাই, ভাবতাম তারাই সাচ্চা মুসলমান।

হারাম ঘোষণা দিলেও, এই হুজুরদেরই দেখেছি- লুকিয়ে লুকিয়ে, কখনো বা প্রকাশ্যে টিভি দেখতে।

সেকালে রমযানের তারাবি শেষ করে দৌড়ে টিভি দেখতে গিয়েছি- 'দ্যা সোর্ড অভ টিপু সুলতান' দেখতে। অবাক হয়ে দেখেছি, যে পিচ্চি হুজুরটা খতম তারাবি পড়িয়েছে, সেই হুজুর টুপি খুলে সামনে বসে আছে। আমরা পরস্পর চোখ চাওয়া-চাওয়ি করতাম। ব্যাপার কী?

সত্যি, টিভি দেখা সেকালে হারাম ছিল!

শুক্রবারের রাত্তিরে ইশার নামায কোনোওরকমে শেষ করে 'আলিফ লায়লা' যখন দেখতে যেতাম, দেখতাম যার কাছে আমরা মক্তবে আলিফ, বা, তা, ছা শিখেছি- সেই হুজুরও টিভি সেটের সামনে।

তবুও জুমার নামাযের আগে গানের সুরে দরাজ কণ্ঠে হুজুর বয়ান দিতেন, "টিভি দেখা হারাম, মিয়ারা।" টিভি দেখার মতো এত আরামের জিনিস হারাম কেন- এই প্রশ্ন খালি উঁকি দিত মনে।

একবার এক হুজুর বাসায় ঢুকে চোখ তো ছানাবড়া হয়ে গেল। একি! ২৪ ইঞ্চি কালার টেলিভিশন!

তখন টিভি দেখা সত্যি হারাম ছিল!

মোবাইল সহজলভ্য হওয়ার পর থেকে টিভি দেখা কিঞ্চিৎ হালাল হতে থাকে। 'ইসলামিক টিভি' আর 'পিস টিভি' এদেশে সম্প্রচারের পর টিভি দেখা যেন হারাম থাকেনি আর।

টিভির লাইভ টকশোতে এসে এক হুজুর আরামসে বলে দিলো একদিন, "কে বলেছে টিভি দেখা হারাম, মিয়ারা? টিভি দেখা জায়েজ। সওয়াবের কাম। টিভিতে ওয়াজ নছিহত শোনা বহুত পুণ্যের কাজ।"

হুজুররা ঝাঁকে ঝাঁকে টিভিতে আসতে থাকে। টিভিতে টকশো করা হুজুরদের ওয়াজের রেটও বাড়তে থাকে দেদারসে।

ইদানীং ওয়াজের ভিডিও করে হুজুররা ইউটিউবে আপ্লোড দেন। সাবস্ক্রাইব বাটনে ক্লিক করার জন্য কান্নাকাটি করেন। আমিন লিখলে সওয়াবের গল্প শোনায়। তাদের ভিডিও দেখে নাকি হেদায়েত পেয়েছে অনেক ভ্রষ্ট যুবক।

অথচ, কত অসংখ্য ইমানদার তরুণ ইউটিউবে তাদের ওয়াজ দেখতে গিয়ে ন্যাংটা নাচের খপ্পরে পড়ে যে ইমান হারালো- তাঁর কোনো খোঁজ নেই।

একদা ছবি আঁকা, ছবি তোলা, টিভি দেখা- এসব হারাম ছিল।

এখন সময়ের প্রয়োজনে নাকি সবই জায়েজ ও অবশ্য কর্তব্যও বটে।

আর তাই, যখন কোনো আলেম ইমানের জোশে ফতোয়া দিয়ে বসে, "স্মার্ট ফোন ব্যবহার করা হারাম কিংবা ইউটিউবে বয়ান করাও হারাম।" তখন একালের তরুণ হুজুররা পালটা ফতোয়া দেয়, ওই আলেম পথভ্রষ্ট,  ফিতনাবাজ।

একালে টিভি দেখা যেন আর হারামের নয়; বরং বহুত আরামের কাজ!

ওয়াদুদ খান
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮


বি.দ্র. কোনো হাক্কানি ওলামায়ে কেরামকে হেয় করা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়।

Wednesday, 5 September 2018

মেয়েটি অনেক বড়ো হয়ে গেছে | হৃদয় ছোঁয়া ছোটোগল্প


মেয়েটি অনেক বড়ো হয়ে গেছে
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

🔵 মোট চারপর্বের অসাধারণ হৃদয়ছোঁয়া ছোটোগল্প।
🔵 সংগ্রামী প্রতিটি নারীর জন্য এই গল্পটি অবশ্যই পাঠ্য।

(পর্ব-১)
▬▬▬
বন্ধুদের সাথে হৈ-হুল্লোড় করে বাসায় ফিরছিল রুমা। বাসায় ফেরার আগেই বোমা পড়ল রুমার মাথায়। বলে কী সানজিদা- "রুমা, শোন। তোকে আজকে একটা ছেলে দেখতে এসেছে। ইয়া লম্বা। মোটাও মোটামুটি।"

রুমা ক্লাশ এইটে পড়ে। বয়স ১৩ বছর দুই মাস। বড়ো হওয়া কাকে বলে- এখনও ওর কাছে স্পষ্ট নয়। লজ্জায় কাউকে বলতেও পারে না- "আচ্ছা, মেয়েরা বড়ো হয় কীভাবে?"

তবে কোথাও যেন একটা বিশ্রী ব্যাপার ঘটে গেছে- যা তার সম্পূর্ণ অপরিচিত। এইতো মাস দুয়েক আগে ও একা একাই চুইংগাম কিনতে পাশের এক দোকানে গিয়েছিল। বাসায় ফিরতেই মায়ের চিৎকার- "হারামজাদি, কৈ গেছিলি? বাইরে যাইয়া রূপ না দেহাইলে পেটের ভাত হজম হয় না তোর। এখন বড়ো হইছস। বাইরে যাইয়া এতো হাওয়া খাওন যাইবো না।"

চোখে জল চলে এসেছিল রুমার।
অথচ, কতো অসংখ্যবার সে একা একাই ঐ দোকানটাতে গিয়েছে। পাড়ার সব ছেলেদের সাথে ক্রিকেটও খেলতো ও। আজ সব বারণ। ক্রমাগত পৃথিবীটা উড়নার আবরণে ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল ওর।

ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত এক সাথে ফারুক, রুবেল, আবীরদের সাথে প্রাইভেট পড়েছে রুমা। কখনো মনের ভুলেও কিচ্ছু মনে হয়নি। তিনদিন আগে আবীর একটা নোটের জন্যে রুমার কাছে এসেছিল। আবীর খুব ভদ্র ছেলে। নোট দেবার সময় স্টার জলসার একটা সিরিয়াল নিয়ে ওরা দুজন হেসেছিল। কিন্তু কী আশ্চর্যের ব্যাপার! আবীর চলে যাবার পর- কথা নেই, বার্তা নেই মা এসে কষে এক থাপ্পড় মারলো রুমার গালে, "শয়তান, বদের হাড্ডি। পোলাগো লগে তোর কিসের এত হাসাহাসি? পাড়ার লোকেরা নানান সমালোচনা করে। সে খেয়াল আছে।"

জানালার পর্দা খুলে রুমা বাইরে তাকায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ও। ওই যে দূরে একটা মাঠে কিছু ছেলে-মেয়ে একত্রে গোল্লাছুট খেলছে। দৌড়ে ওদের কাছে যেতে ইচ্ছে করে রুমার। মনে মনে বলে, "মা দেখো- এই তো আমি ছোটই আছি। আমি একটুও বড়ো হইনি.................."

মেয়ে বন্ধুদের সাথে হৈ-হুল্লোড় করে সেদিন বাসায় ফিরছিল রুমা। বাসায় ফেরার আগেই বোমা পড়ল রুমার মাথায়। বলে কি সানজিদা- "রুমা, শোন। তোকে আজকে একটা ছেলে দেখতে এসেছে। ইয়া লম্বা। মোটাও মোটামুটি।"
রুমার মাথা এবং কথা দুটোই অফ হয়ে গেল। একটা ছেলে ওকে দেখতে এসেছে। "আচ্ছা, 'দেখতে আসা' কাকে বলে? আমাকে দেখার আবার কী আছে? রোজ স্কুলে যাবার পথে কত ছেলেরাই তো আমাকে দেখছে। ওহ! কী হচ্ছে এসব?"
রুমা বাসায় আজ যাবেই না।

পাশেই রুবিদের বাসা। রুবি ওর সাথেই পড়ে। রুমা রুবিদের বাসায় গেল। বসে বসে লুডু খেলছিল ওরা। হঠাৎ দেখে পাশেই ওর চাচাতো বোন, ভাবী ও প্রতিবেশি অন্যান্য মেয়েরা, "ঐ তুই পালাইয়া রইছস ক্যান? পোলাডা কিন্তু একের। সৌদি থাকে। সাত ভরি গয়না আনছে বৌয়ের লাইগ্যা। এমন আগুনের গোলার মতো পোলা খুব কম মাইয়ার কপালেই জুটে।" কেউ একজন বলল, "অনেক লেইট হইয়া গেছে। তাড়াতাড়ি রেডি করো রুমারে।"
রুমা পালাবার পথ খোঁজে। না পালাবার জায়গা নেই। একটা ছোট্ট নারীকে আঁকড়ে ধরেছে অন্য দশটা বড়ো নারী। রুমার মনে হচ্ছিল- এই ছোট্ট জীবনের বিশাল স্বপ্নগুলো শাড়ীর কফিনে ঢুকে যাচ্ছে।
কিন্তু কেন?
মেয়েটি নাকি অনেক বড়ো হয়ে গেছে!
স্বপ্নশূন্য মন আর শক্তিশূন্য শরীর নিয়ে রুমা নিজেকে জিজ্ঞেস করে যায়,
"আচ্ছা, বড়ো হওয়া কাকে বলে?"

(পর্ব-২)
▬▬▬
সুদৃশ্য চেয়ারে লাল শাড়ী পরে বসে থাকা ছোট্ট মেয়ে রুমার নিজেকে কোরবানীর গরু বলে মনে হলো। দাম দর ঠিক করে যাকে কিছুদিন পরেই বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে আয়েশ করে জবাই করা হবে।

পান খেতে খেতে এক মহিলা এগিয়ে এলো রুমার দিকে। পানের পিচকি রুমার সামনে ফেলে জিজ্ঞেস করল, "এই মাইয়া কাম টাম কিছু পারো? আমাগো কাম টাম তেমুন নাই। মাত্র পাচজুনের সংসার। জামাইতো বিদেশেই থাকবানে। খালি এট্টু ভাত আর ডাউল রানবার পারলেই চলবো।" তারপর একটা হাসি দিলো- হাসির সময় পানের লালজল গড়িয়ে পড়ল ঠোঁট বেয়ে। রুমা মনে মনে বলল, "এই মহিলাটা কে? পেত্নি বলতে কিছু একটা আছে- আচ্ছা, পেত্নি কি এই মহিলাটার চাইতেও কুৎসিত?"

পাশ থেকে ভাবী এসে বলল, "এই রুমা, সালাম কর পায়ে ধরে। এইডা তোর হবু শাশুড়ি। দেখতাছস না কত ভালা মানুষ উনি।"

রুমার ঘেন্না ধরে গেল। পারলে এখনই চিৎকার করে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

আরেকজন মধ্যবয়স্ক মহিলা এসে হাজির। "মাইয়া তোমার চুলগুলান একটু বাইর করো তো- দেহি, কতখানি লম্বা।"- বলেই মহিলাটি রুমার অনুমতি না নিয়েই মাথার ঘোমটা খুলে চুল পরীক্ষা করা শুরু করল। রুমার গা শিউরে উঠল। মহিলাটির গালে একটা কড়া থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছে ওর।
তারপর, আরেকজন এসে রুমার হাত, পা- এমনকি দাঁত পর্যন্ত পরীক্ষা করল। হ্যা, সব ঠিকঠাক আছে। কোরবানির গরুর কোনো ত্রুটি নেই। জবাই দেয়া যায়। তারপরেও আরেকজনের পালা- "মাইয়া তোমার নাম কী? বাবা কী কাম করে? ভাইবুন কয়জুন?"- এইসব আউল ফাউল প্রশ্ন করে যাচাই করল রুমা বোবা কিনা।

রুমার মনে অনেক প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে, "আচ্ছা, ছেলেদের কী এভাবে গরুর মতো বিয়ের সময় যাচাই বাছাই করা হয়?"

এবার দর কষাকষির পালা।
কনেকে বর পক্ষের খুব পছন্দ হয়েছে। মুরুব্বি শ্রেণির এক লোক বিড়ির ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, "আমাগো একের পোলাডার লাইগা এমন কচি মাইয়াই পছন্দ। যারা কলেজ ভার্সিটিতে পড়ে তাগো আমাগো পছন্দ না। তারা নাহি হেসবুক, টেসবুক চালায়। পিরিতি টিরিতি করে। বুঝেন তো- কলিকাল। ফ্রেশ মাইয়া পাওয়া খুব জ্বালা।" কথাগুলো শুনতে এতটাই অশ্লীল লাগল রুমার কাছে যে ওর বমি চলে এলো। এই লোকটা নাকি রুমার শ্বশুর হবে? ভাবা যায়।

আরেকজন মুরুব্বি কিছিমের লোক বলল, "আমাগো পোলার কুনু ডিমান্ড নাই। মেলা টেহা পয়সা, গয়না গাট্টি নিয়া আইছে। কিন্তু ছোট্ট একখান আবদার আছে আমাগো।" কী আবদার জানতে চাইলে লোকটি বলল, "একখান মোটর সাইকেল দেওন লাগবো। পোলার খুব শখ।"

মনে হয় গরুর হাট বসেছে।
অনেকক্ষন দরদামের পরে ঠিক হলো- হ্যা, ছেলে একটা মোটর সাইকেল পাবে। তবে মেয়েকে সাত ভরি স্বর্ণ নগদ দিতে হবে।
রুমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না। যে মানুষটাকে সে চিনে না, জানে না, জীবনে দেখেওনি- তার সাথে ওর একসাথে থাকতে হবে কেন?

দিনক্ষন ঠিক হয়ে গেল।
আগামী সতের তারিখ, শুক্রবার ওর বিয়ে।
পাড়া-পড়শির মন্তব্য--- "দেখছো, মাইয়ার চেহারা ভালা অইলে কী অয়? বিদেশি টেহাওয়ালা পোলার লগে অল্প বয়সেই বিয়া ঠিক অইয়া গেল। আসলে, টান থাকতেই মাইয়াগো বিয়া দেওন ভালা। রাজরানির কপাল আমাগো রুমার!"

এখন মাঝ রাত।
চারদিকে গভীর অন্ধকার।
রুমা বসে বসে ভাবছে, "আমি পালিয়ে যাব। আসছে শুক্রবারের আগেই। যেভাবেই হোক।"
কিন্তু এই পিচ্চি মেয়ে রুমা কোথায় যাবে?
কার কাছে যাবে?
এই অসীম পৃথিবীতে রুমাদের কি থাকার এতটুকু জায়গা আছে????

(পর্ব-৩)
 ▬▬▬

- স্যার, খবর শুনেছেন?
- কোন খবর, আবীর?
- রুমার তো আজ বিয়ে। সবই ঠিকঠাক। বরপক্ষ চলে এসেছে।
- তাই তো বলি, রুমাকে কিছুদিন ধরে স্কুলে আসতে দেখি না কেন? আচ্ছা, কী করা যায় বলতো, আবীর? ওকে তো বাচানো দরকার।
- স্যার, আমরা সবাই মিলে চেয়ারম্যানের কাছে যেতে পারি।
- হ্যা। গুড আইডিয়া।

ইনি আমাদের হাকিম স্যার। 'বেক্কল মাস্টর' হিসেবেই উনি বিশেষ পরিচিত। আড়ালে আবডালে কেউ কেউ 'পাগলা স্যার' হিসেবেও সম্বোধন করে। কারণ, কিছুদিন আগে পাঞ্জাবির সাথে উনি যে পায়জামাটা পরে স্কুলে গিয়েছিলেন- সেটা উনার পাঞ্জাবির পায়জামা ছিল না। সেটা ছিল উনার বউয়ের পরার পায়জামা। বিশেষ করে ছাত্রীরা তো উনাকে দেখে হেসে কুটিকুটি। পারলে ক্লাসের বেঞ্চেই গড়াগড়ি খায়। স্যার মেয়েদের হাসি দেখে বলে, "বুঝেছি,পায়জামা তোমাদের ভালো লাগে না। ওকে, এরপর থেকে পায়জামাই পরবো না। শুধু পাঞ্জাবি পরেই চলেই আসব।" হাসির শব্দ আরও বেড়ে যায়।

হাকিম স্যার প্রাইভেট পড়ান না। দুর্বল স্টুডেন্টদের উনি ফ্রি পড়িয়ে থাকেন। জোর করে টাকা দিতে চাইলেও- উনি নেন না। এইজন্যে রোজ বউয়ের গালি খান, তবে স্টুডেন্টদের হাতের তালি পান। গালি খেয়ে, কিন্তু হাতের তালি পেয়ে উনার দিন কাটে। টিউশন ফি নেন না বলে- তথাকথিত সমাজের সচেতন নাগরিকরা উনাকে 'বলদ মাস্টর' বলে অভিহিত করেন। একটু অন্যমনস্ক টাইপের লোক হলেও,  উনি কথাবার্তা খুব গুছিয়ে বলতে পারেন। অঙ্ক বুঝাতে পারেন খুব ভালো। শুধু তাই নয়- উপস্থিত ছন্দ বানাতে উনি উস্তাদ। এই তো কিছুদিন আগে- ক্লাসের মধ্যে উনি ছন্দ ছাড়লেন এরকম: 

আমি ইট, তুমি খোয়া
আমি মুড়ি, তুমি মোয়া
তুমি শাবনুর, আমি রিয়াজ
তুমি কাচালঙ্কা, আমি পিয়াজ
আমি কান্না, তুমি হাসি
আমি যক্ষা, তুমি কাশি
আমি খাল, তুমি ব্রিজ
আমি মাছ, তুমি ফ্রিজ
আমি গান, তুমি সুর
আমি কাছে, তুমি দূর
তুমি ছাগল, আমি গরু
আমি শেষ, তুমি শুরু
আমি আপন, তুমি পর
আমি বৃষ্টি, তুমি ঝড়
তুমি চড়ুই, আমি দোয়েল
আমি দেব, তুমি কোয়েল
আমি চোর, তুমি পুলিশ
তুমি চালাক, আমি ফুলিশ
আমি কৈ, তুমি ইলিশ
তুমি মাল, আমি জিনিস
তুমি আছো, আমি ফিনিশ
তোমার চৌদ্দ, আমার তিরিশ
তুমি দামী, আমি ফাও
আমি হারাই, তুমি পাও...............

শেষ করার আগেই করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্লাসরুম। যথেষ্ট মেধাবী হয়েও- শিক্ষকতাকে জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নেয়ায়- অনেকেই বলেন, "হাকিম মাস্টারের জ্ঞানের অভাব আছে। বিএসএসি পাশ করেও- কেউ মাস্টারি করে।"
হাকিম স্যার খুব দ্রুত ছুটছেন। সময় বেশি নেই। এখনই- চেয়ারম্যানের কাছে যেতে হবে। তার আগে তিনি হেড মাস্টারের রুমে গেলেন।

- স্যার, আপনাকে কিছু বলবার ছিল।
- হ্যা, হাকিম সাহেব বলেন- কী বলবেন? বলুন।
- স্যার, আপনি কি জানেন- এইবার ক্লাস এইটের সবচাইতে মেধাবী কে? ছাত্র প্লাস ছাত্রীদের মধ্যে?
- দেখলে হয়তো চিনব। নামটা জানি না তো। কেন হাকিম সাহেব? কী হয়েছে।
- তার আগে বলেন- স্যার, আপনি কী চাইবেন আপনার স্কুল থেকে আপনার সবচাইতে মেধাবী স্টুডেন্টকে হারিয়ে ফেলবেন?
- না। তা তো কক্ষনো চাইবো না।
- তাহলে স্যার শুনেন- ক্লাস এইটের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী মিস রুমার আজ বিয়ে। মেয়েটির বয়স এখনো চৌদ্দও হয়নি।
- ওহ! এই ব্যাপার। কিন্তু হাকিম সাহেব- আমাদের কী করনীয়? যেখানে মেয়েটির বাবা-মা রাজি- সেখানে কী আমাদের কোনো ভূমিকা আছে?
- হ্যা স্যার, অবশ্যই আছে। আমরা শিক্ষক। আমরাও প্রতিটা ছেলেমেয়ের বাবা-মা। আমরা জাতির বিবেকও। আমরা যদি স্যার না জাগি- তাহলে সকাল তো কোনোদিন আসবে না।
- কিন্তু..................
- স্যার কোনো কিন্তু নেই। আপনি শুধু আমাকে সহায়তা করেন। আমার সাথে একটু চলেন।
হেড মাস্টার আর না করতে পারলেন না। তিনিও চললেন।

(পর্ব-৪)
▬▬▬
বরের নাম রুহিন। মোটামুটি মোটা বলে সবাই ওকে 'মোটকু রুহিন' বলে ডাকে। জিন্সের প্যান্টের ওপরে হাফ হাতা কালো-সাদা চেকের শার্ট পরে এসেছে বিয়ে করতে। তবে মাথায় মুকুট পরতে ভুল করেনি মোটকু রুহিন। বরের এই ড্রেস দেখে চোখ গোল হয়ে গেল রুমার চাচীর। জিজ্ঞেস না করে চাচী থাকতে পারলেন না, "বরের কি কান্ডজ্ঞান নাই? বিয়ার দিন পাঞ্জাবি পায়জামা পরা ছাড়া কোনো বর আসে নাকি?" উত্তরে রুহিন বলল, "আসলে হইছে কি চাচীম্মা, পরথম বিয়া তো! তাই একটু ভুল অইবার লাগছে। পরেরবারে ইংশাল্লা ভুল করব না নে।" অন্দর মহলে হাসির রোল বয়ে গেল।

দূর থেকে বিয়ে বাড়ির গান শোনা যাচ্ছে। বাঙালির রুচিবোধ কতটা বিকৃত হয়েছে তা ওই গান না শুনলে বুঝতে পারতেন না হাকিম মাস্টার। একটা নারী কণ্ঠের গান-
"তুমি দিয়ো না-কো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া.........
আমি অন্ধকারে- বদ্ধঘরে যাবো মরিয়া..............."

হাকিম মাস্টার, স্কুলের হেড স্যার, হবি চেয়ারম্যান আর দুজন পুলিশের কনস্টেবল বিয়ে বাড়িতে ঢুকছে। দূর থেকে ওদের দেখেই পেট খারাপ হয়ে গেল বরের। রুবিকে দেখেই বলল, "ও খালাম্মা, আপনাগো হাগুখানা কোন দিকে?"

টয়লেটের দরজায় সিটকিনি লাগিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নিল বর রুহিন। গু-এর গন্ধে ভুলে গেল বিয়ের সৌরভ। বরপক্ষের অন্যান্য আত্মীয়রা আশে পাশের পাটক্ষেতে আশ্রয় খুঁজল।
বাল্য-বিবাহের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে রুমার বাবা-মাকে বুঝানো হলো এভাবে:

অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিলে- মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অল্প বয়সে বাচ্চা হবার সম্ভাবনা তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে। এমনকি মারা যেতে পারে নবজাতক শিশু ও তার মা। শারীরিকভাবে দুর্বল মা- জন্ম দিয়ে থাকে শারীরিকভাবে দুর্বল শিশু। সংসার জ্ঞান না থাকায়- অল্পবয়সী মেয়েরা শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সাথে খাপ খেয়ে চলতে পারে না। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কেও ভাঙনের সম্ভাবনা প্রবল হয়। কুড়িতে বুড়ি হয় এমন বাল্যবিবাহিত মেয়েরাই। আর, বর্তমানে একটি মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে বাবা-মায়ের তেমন টাকা-পয়সাও লাগে না। লাগে একটু সদিচ্ছা আর সচেতনতা। সরকার মেয়েদের শিক্ষাকে অবৈতনিক করেছে এবং মাসে মাসে উপবৃত্তির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। একটা ছেলে যেমন সংসারের বাতি, মেয়েও তাই। একটা মেয়েও ধরতে পারে সংসারের হাল। কন্যা সন্তান কোনো বোঝা নয়। বরং পরিবার ও দেশের সম্পদ।

রুমার বাবা-মা তাদের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত হলো।
'পাগলা স্যার' হিসেবে পরিচিত হাকিম স্যারের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে এলো তথাকথিত এলিট শ্রেণির মানুষের।
সমাজ হাকিম মাস্টারদের কিছু না দিলেও, হাকিম মাস্টাররা সমাজকে নিঃস্বার্থে সেবা দিয়ে যাচ্ছে অবিরাম।

"স্যালুট হাকিম স্যার! জাস্ট হ্যাটস অফ!!!" মনে মনে বলল রুমা।
কিছু ভালো মানুষের উপস্থিতিতে পৃথিবীটা কতো সুন্দর হতে পারে!
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

বছর দশেক পর। 
ঢাকার ফাঁকা রাস্তায় একা একা হাঁটছিলেন হাকিম মাস্টার।
হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন এক চব্বিশ বছরের মেয়ে তার পা জড়িয়ে ধরেছে। মেয়েটির পরনে পুলিশের ড্রেস। ব্যাজ দেখে বোঝা যায়- মেয়েটি পুলিশের এসিপি (বিসিএস ক্যাডার)।

মেয়েটি আর কেউ নয়।
সেদিনের সেই পিচ্চি মেয়ে রুমা। এক অপার্থিব ভালোলাগায় জল চলে এলো হাকিম স্যারের চোখে। মেয়েটি তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক অপূর্ব যুবককে দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলো- "উনি মিস্টার সৌম্য। ডক্টর (বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার) সৌম্য চৌধুরী। আমার হাজব্যান্ড।"

পরিতৃপ্তিবোধে নির্বাক হয়ে যাওয়া হাকিম মাস্টার মনে মনে বললেন, "মেয়েরা, যদি তোমরা জিতো, তাহলে আমরাও জিতি। জাস্ট হ্যাটস অফ....................."
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

গল্পকার: ওয়াদুদ খান
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, সদরপুর সরকারি কলেজ
লেখকের প্রকাশিত সকল উপন্যাস পেতে:
📞📞 ☎☎ ০১৬৭৩-৫৯৪৫৭৯ ☎☎📞📞
ফ্রি পড়তে ভিজিট করুন : wadudkhan.blogspot.com

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

আর নয় ডায়াবেটিসকে ভয় | Know, learn & beat Diabetes


হয়তো লেখাটি আপনার জন্যই
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
আপনি কি আপনার ডায়াবেটিস হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন?

তাহলে শুরুতেই জেনে নিন-
ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ:
✔ হঠাৎ করে ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া কিংবা হ্রাস পাওয়া।
✔ বারবার খেলেও পেটে ক্ষুধা অনুভব করা।
✔ অতিরিক্ত পানি পিপাসা বোধ করা।
✔ শরীরের কোথাও কেটে গেলে, ঘা শুকাতে দেরি হওয়া।
অথবা,
✔ আপনার বংশে যদি ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকে- যেমন: মা-বাবা, ভাই-বোনের, তবে আপনার এ রোগ হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

ডায়াবেটিস হয়েছে বলে তীব্র সন্দেহ থাকলেও, আমি দেখেছি- মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে এই ভয়ে অনেকে ডায়াবেটিস মাপার সাহস পান না। আপনার অবস্থাও যদি এরকম হয়ে থাকে, তাহলে আপনি মারাত্মক ভুল করছেন।

ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে আপনার জন্য রয়েছে নিম্নোক্ত হুমকি:
🔴 ব্রেইন স্ট্রোক
🔴 হার্ট এটাক
🔴 প্যারালাইসিস
🔴 চোখ দিয়ে রক্তক্ষরণ
🔴 কিডনি ডায়ালাইসিস
কি, ভয় পেয়ে গেলেন?

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
                      ডায়াবেটিস নিয়ে ভয়
                        আর নয়, আর নয় 
        Let's learn how to beat Diabetes...
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

মনে রাখবেন-
ডায়াবেটিস অনিরাময়যোগ্য হলেও, সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য। এজন্য যা করতে হবে: 
🔵 পরিমিত খাদ্যগ্রহণ করতে হবে।
🔵 মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য যদি খেতে খুব ইচ্ছে হয়, তবে একেবারেই অল্প করে খাবেন। তবে অবশ্যই প্রতিদিন নয়।
🔵 উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
🔵 প্রতদিন নিয়ম করে কমপক্ষে ৪৫ মিনিট হাঁটতে হবে।
🔵 ডাক্তারেরে নির্দেশ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হবে কিংবা ইনসুলিন নিতে হবে।
🔵 মাসে কমপক্ষে একবার রক্তের গ্লুকোজ মাপতে হবে।

যে মারাত্মক ভুল কখনোই করবেন না:
🔴 ডায়াবেটিস একেবারে সেরে গিয়েছে মনে করে ঔষধ খাওয়া ছেড়ে দিবেন না।
🔴 বছরের পর বছর ডায়াবেটিস না মেপে একই ঔষধ সেবন করে যাবেন না৷
🔴 শুধু গাছগাছালির পাতা কিংবা রস খেয়ে, অথবা শুধু হাঁটাহাটির মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন না।
🔴 দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকবেন না।
🔴 কবিরাজ, হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার কিংবা গ্রাম্য ওষুধের দোকানদার কিংবা কম্পাউন্ডারের পরামর্শে চলবেন না।

➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖
নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস মানে দীর্ঘজীবন
➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে আপনি:
✔ অন্য দশজন মানুষের মতোই স্বাভাবিক জীবন যাপন করবেন।
✔ আপনার স্ত্রীকে পূর্বের মতোই সঙ্গ দিতে পারবেন। (ডায়াবেটিস রোগীরা যৌন দুর্বলতায় ভুগে বলে বহুল প্রচলিত)
✔ আগের মতোই প্রাণশক্তিতে ভরপুর থাকবেন।
✔ অন্য দশজন মানুষের মতোই ৭০ থেকে ৯০ বছর পর্যন্ত দীর্ঘজীবন পেতে পারেন।

মনে রাখবেন, মৃত্যু মানুষের হবেই। ডায়াবেটিস হলেও, না হলেও। অতএব, "ডায়াবেটিসের কারণে আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না" মনে করা বোকামি।

⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫
              ডায়াবেটিস নিয়ে ভয় কিসের? 
                    কিসের এত দুশ্চিন্তা?
              মিষ্টি নাহয় ছেড়েই দিলাম- 
                   খেলাম নাহয় টক, তিতা...
⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫⚫

ধর্মীয় দৃষ্টিতে ডায়াবেটিসের লাভ: 
🔵 অসুস্থতাও আল্লাহর নিয়ামত। আবার পরীক্ষাও। এ পরীক্ষায় ধৈর্যধারণ করলে, অবশ্যই পরকালে বিশেষ পুরস্কার পাওয়ার আশা করা যায়।
🔵 অল্প ভক্ষণ করলে আয়ু বাড়ে। মানুষ তাঁর জন্য প্রদত্ত রিযিক না খেয়ে মারা যাবে না। ডায়াবেটিস রোগী কম খায় বলে, তাঁর রিযিক আরও বেশি সময়ের জন্য বরাদ্ধ থাকবে।
🔵 অসুস্থ ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়। অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ ব্যক্তির চেয়ে মৃত্যুর কথা বেশি স্মরণ করে থাকেন। হঠাৎ করে মৃত্যু বরণ করলে, অনেকক্ষেত্রে তওবা করার সুযোগ হয় না৷

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
          ডায়াবেটিস যে কারও হতে পারে।
        এ রোগ কোনও পাপের ফল নয়। 
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

ডায়াবেটিস নিয়ে যেকোনো সমস্যার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে ফোনে 📞📞📞☎☎☎ কিংবা সরাসরি যোগাযোগ করবেন। অবশ্যই, অনলাইন, ফেসবুক, ইউটিউব, বইপত্র  📚 📙📘 অথবা পত্রিকার কলাম পড়ে নিজেই কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।

(লেখাটি প্রয়োজনীয় মনে হলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করুন। লেখকের নাম অক্ষুন্ন রেখে কপি, পেস্ট করেও সেইভ কিংবা আপনার টাইমলাইনে স্ট্যাটাস দিতে পারেন।)

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
লেখা: ওয়াদুদ খান
কবি ও কথাসাহিত্যিক
সদরপুর, ফরিদপুর
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

সময় থাকলে ভিজিট করুন:
http://learning-bangla.blogspot.com
➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖
⏺⏺⏺🎤🎤🎤 একদম ফ্রি 🎤🎤🎤 ⏺⏺⏺
ইংরেজি স্যারের বাংলা ক্লাস  করতে চাইলে পেইজটিতে 🏴🏴🏴
লাইক 👍👍👍 দিয়ে কানেক্টডে থাকুন।
➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖

Saturday, 18 August 2018

কুরবানিও ফ্যাশন এখন | রম্য কবিতা

কু র বা নি

ও য়া দু দ   খা ন

কুরবানি আজ ত্যাগ বোঝায় না
বোঝায় তোলা সেলফি
ট্যাগ করা হয় বন্ধু-স্বজন
দেখ রে গরু কিনছি।

কুরবানি আজ হইছে ফ্যাশন
ফেবুর লাগি স্ট্যাটাস
আমার গরু এত্ত বড়ো
খাচ্ছে ভুষি, খাচ্ছে ঘাস।

কুরবানি আজ লোক দেখানো
সমাজ জুড়ে কম্পিটিশন
তোমার গরু পিচ্চি এত-
আমার গরু মোটকু ভীষণ।

কুরবানিআজ ফ্রিজমুখী
গরিব-দুখির অংশ নাই
বছর জুড়ে মাংস খাওয়া
নিয়ত ছহির বংশ নাই।

কুরবানি আর কুরবানি নাই
হয়ে গেছে ট্র‍্যাডিশান
ঋণ করে তাই- কুরবানি চাই
রাখতে বংশের সম্মান।

আজকে যারা কুরবানিতে
খাচ্ছে গরুর মাংস,
ভুলে গেছে তাদের কাছে
আছে গরিবের অংশ।

কবিতা লেখার তারিখ ও সময় 
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
সকাল: ৮:৫৪

কু র বা নি | ত্যা গ | S A C R I F I C E... (অসামান্য আলোচনা)

কুরবানির গরু (প্রতীকী)

ধনাঢ্য মুসলিমদের উপর আল্লাহ তা'আলা কুরবানিকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন (ওলামায়ে কেরামের এমনটাই অভিমত)। কুরবানি মানেই হচ্ছে ত্যাগ। বাংলায় প্রচলিত, "ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।" এখন, প্রশ্ন জাগতে পারে, "কুবানিতে কী ত্যাগ করছেন ধনাঢ্য মুসলিম? কুরবানি তো ভোগেরই আরেক নাম!"
সত্যি বলতে কি, বর্তমানে ইসলামের প্রকৃত চর্চা নেই বলে, কুরবানিকে আর ত্যাগ বলে মনে হয় না কারও। বরং লোক দেখানো এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলে দৃশ্যমান হয়।

সেলফিস্টিক হাতে নিয়ে গরুর গলা ধরে যখন কোনো মুসলিম তরুণ কিংবা তরুণী ফেসবুকে পিকচার আপলোড দেয়, তখন কুরবানির মর্মবাণীকে যেন উপহাসই করা হয়।
সেলফি তোলার প্রতিযোগিতা চলছে  

কিছু লোক নিজেদেরকে আরও ধনবান প্রমাণের আশায় উচ্চমূল্যে গরু কিনে কৌশলে জাহির করার ধান্দায় থাকে। কুরবানির হাটে কিংবা ঈদের মাঠে এঁদের সরব উপস্থিতি থাকলেও, দিনান্তে মসজিদে একবারও দেখা যায় না। নামাযের কথা বললে, এঁদের 'গ্যাস্ট্রিক, পেট ব্যথা' বেড়ে যায়। কুরবানির গরুর গলায় লাল মালা পরিয়ে মহল্লাতে চক্কর দেয়। কেউ জিজ্ঞেস না করলেও কৌশলে বলে, "দাদা, এক লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা দিয়ে কিনলাম। কেমন হলো?"

মনে রাখতে হবে, কুরবানির কবুলিয়াতের শর্ত হচ্ছে সহীহ নিয়্যত। অন্তরের খবর অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা জানেন। এ বিষয়ে সন্দেহ থাকলে কুরবানি করার দরকার কী?    আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন:-
﴿ لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمۡ لِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٣٧ ﴾ [الحج: ٣٧]
অর্থাৎ, আল্লাহর কাছে ওগুলোর (কুরবানির পশুর) না গোশত পৌঁছে, আর না রক্ত পৌঁছে বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিঁনি ওগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে পারো, এজন্য যে, তিঁনি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন, কাজেই সৎকর্মশীলদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও। [সূরা হাজ্জ:৩৭]।
কুরবানির গোশত আল্লাহ তা'আলার কাছে পৌঁছে না। মানুষের কাছেই পৌঁছাবে। মানুষই খাবে। তাই বলে, যিনি কুরবানি দিচ্ছেন, তিনি একাই সারাবছর খাবেন, আর পাশের গরিব প্রতিবেশী ঈদের দিন গোশতের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরবেন, তা তো নয়। আমার প্রতিবেশীর খোঁজ রাখার নৈতিক দায়িত্ব আমারই। তাকে কেন আমার দ্বারে আসতে হবে? আমি তার দ্বারে গিয়ে দিয়ে আসলে সমস্যা কোথায়? 
আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেন-
﴿ فَكُلُواْ مِنۡهَا وَأَطۡعِمُواْ ٱلۡبَآئِسَ ٱلۡفَقِيرَ ٢٨ ﴾ [الحج: ٢٨]
‘অতঃপর তোমরা তা হতে আহার কর এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।’ [সূরা হাজ্জ:২৮]।
একদম সাদামাটাভাবে বুঝা যাচ্ছে, যিনি কুরবানি দিবেন, তাঁর জন্য গোশত খেতে মোটেই আপত্তি নেই। খেতে যখন মহান আল্লাহ তা'আলা নিষেধ করছেন না, তখন সেটা মেনে নিতে সবাই বাধ্য। কিন্তু, 'দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্তকে আহার করাও'- এই অংশের দিকে অনেকেরই দৃষ্টি থাকে না।
ঈদুল আযহার আগে ফ্রিজের বিক্রি বেড়ে যায়। এর কারণ, ধনাঢ্যরা কুরবানির গোশত সংরক্ষণ করতে চায়। অনেকে গর্ব করে বলেও থাকেন, "আরে, গত কুরবানির গোশত তো এই কুরবানিতেও শেষ হয়নি।" গোশত খাওয়াই যদি উদ্দেশ্য হবে, তবে কুরবানির দিন গরু যবেহ না করে, বছরের যেকোনো দিন করলেই হয়।
যারা বছরজুড়ে কুরবানির গোশত ফ্রিজিং করে খান, তাঁরা নিচের হাদিসটি দলীল হিসেবে পেশ করেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) কুরবানীর গোশত সম্পর্কে বলেছেন-
«كلوا وأطعموا وادخروا»
‘তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।’ [বুখারী, হাদীস নং ৫৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭১]
হাদিসে তো সংরক্ষণের কথা বলা আছে। তাহলে, সংরক্ষণ করলে দোষ কোথায়? দোষ নেই। হাদিসে এটাও আছে,'অন্যকে আহার করাও'- সেদিকে দৃষ্টিপাত করেছেন কি? অন্যকে আহার করানোর পরে যদি সংরক্ষণ করতে চান, তবে না বলার সুযোগ নেই।
কেউ যদি, কুরবানির সবটুকু গোশত গরিব দুঃখীর মাঝে বণ্টন করে দেন, তাতেও কিন্তু ওলামায়ে কেরামের আপত্তি নেই (অবশ্যই ইসলামের দৃষ্টিতে)। এমনকি, ওলামায়ে কেরাম এটাও বলে থাকেন, আপনার প্রতিবেশী যদি বিধর্মী হয়, তাকেও কুরবানির গোশত দিতে পারবেন।
তবে বেশিরভাগ ওলামায়ে কেরাম কুরবানির গোশতকে তিনভাগে বণ্টন করতে পরামর্শ দেন-
১। গরিব-দুঃখীদের জন্য২। নিজের আত্মীয় স্বজনের জন্য৩। নিজের জন্য
আমরা প্রথম দুটি ভুলে গিয়ে, তিন নম্বরটি নিয়েই বেশি মগ্ন থাকি।
হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে এমন নিয়্যতে কুরবানি করার তৌফিক দান করুন, যেটা আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য। লোক দেখানো ইবাদত থেকে হিফাজত করুন।
আমীন!

লেখা ও গবেষণা
ওয়াদুদ খান 
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ
সদরপুর সরকারি কলেজ, ফরিদপুর

তথ্যসূত্র
কুরআন ও হাদিসের দলীলসমুহ ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

Thursday, 16 August 2018

বড়ো ভয়ে বেঁচে আছি | ওয়াদুদ খান

বড়ো ভয়ে বেঁচে আছি


বড়ো ভয়ে বেঁচে আছি

ইদানীং প্রকাশ্যে কাশতে ভয় পাই 
ভয় পাই হাসতেও 
কি হাসিতে, কি কাশিতে 
বিপদের আনাগোনা দেখি
বড়ো ভয়ে বেঁচে আছি। 

জনাকীর্ণ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে 
জোরে কথা বলতে পারি না 
পারি না সবেগে মুতে দিতেও 
কি কথায়, কি মোতায় 
বিপদের আনাগোনা দেখি
বড়ো ভয়ে বেঁচে আছি। 

তোমাদের নষ্ট নগরে প্রকাশ্যে 
গলা ছেড়ে গান গাইতে পারি না 
পারি না বিড়িতে সুখটান দিতেও 
কি গানে, কি টানে 
বিপদের আনাগোনা দেখি
বড়ো ভয়ে বেঁচে আছি। 

দুঃসময়ের কবলে পড়া এই আমি- 
স্বাধীনচেতা কবি হতে পারি না
পারি না ফেসবুকে 
খিলখিল করে হাসা ছবি দিতেও 
কি কবিতে, কি ছবিতে 
বিপদের আনাগোনা দেখি
বড়ো ভয়ে বেঁচে আছি। 

১৬ আগস্ট, ২০১৮
সদরপুর, ফরিদপুর

Sunday, 29 July 2018

মোবাইলে প্রতারণা থামছেই না | পড়ুন, জানুন ও শেয়ার করুন


ঘটনা-১
তার নাম রশিদ। 'ভ্যান রশিদ' নামেই সে বেশি পরিচিত। দিন এনে দিন খান। হঠাৎ একদিন ফোন পেলেন। ওপাশ থেকে বলা হলো, "আপনি ১ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার জিতেছেন। কিন্তু এই টাকা উত্তোলনের জন্য কুড়ি হাজার টাকা বিকাশ করতে হবে।" কারও সাথে পরামর্শ না করেই ঋণ করে পরিশোধ করলেন কুড়ি হাজার টাকা। এরপর থেকে সেই ফোন নাম্বারটি সুইচ অফ। বেচারা রশিদ অজ্ঞতা ও লোভের মাশুল এখনো দিয়ে যাচ্ছে।

ঘটনা-২   
তিনি মসজিদের ইমাম। পাশাপাশি ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করেন। হঠাৎ ফোন আসে, "আপনি কি ফ্রি রকেট একাউন্ট খুলতে চান? তাহলে ডায়াল করুন স্টার ওয়ান টু ওয়ান স্টার জিরো ফোর...... ইত্যাদি ইত্যাদি তারপর হ্যাশ বাটনে চাপুন।" হ্যাশ বাটনে চাপ দেওয়ার পর সেই ইমাম সাহেব খেয়াল করলেন তার মোবাইল থেকে ফ্লেক্সিলোডের চার নয়শত ছেচল্লিশ টাকা নেই। বলা বাহুল্য চার ডিজিটের পিন কোড দেওয়ার কথা বলে মূলত ওই টাকা হাতিয়ে নেয়। অর্থাৎ, "ফোর নাই ফোর সিক্স" আপনার নতুন কোড যা মূলত ওই টাকার এমাউন্ট।


ঘটনা-৩ 
"হ্যালো, আপনার সিমে নতুন একটা অফার এসেছে। ৫০০০/- টাকার টক টাইম ও কুড়ি জিবি ফোর জি ইন্টারনেট প্যাকেজ পাবেন দুই মাসের জন্য। এজন্য আপনার মোবাইলে ১০০০/- টাকা রিচার্জ করতে হবে আমাদের নির্দেশনা অনুসারে।" স্মার্ট ছেলে ইমরান ভাবলো, "টাকাটা যেহেতু আমার মোবাইলেই রিচার্জ করতে হবে, তবে রিস্ক নিতে আর সমস্যা কোথায়? তবুও পরীক্ষামূলকভাবে ও ১০০/- টাকার একটি কার্ড ওদের নির্দেশনা অনুসারে নিজের মোবাইলে রিচার্জ করতে গিয়ে, টাকা ওর নাম্বারে ঢুকেনি। ঢুকেছে ওদের নাম্বারে। ১০০/- টাকা লস দিয়ে সেই যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিল ইমরান।

এমন ঘটনা আমাদের চারপাশে অহরহ ঘটছে। আমরা নিজেরা সতর্ক থাকি। অন্যদের সতর্ক করে দিই। অফার সংক্রান্ত কোনো ফোনকলে বিভ্রান্ত না হই। ঝোঁকের বশে রিকোয়েস্টিং বাটনে প্রেস না করি।

একান্ত প্রয়োজন হলে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে কথা বলতে পারি। মনে রাখবেন, ওরা কিন্তু সংঘবদ্ধ চক্র।

(বাকিটুকু শুনুন অডিওতে। ক্লিক করুন নিচের ইমেজে।)


দেখা থেকে লেখা 
ওয়াদুদ খান 
২৮ জুলাই, ২০১৮   

Wednesday, 25 July 2018

দুটি রম্য কবিতা /// ওয়াদুদ খান



(হাজারো বালক/ বালিকার মনের কথা ছন্দে ছন্দে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলাম)
১. হে বালক

হয়ে অলি          কেন এলি
আমার ছোট্ট জীবনে?
সব লুটে          এখন ছুটে
পালালি কার কাননে?

মিথ্যে বলে          হৃদয় নিলে
ছলে বলে তুমি।
ভালোবেসে          গেলাম ভেসে
চোখের জলে আমি।

রাত্রি জেগে          প্রেমাবেগে
লিখতে চিঠি কত
এখন দেখি          সবই ফাঁকি
তোমার কথা যত।

কিসের তরে          গেলে ওড়ে
আমার আকাশ ছেড়ে?
কোথায় গেলে          আমায় ফেলে
একলা রেখে ওরে?

আমি এখন          আছি কেমন
সেটা কি আর বুঝবে?
হারিয়ে গেলে          আঁধার কোলে
তখন আমায় খুঁজবে।

ওহে বালক          মনের চালক
তুমি আমার হলে না।
জনম ভরে          খুঁজে ফিরে
আমাকে আর পাবে না।

কবিতা লেখার তারিখ: ২০ আগস্ট, ২০১৬ (সন্ধ্যা)
বি.দ্র. যারা ছন্দোবদ্ধ কবিতা লেখার চর্চা করছো তাদের জন্য এই কবিতায় ভাবনার খোরাক আছে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।


২. প্রিয়তমা, করো ক্ষমা
করো ক্ষমা,          প্রিয়তমা
বাসবো না ভালো আর
ভালোবেসে          গেছি ফেঁসে
লাইফটা ছারখার।

কত বাঁশ,          কত ক্রাশ
খেয়ে যাব বলো না? 
মোর কথা,           শত ব্যথা
তোমরা তো বুঝলে না।

প্রিয়তমা,          করো ক্ষমা
'ভালোবাসি' বলবো না
ভুল মতে          প্রেম-পথে
আমি আর হাঁটবো না।

আমি একা          কত ছ্যাঁকা
খেতে পারি বলো আর? 
প্রেম ফেলে          যাব চলে
ফিরবো না কভু আর।

করো ক্ষমা,          প্রিয়তমা
প্রেম-ট্রেম আর না
খাব গাঁজা,          হব রাজা
প্রেম-ট্রেম তবু না।

২২ জুলাই, ২০১৮

Sunday, 22 April 2018

ফেসবুকের উদার নীল জমিনে ||| কবিতা

ফেসবুক কার কী উপকার করেছে?
জানি না। 
তবে, আমার করেছে সর্বনাশ।
আগে যেখানে চালাতাম 
কাগজের বুকে কলমের ফলা, 
এখন সেখানে চালাই
মোবাইলের বুকে
ক্লান্ত আঙুল।

সোনালি সকাল, 
রোদেলা দুপুর, 
উদাসী বিকেল, 
নিস্তব্ধ রাত, 
হাজারও জনতার মাঝেও গাঢ় নির্জনতায়  
সারাক্ষণ চোখ পড়ে থাকে 
ফেসবুকের  নীল খাতার পাতায়।

সন্ধ্যার সেই ঝাঁঝাল আড্ডা 
চলে গেছে কমেন্ট বক্সের দখলে।
কতদিন হয়ে গেল 
নীলাকাশ দেখি না।
ছুঁয়েও দেখি না- 
গল্প-কবিতার বই। 
জীবন আজ আবদ্ধ 
ফেসবুকের চার দেয়ালে।
রিয়েল লাইফে কী ঘটছে? 
জানি না আমি। 
আমার ভার্চুয়াল লাইফে
শুধু লাইক আর কমেন্টের খেলা।

আহ! ফেসবুক, 
তুমি না থাকলে,
আমার এই ভয়াবহ সর্বনাশের কথাই বা 
সবাইকে কীভাবে জানাতাম?

তাই,
বারবার হাটি ঘোরের সাথে
একই পথে ....
শুয়ে থাকি-  
ফেসবুকের উদার নীল জমিনে ....
আমার ঘুম আসে না। 
আসে কমেন্ট, শেয়ার, লাইক, রিয়্যাক্ট, 
ওয়াও, হা-হা-হা..... 

ওয়াদুদ খান
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ 

বয়সটা ছুঁয়ে গেল পঞ্চাশ ||| রম্য কবিতা

দাড়িগুলো পেকে শেষ 
উঠে গেল সব কেশ 
বয়সটা ছুঁয়ে গেল পঞ্চাশ।




দাড়ি-গোঁফ পেকে সাদা 
বাচ্চারা ডাকে দাদা 
উঠে গেল চাপা থেকে দুই দাঁত।

রস-কষ ঠিকই আছে 
লাফ দিয়ে উঠি গাছে 
তারুণ্যে ভরে আছে মন-প্রাণ।

বয়সটা পায়ে ঠেলে
যুবাদের আছি দলে
মানি না, মানবো না বয়সের কাছে হার।

ওয়াদুদ খান
২০ মার্চ, ২০১৮

Monday, 16 April 2018

নাই নাই নাই (দুটি বৈশাখী রম্য কবিতা)



এক.

বৈশাখী মেলা আছে,
বৈশাখী খেলা নাই।
মেলায় গিয়ে ঠেলা খেলে
তাতে মনে জ্বালা নাই।

পুলিশের তুলনায় আজ দেশে ইলিশ নাই।
বসন্ত আছে তবে সেই
কোকিল নাই।
হামলা হলেও মামলা নাই,
মামলা হলেও ভালো উকিল নাই।

গরীবের যতো দোষ,
ধনীদের দোষ নাই।
ঘুষ খাবার বেলায়
ওদের কোনো হুশ নাই। 
সুদের তুলনায় আজ দেশে
গরুর দুধ নাই।

প্রচুর নেতা আছে,
নেতার কোনো নীতি নাই।
মানুষে মানুষে কোনো প্রীতি নাই। 
দেশে পরীক্ষা আছে,
তবে পড়াশোনার গোষ্ঠী নাই।
যতো প্রশ্ন ফাঁস আছে,
দেশে ততো হাঁস নাই।

মেধা আছে, তবে কোটা নাই
কোটার খোটা ছাড়া আর চাকরি নাই।
যার আজ খালু নাই, মামু নাই
চাকরির বাজারে তার
আম-ছালা নাই।
পাছায় আজ বাঁশ আছে,
গলায় কোনো মালা নাই।

দুই. 

পকেট আছে টাকা নাই
সবার মন আছে,
তবে কারো মন আজ ফাকা নাই।
গরম আছে তবে শরম নাই।

শোক আছে, মনে সুখ নাই
প্রেম ভাংগে তাতে দুখ নাই।
নষ্ট হই তাতে কষ্ট নাই।
বাজারে লেবু আছে,
তাতে একফোঁটা রস নাই।
গরীবের কাম আছে তবে
কামের দাম নাই।
আলুর তুলনায় আজ বালু নাই।

সাধ আছ কিন্তু সাধ্য নাই। 
গরীবের চিত্ত আছে কিন্তু বিত্ত নাই।

প্রেম আজ মুখে বলে,
কিন্তু সেটা বুকে নাই।
সবাই খুব মুডে চলে,
আসলে কেউ সুখে নাই। 

ওয়াদুদ খান 
কবি ও কথাশিল্পী 

Sunday, 15 April 2018

কোটা: দাদা ও নাতির কাব্যিক কথামালা


"শুনছ নাকি ও দাদা গো, শুনছ নাকি খবর?
পোলাপানের দাবির চাপে কোটার হলো কবর!
তাই যদি হয় তুমিই বলো- ক্যামনে পাবো জব?
আমি গাধা নাই তো মেধা- ভালোই জানো সব। 
বাচ্চাগুলো দিবস-রাতি দিক না যতই খোটা
এই দেশেতে চাকরি পেতে লাগবেই আমার কোটা। 
কোটা ছাড়া যায় কি পাড়া- দাঁড়িয়ে-বসে আম?
গাছের তলায় শূন্য হাতে ঝরবে পিঠের ঘাম! 
ও দাদা গো চুপ আছ ক্যান? কিছু একটা করো- 
কোটার জন্য লাগলে আবার অস্ত্র হাতে লড়ো। 
কোটা যদি না থেকে মোর চাকরি ক্যামনে হবে?
তোমার নাতি হয়ে আমার লাভটা কী আর তবে?"

মুখ খুলে কয় দাদা এবার, "শোনো আমার নাতি, 
মেধা ছাড়া কোনো গাধার থাকবে না আর গতি।
যুদ্ধে গেছি দেশের তরে কোটার জন্য নয় রে 
দেশ পেয়েছি সব পেয়েছি এতেই মোদের জয় রে! 
পড়াশোনা করলে বেশি চাকরি ঠিকই আছে 
মেধাশূন্য বাচ্চাগুলো ঘুরছে কোটার পিছে। 
কোটা গেছে বেশ হয়েছে মজায় আছি এখন- 
এবার ঠিকই হবে পূরণ জাতির পিতার ভিশন!" 

কবি ও কথাশিল্পী 

Monday, 9 April 2018

কোটা বিরোধী যোদ্ধা (মর্মস্পর্শী ছোটোগল্প)


দিন শেষে বিকেলটা বড়ো অপূর্ব লাগে। হয়তো জীবন সায়াহ্নটাও লাগে তেমনি আকর্ষ জাগানিয়া। সুন্দর বিকেলটা খুব দ্রুতই হারিয়ে যায় রাতের নিঃসীম গাঢ় অন্ধকারে। এই অদ্ভুত জীবনটাও তেমনি খুব দ্রুতই হারিয়ে যায় মরণ নামের এক অন্ধকার বলয়ে। ষাট বছর বেঁচে থাকা আসলেই বড়ো কম বেঁচে থাকা। 

হুমায়ূন আহমেদের একটা কথা মনটাকে মাঝে মাঝেই ভীষণ আলোড়িত করে- "একটা কচ্ছপ যেখানে অবলীলাক্রমে বেঁচে থাকে কয়েক শো বছর, সেখানে মানুষ নামের এই বিচিত্র প্রাণিটা কেন মরণের নিকষ কালোয় হারিয়ে যাবে ষাট কিংবা সত্তর বছর বয়সে? একটাই জীবন। অথচ, কতো ছোট্ট তার ব্যাপ্তি। 
তবুও তো কম বেঁচে থাকলাম না আমি।
মৃত্যুর সাথে নিরন্তর বসবাস করে আসা এই আমি দেখলাম- প্রায় ষাটটি বসন্ত।
ভাবা যায়?

যে দেশে মানুষ মরে গরুর চেয়েও অবহেলায়। সেই দেশে এতোটা বছর বেঁচে থাকা চাট্টিখানি কথা নয়। হঠাৎ মরণ নিয়ে এতো ভাবছি কারণে যে, আমি আমার মরণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি গতকাল গভীর রাতে।
প্রায় দুইমাস ধরে জন্ডিসে ভুগছিলাম। গ্রামের মুরুব্বিদের কথা শুনে প্রথমে কিছুদিন কবিরাজি চিকিৎসা করলাম। পানি পড়া, দই পড়া খেলাম। এমনকি গলায় ঝুলিয়ে দিলাম তাবিজ। না, কিছুতেই কিছু হলো না। সবার এক কথা- জন্ডিসের কোনো চিকিৎসা নেই। জাস্ট কমপ্লিট রেস্ট। লাগাতার ‍শুয়ে থাকা।  নানান প্রকারের শরবত আর ডাবের পানি খাওয়া। 
হলুদ রঙের সবকিছু খাওয়া নিষিদ্ধ।

কিছুদিন হোমিওপ্যাথিও চেষ্টা করে দেখলাম। কোনো উন্নতির লেশমাত্র নেই। যে যা বললো তাই করলাম। এমনকি একজন কবিরাজের কথামতো পুকুরে টানা দশদিন ডুব দিলাম খুব ভোরে। পাকা কলার ভেতরে জোনাকী পোকাও ভরে খেলাম তিন রাত্রি। আমার মতো কতো জন্ডিস রোগী এরকম অপচিকিৎসার শিকার হয়ে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে তার হিসেব কেউ জানে না। কোনো গতি না দেখে আবার এলোপ্যাথিক চিকিৎসা শুরু করলাম। 

অবশেষে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেলো- আমাকে আক্রমণ করেছে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস। দেখলাম পেটটা ক্রমাগত ফুলে উঠছে এবং লিভারে প্রচন্ড ব্যথা। শেষমেষ ঢাকা যাই। ঢাকা থেকে মাদ্রাজ। মাদ্রাজ থেকে আবার ঢাকা। ঢাকা থেকে শেষবারের মতো আবার ফিরে আসি গ্রামের বাড়িতে।  ফিরে আসা সুস্থ হয়ে ফিরে আসা নয়।  ফিরে আসা চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়ে মৃত্যুর কাছে ফিরে আসা। নিরুপায় আত্ম সমর্পণ।  ফিরে আসাটা অচেনা, অজানা, অদেখা এক নতুন জগতে ফিরে যাবার জন্য। 

আমি যে মরে যাবো- একথা কেউ আমাকে বুঝতে দিতে চাচ্ছে না। সবাই বলছে মরা গাছে পাতা ধরবার মতো নতুন করে আবার সজীব হয়ে উঠবো আমি।

গতকাল গভীর রাতে অতি সন্তপর্ণে আলমারি থেকে আমার যাবতীয় রিপোর্ট বের করি রিপোর্টে যা দেখি তাতে হাসি পায় আমার। আমার লিভার সিরোসিস হয়েছে।সম্ভাব্য মৃত্যুর তারিখ ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭। 
একথা জানবার পরেই দেখলাম এই জঘন্য পৃথিবীটা বড়ো অপূর্ব লাগছে আমার কাছে।

মরে যাবো বলেই হয়তো নদীর ঘোলা জল, ইঁদুরের উৎপাত, কাকের কুৎসিত কা-কা শব্দ, এমনকি মাছির ভনভন গান- এক আশ্চর্য সুর হয়ে কানে বাজছে। যে জীবনটাকে মনে হতো বঞ্চনার, প্রতারণার, হতাশার, কষ্টের- আজ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জীবনটাকে মনে হচ্ছে মধুময়। ইচ্ছে করে বেঁচে থাকি। বেঁচে থেকে দেখে যাই.........

কী দেখে যাবো?
কীইবা দেখবার বাকি আছে আমার? কম তো দেখলাম না।
কী পেয়েছি জীবনে?
বলবার মতো, মনে রাখবার মতো কিছুই কি পেয়েছি?
কেন জানি আজ জীবন নাট্যের শেষ অঙ্কে এসে কোনো হিসেব মেলাতে পারছি না। দুয়ে দুয়ে চার হলো না আমার জীবনে।

মরণের সাথেই যার বসবাস ছিলো একদা। অথচ, আজ সে মরণ দেখে ভীষণ ভীতু। বাঁচার নেশায় আজ সে দিশেহারা।  
স্মৃতির নদীতে সাঁতরাতে থাকি। চলে যাই ৪৬টি বছর আগে। সেই একাত্তরে। তখন এক টগবগে তরুণ আমি।বয়স আঠারোর বেশি হবে না। অনেক কিছু বুঝি। আবার অনেক কিছু বুঝিও না। তবে এতোটুকু খুব ভালো করেই বুঝতাম-
ওরা আমার মায়ের ভাষা কাইড়া নিতে চায়।
তাই, একটি ফুলকে বাঁচাবার জন্যে, একটি নতুন কবিতা লেখার জন্যে- নাম না জানা হাজারো যুবকের মতো আমি আর বিপ্লব যুদ্ধে যাই। 
কী ভয়ংকর দিনই না ছিলো!

দাড়িয়াপুর পাহাড় সীমান্তে যুদ্ধ চলছিলো। সম্মুখ সমর। কান ফাটানো গুলির শব্দ। ভয়ার্ত আর্তনাদ। রক্তের হোলিখেলা। হাহাকার। চিৎকার। আমরা তখন অকুতোভয় সৈনিক। যুদ্ধ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পিছু হটে গেছে হায়েনার দল। আমরা ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক সেই সময় দেখলাম- বিপ্লব একটা শব্দ করলো- আহ!
তারপর দেখলাম- ওর ঘাড়ের পেছনে গোল একটা গর্ত।
লুটিয়ে পড়লো বিপ্লব।
মুছে গেলো একটি নাম।
কতো সহজ ছিলো মৃত্যু। 
সেইসব দিনে। 

তারপর অনেক ভেবেছি- ঠিক ওইরকম আরেকটা গুলি বুকে লেগে যেতে পারতো আমার। আমিও মারা যেতে পারতাম বিপ্লবের মতো।
মারা গেলে হয়তো ভালোই হতো। এক অন্তহীন আশা নিয়ে, স্বপ্ন নিয়ে মরতে পারতাম আমি। অথচ, বিপ্লবের চেয়ে ৪৬টি বছর বেশি বেঁচে থেকে, ৪৬টি শীত, বসন্ত, বর্ষা বেশি দেখে কী লাভ হলো আমার?
আশা ফুরালো।
স্বপ্ন হারালো।
জীবনটা আবদ্ধ আজ নিরাশার বলয়ে।

স্বাধীনতার ৪৬টি বছর পরে এসে মনে হচ্ছে এই দেশটা চাইনি আমি। এই দেশের জন্যে সেদিন যুদ্ধে যাইনি আমি। আমরা। স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় আজ আমি মুহ্যমান। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা আজ বড়ো কোনঠাসা। মুক্তিযোদ্ধা শব্দটা চলে গেছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে।

আমাদের গ্রামের খয়ের মুন্সি ছিলো নামকরা রাজাকার যুদ্ধের সময় অসংখ্য হিন্দু যুবতী মেয়েকে তুলে দিয়েছিলো পাকিস্তানি হায়েনাদের হাতে। এক গাল দাড়ি আর তসবি হাতে বলেছিলো, "ওরা হচ্ছে গনীমতের মাল। যুদ্ধের সময় সবই জায়েজ।"

এই বিশিষ্ট রাজাকার আজ 'খয়ের মুন্সি' থেকে হয়েছে 'বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা খয়ের উদ্দীন'
বীর মুক্তিযোদ্ধা খয়ের উদ্দীন কিছুদিন আগে গ্রামের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে।
ভাবা যায়?

একদিন আমার কাছে এসে বললো, কী খবর ভাই? ভালো আছেন?
আমি বললাম, হুম।
খয়ের রাজাকার একটা কুৎসিত হাসি দিয়ে বলতে থাকে- মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হচ্ছে। মাসে মাসে ভাতা দিবে। নামটা তালিকায় ওঠালাম। কমান্ডার ফজলুল হককে সাত হাজার টাকা দিতে হলো। দশ হাজার টাকা চাইছিলো। অনুরোধ করাতে তিন হাজার টাকা কম নিলো। আপনার নাম তো তালিকায় দেখলাম না। তাড়াতাড়ি নাম ওঠান। শুনলাম ভাতা-টাতা পাওয়া যাবে। চাকরিতে কোটাও নাকি দিবে।

এক অন্তহীন ঘৃণায় মুখটা বিকৃ হয়ে গেলো আমার। 
এই জন্যে সেদিন যুদ্ধে গিয়েছিলাম?
এই জন্যে?
এইসব রাজাকারের বাচ্চাদের মুক্তিযোদ্ধা কোটা সুবিধা দেবার জন্যে?
এইসব দেখবার জন্যে বেঁচে আছি এতোটা কাল?
এই মূল্য পেলো আমার বন্ধু বিপ্লবের তরতাজা একটা প্রাণ?   

 যে দেশের একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ঘুষ খেয়ে চিহ্নিত খয়ের রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানাতে পারে, সে দেশে আর কারো কাছে নীতি শব্দটাকে আশা করা বোধ হয় ঠিক না। ঘৃণার অনলে পুড়ে যাওয়া এই আমি- তাই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লেখাতে যাই না। 
কোনো ভাতা-টাতা পাবার আশায় তো সেদিন যুদ্ধ করিনি। যুদ্ধ করিনি কোনো কোটা খোটার জন্যেও। 

খয়ের রাজাকার মুক্তিযোদ্ধার হাসি হাসে। 
আর আমি মুক্তিযোদ্ধা থেকে হয়ে যাই একজন সাধারণ নাগরিক। 
আর আমার বন্ধু বিপ্লব হারিয়ে যায় আরো দূরে..........

এইতো কদিন আগে খয়ের রাজাকারের সাথে দেখা। তখনো আমার জন্ডিস হয়নি। রাজাকারটা আমাকে বললো, ‍"আপনাকে বললাম মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটটা নিতে। নিলেন না। এখন বুঝেন মজা! আপনার ছেলে রাশেদের এবারো বিসিএসটা হলো না। অথচ, আমার ছেলে কামাল এই বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রশাসন ক্যাডার পেয়ে গেলো।"

আমার ছেলে রাশেদ ভীষণ মেধাবী। কিন্তু ইদানীং সে ভীষণ হতাশাগ্রস্ত। পরপর তিনবার বিসিএসে ভাইভা দিয়েও কোনো ক্যাডার পেলো না সে। একদিন বাসায় ফিরে রাগ করে আমাকে বললো, "আমি আর বিসিএস টিসিএস দিতে পারবো না। সব চলে গেছে কোটা আর খোটার দখলে। পরে ওর লেখা একটা কবিতা আমাকে পড়ে শোনালো- 

এই দ্যাশ
এক্কেবারে শ্যাষ। 
মেধাবীরা ডুবছে কাদায়
চাকরি হচ্ছে কোটায় আর খোটায়। 
চাকরির বাজার আজ মামা আর চাচার দখলে
আসলের জায়গা নিছে নকলে। 
পরীক্ষা দিলেই এখন পাশ
অনেক আগেই হয় প্রশ্নপত্র ফাঁস। 
রাজাকাররা কার চালায়
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা শুধু গাল হাতায়। 
যাচ্ছে বাঁশ আজ দেশের পাছায়
তবুও বাঙালি বেঁচে থাকে মিথ্যে আশায়..."

কবিতটা শুনে খুব কান্না পেলো আমার। দরজা বন্ধ করে কতোক্ষণ চুপচাপ বসে থাকি। কী এক অন্তহীন ঘৃণা, বিতৃষ্ণা, হতাশা নিয়ে আমার ছেলেটা দিন কাটাচ্ছে। কবিতার ভাষা অনেকের কাছেই নোংরা মনে হতে পারে। কিন্তু এই বর্তমান পরিস্থিতিই ওকে বাধ্য করেছে এসব লিখতে। আমি একজন বাবা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। পরাজিত যোদ্ধা। লজ্জায় ওর সামনে ইদানীং দাঁড়াতেই পারি না। অপার সম্ভাবনাময় একটা ছেলে পানি না পাওয়া গাছের চারার মতো শুকিয়ে যাচ্ছে। মারা যাচ্ছে। একথা ভাবতে ভালোলাগে কোনো বাবার? এই তো সেদিন ওর মা আমাকে বললো, "জানো- রাশেদ তো চাকরির ধান্দা একেবারে ছেড়ে দিয়েছে। ছেড়ে দিয়েছে সব ধরণের জব স্টাডিও।" 

সেদিন ওর ডায়েরিটা হাতে নিই আমি। দেখি তাতে কোনো আশাবাদের কথা লেখা নেই। লেখা আছে হতাশার কথা। চরম ঘৃণার কথা। একটা পাতায় লেখা রয়েছে-
"ইদানিং ইচ্ছে করে বিসিএস ক্যাডার নই, হয়ে যাই সন্ত্রাসী ক্যাডার। কারণ, সন্ত্রাসীরাই সব ক্যাডারের বাপ। ইচ্ছে করে খুন, লুণ্ঠন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কিডন্যাপ ইত্যাদিকে নিই ক্যারিয়ার হিসেবে। সাফল্যের আকাশে ওঠার সিঁড়ি আজ নীতি নয়। দুর্নীতি। যারা দুর্নীতিবাজ, চোর, বদমাশ- সম্মান আজ তাদেরই বেশি। তাই মাঝে মাঝে মন চায়- কলমটা হাত থেকে ফেলে দিই। হাতে তুলে নিই অস্ত্র। নষ্ট হলে ইদানীং কেষ্ট মিলে। কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে না আর।"   

পড়ি আর দেখি আমার মনটা সুতোর মতো ছিড়ে যাচ্ছে। 
শত টুকরো হয়ে যাওয়া মন নিয়ে ভালো কিছু ভাবার, ভালো কোনো স্বপ্ন দেখার শক্তি হারিয়ে ফেলি আমি। আজ এই নিষ্ঠুর বর্তমানের সামনে দাঁড়িয়ে সেই ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ বড়ো বেশি অকারণ মনে হয়। প্রশ্ন জাগে, এভাবে ত্রিশ লক্ষ লোকের শহীদ হওয়া এবং দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর কোনো মানে ছিলো কি? 

আজও মন্দির ভাঙে। 
পতাকাটা আজও খাবলে খায় সেই পুরনো শকুন। 
গুড়িয়ে দেয় শহিদমিনার। 
আজো সুধাংশুরা চলে যায় এদেশ ছেড়ে। 
সিঁথির সিঁদুর মুছে যায় হরিদাসিদের... 

রাশেদের ডায়েরীর পাতা উলটাতে থাকি। 
আর দেখি অন্তহীন ক্ষোভ ঝরে পড়েছে প্রতিটা পাতায় পাতায়। 
এক জায়গায় লেখা-

"রাজাকাররা আজ ফুলে কলাগাছ,
খায় ওরা রুই কাতলা মাছ,
হরতালে অবরোধে ওরা কাটে গাছ
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে 
কোটায় নিচ্ছে জব 
ভাতা-টাতা সব।  

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পেট ঠেকেছে পিঠের সাথে
জোটে না নুন তাঁদের পান্তা ভাতে। 
ইচ্ছে করে তাই-
আগুন ধরাই
পুড়াই, সব পুড়াই... 

তারপর খাই গুলি
উড়ে যায় যাক না আমার মাথার খুলি। 
হয়ে যাই লাশ
আমার লাশ হোক এক নয়া ইতিহাস...

আমার লাশের মূল্যে দূর হোক 
যত কোটা-খোটা বৈষম্য 
সুযোগের সমতাই হোক নতুন দেশের ধর্ম..."  

আবোল তাবোল ছন্দে লেখা কবিতাগুলোই আমার কাছে পায় এক অনন্য সাহিত্যের মর্যাদা। এভাবে একটা উদীয়মান সূর্য অন্ধকার মেঘের অতলে হারিয়ে যাচ্ছে দেখে মনটা কেমন জানি ফাঁকা হয়ে আসে। 

যে ছেলেটা এখন বিসিএস ক্যাডার হয়ে নতুন ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখার কথা, সেই ছেলেটা এখন কী সব কবিতা লিখছে? ওর মতো বয়সী একটা ছেলে লিখবে প্রেমের কবিতা। ওর কাছে মনে হবে আকাশটা গাঢ় নীল। ঘাস আর গাছগুলো ওর কাছে মনে হবে গাঢ় সবুজ। পাখিদের মনে হবে একটু বেশিই নীড়মুখী। অথচ, এক নীড়হারা পাখির মতো ফালতু একটা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে রাশেদ। 
একটা স্বপ্নহীন জগতে ওর সারাক্ষণ বসবাস। 
আহ! মাথাটা ধরে আসে আমার। 

কয়েকটা দিন পরেই মরে যাবো আমি। জানি না- ২০১৮ সাল দেখে যেতে পারবো কিনা। কীইবা হবে নতুন একটা সাল দেখে?
যেখানে গত ৪৬টি বছরেও আমাদের পেটের মুক্তি মেলেনি, মেলেনি মনের মুক্তিও, সেখানে আগামী দিনে কী যে মিলবে তা সহজেই অনুমেয়। 

পুরো পৃথিবীটা কেমন জানি ধূসর মনে হয়। মনে হয়, চারপাশ নিকষ কালো। গভীর অন্ধকার। সব কিছু মনে হয় অর্থহীন। 
অর্থহীন মনে হয়, এতোটা বছর বেঁচে থাকা। আবার মরে যাওয়াও। 

গভীর মর্মবেদনা নিয়ে বাইরে বের হই... 
দেখি উপরে বিশাল আকাশ। গাঢ় নীল। দূরে একটা পাখি উড়ে যাচ্ছে। বাড়ির পাশেই একটা নদী। তাতে ঘোলা জল। 
কেন জানি জীবনের শেষ কিনারে দাঁড়িয়ে এই নদীর ঘোলা জল, উপরের গাঢ় নীলাকাশ, পাখির কিচিরমিচির- সবকিছুর প্রতিই সুতীব্র টান অনুভব করছি। বাঁচতে ইচ্ছে করছে পাগলের মতো।

"একটা গোলাপফুল কীভাবে ফোটে? আবার সেই ফুটন্ত গোলাপ  কীভাবে ঝরে যায়?"-এই দুঃসহ দৃশ্য দেখার জন্য অন্তত বেঁচে থাকতে চাই না।  

হতাশার মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে সীমানার ওপারে যাবার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকি..............

লেখার তারিখ: ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭

লেখা: ওয়াদুদ খান